1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সংসদে এমএ মান্নান: এবারের বাজেট দেশে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১৮, ২.০৬ এএম
  • ৩৩৮ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেক্স::
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বুধবার মহান জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি হাওর জেলা সুনামগঞ্জের কল্যাণে কথা বলেন এবং মধ্যনগর থানাকে উপজেলা ঘোষণার দাবি জানান। এছাড়া ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেন। সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ পর্যন্ত সারা বছর ব্যবহার উপযোগী সড়কপথ নির্মাণের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি গভীর হাওরের জয়শ্রী নামক স্থানে ৭/৮ কি.মি. ফ্লাইওভার করলে ওই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে সংসদকে জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। পাশাপাশি তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির মহান সংগ্রামে যারা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরকেও পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৯ সনে শুরু হওয়া নবম সংসদে ও পরবর্তীতে ২০১৪ সনে গঠিত দশম সংসদে, লাগাতার দশ বার আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়, অভিজ্ঞ মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা দশম বাজেটের উপর আলোচনার প্রারম্ভেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় অর্থমন্ত্রী উভয়কে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী উভয়ের সঙ্গে সরাসরি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কাজ করে আমি যা শিখেছি এবং বাজেট গঠন প্রক্রিয়ায় সামান্য যেটুকু অবদান রাখতে পেরেছি, তার জন্য পরম গৌরব বোধ করছি। তাদের উভয়ের প্রতি জানাই ধন্যবাদ।
এমএ মান্নান বলেন, এই বাজেট, আমি মনে করি, আমাদের জন্য এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করবে। বাজেট প্রক্রিয়ায় বিগত দশ বছরের নিরন্তর পরিশ্রম ও প্রজ্ঞার চূড়ান্ত ফসল এই বাজেট, দারিদ্র দূরীকরণ, অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, নিরক্ষরতা অপসারণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো উচ্চ ও শক্ত এক অবস্থানে নিয়ে যাবে। টানা দশ বছর সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় প্রায় ২০০০ ডলারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া ও মুদ্রাস্ফীতি প্রমিত মাত্রায় ধরে রেখে সরকার সার্বিক জাতীয় উন্নয়ন অভিযাত্রাকে এক অতি উচ্চ গতিশীল মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ফলে জাতিসংঘ আজ বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান দিয়েছে। এই বাজেটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ জাতীয় সংসদ সদস্যগণ ইতোমধ্যে করেছেন এবং আরো করবেন। তাঁরা তাদের সুচিন্তিত ও বস্তুনিষ্ঠ মতামত তুলে ধরেছেন, যা সরকার, আমার বিশ্বাস, যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের লক্ষ্যে এটি পরিমার্জন করে এই মহান সংসদের সদয় সম্মতি অর্জনে সক্ষম হবে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ২০১৮-১৯ বাজেটের কাঠামো ইতোমধ্যে সকলের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমি এর সংখ্যা বিশ্লেষণে যাব না। আমি এ বাজেটের বিশেষ কয়েকটি দিকের প্রতি এই মহান সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো এবং কিছু বিষয়ে আমার নিজের মতামত তুলে ধরবো। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য আমার ধারণায় বাংলাদেশের জনগণের দারিদ্র্য উপশম। তিনি এক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছেন, যা বাংলাদেশ ও বিশ্বে সর্বত্র স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২০০৯ এ প্রায় ৪৪ শতাংশ দারিদ্র হার নিয়ে শুরু করে তাঁর সরকার এখন দারিদ্রের মাত্রা ২২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এই বাজেট দারিদ্রের এই নিম্নমুখী হার আরো নামিয়ে আনতে পারবে বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। সর্বনিম্ন দশ শতাংশ নাগরিকের মাথাপিছু আয় সম্মানজনক হারে বৃদ্ধি পেলে সামাজিক বৈষম্য সম্পূর্ণ দূর না হলেও এর তীব্রতা অনেকাংশে কমে আসবে বলে আমি আশা করি। গ্রামীণ নির্মাণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন এবং সুবিশাল একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সর্বনিম্ন আয়ের মানুয়ের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করে তাদেরকে উৎপাদনের প্রবাহে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে এই বাজেট।
বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের কথা তুলে ধরে এমএ মান্নান এমপি বলেন, বিদ্যুতায়নে আমরা বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছি। শুরুতে ২০০৯ সালে যেখানে মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট নড়বড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল; সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে আজ আমরা ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি এবং দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছি। ২০১৯ সালের মধ্যেই আমরা শতভাগ বিদ্যুতের প্রসারতা অর্জন করতে পারব। সে প্রেক্ষিতে এখন আমাদের প্রধান কাজ হবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরো সুসংহত করা এবং একটি নির্ভরযোগ্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এ প্রসঙ্গে আমি আরো বলতে চাই বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনায় কোন অবস্থাতেই গ্রাম/শহরের মধ্যে কোন ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখানো যাবে না। দেশের সকল নাগরিকের জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা একই মানের হবে আমি এরূপ আশা করি। আমি আরো বলতে চাই আমাদেরকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঘনিষ্ঠ নজর দিতে হবে। সারা বিশ্ব এখন সেদিকে যাচ্ছে। প-িতেরা বলেন শক্তি ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের দিন বাষ্প ও কয়লার দিনের মত অতি দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।
প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অতিব গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ব্যবস্থাকে আরো যুগোপযোগী করার জন্য বর্তমানে অনেক প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি। ঢাকা চট্টগ্রাম ডাবল লাইন নির্মাণ শেষ করার পর আখাউড়া-সিলেট ও অন্যান্য রেলপথ সমূহকে দ্রুত ডুয়েল গেজএ রূপান্তর করতে হবে। পূর্বের বিএনপি সরকার সচেতনভাবে দরিদ্র বান্ধব এই ঐতিহ্যবাহী যোগাযোগ মাধ্যমকে অবহেলা করেছে। রেলের প্রতি বিএনপি সরকার যে অন্যায় অবহেলা দেখিয়েছিল তা শুধরিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী এ প্রযুক্তিকে আরো টেকসই করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সড়কপথ সমূহকে আরো প্রশস্ত ও সোজা করার কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এ সম্পর্কে একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হলে সড়কপথে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি। রেল, পানি, আকাশ ও সড়ক যোগাযোগ গ্রীডসমূহকে সংযুক্ত করে একটি জাতীয় মহাযোগাযোগ গ্রীড গড়ে তোলা সম্ভব।
শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্যের নানাদিক তুলে ধরে এমএ মান্নান বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। সাক্ষরতার হার ৭০ ছাড়িয়ে গেছে ফলে; কোন কোন ক্ষেত্রে দ্রুততার কারণে সাময়িক সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। অতএব আমি প্রস্তাব করবো এখন একটু দাঁড়িয়ে সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। এছাড়া আমি মনে করি টেকনিক্যাল শিক্ষাও শ্রম বাজারের চাহিদা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাকে আরো গুরুত্ব দিয়ে আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে। অতিতের ঔপনিবেশিক বাবু-কেরানী তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে একুশ শতকের উপযোগী এক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমি প্রস্তাব করছি, জেএসসি এবং এইচএসসিকে পাবলিক পরীক্ষা হিসাবে স্থায়ী স্বীকৃতি দিয়ে পিএসসি ও এসএসসিকে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। আমি মনে করি শিক্ষা প্রশাসনে আরো অর্থবহ বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকাকেন্দ্রিক অধিদপ্তর সমূহকে জেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। বিস্তীর্ণ গ্রাম অঞ্চলের সম্মানিত শিক্ষকগণ দিনের পর দিন ঢাকায় অধিদপ্তরসমূহে পীড়াজনকভাবে ঘোরাফেরা করেন। এটা চলতে দেয়া যায় না।
এমএ মান্নান বলেন, কৃষিক্ষেত্রে এই সরকার বিরাট প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিদ্যমান সার, বীজ ও সেচ বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত টেকসই ও কৃষকবান্ধব হিসাবে সর্বত্র স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে আমরা খাদ্যে স্থায়ী স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।
তিনি সংসদে কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। এমএ মান্নান বলেন, কৃষিতে চলমান ভর্তুকি ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে হবে। আমি আরো মনে করি ইতোমধ্যে গড়ে উঠা লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষিকে, করের আওতায় আনার কথা বিবেচনা করার সময় এখন এসেছে। কৃষিতে লক্ষণীয় যান্ত্রিকীকরণ চলে এসেছে; যার ইতিবাচক অভিঘাত একর প্রতি উচ্চফলনে পরিস্ফূট হয়ে উঠেছে। এই প্রবণতাকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে এক্ষেত্রে বর্ধিত পরিমাণে নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্যখাত বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্নাতক ডাক্তার তৈরির পাশাপাশি অধিক সংখ্যায় প্যারামেডিক, নার্সিং ও মেডিক্যাল টেকনলজিস্ট তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মেডিক্যাল পেশার সকল স্তরের প্রশিক্ষিত জনবল দেশে বিদেশে প্রচুর সংখ্যায় কাজ পাবেন। লক্ষণীয় যে, ইতোমধ্যে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমাদের দেশে বেশ এগিয়ে গেছে। দ্রুত ক্রমবর্ধমান বেসরকারি এই খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি সার্বজনীন ও সুসংগঠিত জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ সুলভ ও ন্যায়সঙ্গত একটি স্বাস্থ্যসেবা সহজে হাতের কাছে পেতে পারেন। বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকের চমৎকার সেবার কথা এখানে আমি স্মরণ করছি। এই ক্লিনিকগুলো আরো সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা জানি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাথায় এটি একটি সোনালী পালক।
এমএ মান্নান আরো বলেন, আমি এখন আমাদের প্রবাসী ওয়েজ আর্নার ভাই বোনদের কল্যাণের লক্ষ্যে দুয়েকটি কথা বলতে চাই। আমাদের অর্থনীতিতে তাদের সিংহভাগ অবদান এখন সর্বজন বিদিত। এ প্রেক্ষিতে আমি তাদের জন্য বিমান ভ্রমণে, বিমান বন্দরে, দেশের সকল সরকারি অফিস ও বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোতে সার্বক্ষণিক সেবা সুযোগসমূহ উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব করছি। তাদের প্রেরিত অর্থ যাতে তারা লাভজনকভাবে ও নিরাপদে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পে সরকারের গ্যারান্টিসহ খাটাতে পারেন, সে ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। যে সব দেশে তারা এখন উদয়াস্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা রোজগার করছেন, সেসব দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের জন্য সম্মানজনক ও সকল প্রকার মানবিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর বর্তমান ব্যবস্থা পুরোপুরি খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের জন্য সভ্য ও গ্রহণযোগ্য মানবিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হলে তাদেরকে বিদেশে প্রেরণ করার বিষয়ে আমি সবিনয়ে দ্বিমত প্রকাশ করছি।
প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বে পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি জাপান ও কানাডায় ২টি জি-৭ সম্মেলনে সরাসরি দাওয়াত পেয়ে এবং উভয় অনুষ্ঠানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এজন্য তাকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। পূর্ব দিগন্তে ভারত ছাড়া আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করেছে এবং তাদেরকে যে নিষ্ঠুর পরিবেশে জাতিগত শুদ্ধি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে, সে ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য্য ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সারা বিশ্বের সকল মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আনান কমিশন ও আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পেশকৃত প্রস্তাবে বিধৃত সুনির্দিষ্ট রক্ষা কবচের মাধ্যমে এই বারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের সকল নাগরিক অধিকার ভোগের নিশ্চয়তাসহ, মিয়ানমারে তাদরে ভিটেমাটিতে ফেরত পাঠাতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমাদের বর্তমান বাস্তবসম্মত ও সফল পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি আরো জোরদার করার প্রস্তাব আমি রাখছি। আমাদের অন্য নিকটতম প্রতিবেশী দেশসমূহ ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশ চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কোরিয়ার সঙ্গে বর্তমান উষ্ণ সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার পক্ষে আমি প্রস্তাব রাখছি।
তিনি আরো বলেন, আরব বিশ্বে এখন যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, সে সম্পর্কে সচেতন থেকে, এ অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, ঘটনার দ্রুততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুনর্গঠিত করতে হবে। আমার ধারণা আরববিশ্বে আরো চমকপ্রদ পরিবর্তন অচিরেই আসতে পারে। আমরা সম্ভাব্য এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপখাইয়ে আমাদের দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত করে আরবদের সঙ্গে সম্মানজনক নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবো বলে আশা করি। নর্ডিক দেশগুলো যথা নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও ডেনমার্কের সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমাদের আরো সচেষ্ট হতে হবে। আমার মতে ইউরোপীয় সভ্যতার সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলীসমূহ এ সকল দেশের সরকার ও সমাজে এখনও দৃশ্যমান পর্যায়ে বিরাজ করছে। নর্ডিক দেশসমূহ গণতন্ত্র ও কল্যাণ অর্থনীতির এক চমৎকার মডেল হিসাবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। আমরা এদের সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধ্যমে উপকৃত হবো বলে আমি মনে করি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো গতিশীল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাসটিন ট্রুডোর মধ্যে যে পারস্পরিক উচ্চ-মূল্যবোধ সম্পন্ন যোগাযোগ গড়ে উঠেছে তা আমাদের মধ্যে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দানকারী বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে আরো ঘনিষ্ঠ করার পক্ষে প্রস্তাব করছি। রূপপুর পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপনে তাদের সহায়তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।
প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি তাঁর বক্তব্যে হাওর এলাকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, বিগত বছরের ধ্বংসাত্মক বন্যায় আমাদের একমাত্র ফসল বোরো হারিয়ে যাওয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় তাঁর বক্তব্যে হাওরবাসীদের অভয় দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর সরকার পরবর্তী বৈশাখ পর্যন্ত যাতে খাদ্যাভাবে কোন মানুষ হাওর এলাকায় কষ্ট না পায় তার ব্যবস্থা করবেন। তিনি কথা রেখেছেন। সারা বছর নানা ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি হাওর এলাকার মানুষকে বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে প্রচুর খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছেন এবং অতিদরিদ্রের জন্য উদারভাবে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছেন। তিনি কাউকে খাদ্যাভাবে কষ্ট পেতে দেননি। এই সুবাদে আমি ত্রাণ, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিশ্রমের কথা এখানে স্মরণ করছি এবং তাদেরকে হাওর অঞ্চলে তাদের সাহসী কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এমএ মান্নান এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হয়ে সুনামগঞ্জে ইতোমধ্যে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছেন, যার ডিপিপি তৈরির কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চলছে। আমি তাকে সবিনয়ে অনুরোধ করবো আমাদের পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য যেন তার প্রতিশ্রুত একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করার নির্দেশ তিনি অচিরেই দেন। আমি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরীকমিশন ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয়ের সুদৃষ্টি আশা করছি।
তিনি বলেন, ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য হাওর এলাকার মানুষ যুগযুগ ধরে স্বপ্ন দেখে আসছে। আমি আশা করি বর্তমান সরকার এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করবেন। সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ পর্যন্ত সারা বছর ব্যবহার উপযোগী সড়কপথ নির্মাণের কাজ এখন চলছে। গভীর হাওরের জয়শ্রী নামক জায়গায় ৭/৮ কি.মি. ফ্লাইওভার নির্মাণ করে স্বপ্নের এই প্রকল্প এখনই দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ কাজ আরো ত্বরান্বিত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানী ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ নেত্রকোণা সুনামগঞ্জ সিলেট হয়ে চক্রাকার পথে ঢাকায় ফিরে আসা যাবে, যা বিশাল এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আমি মনে করি। আমি সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানাকে যথাশীঘ্র সম্ভব উপজেলায় রূপান্তরের পক্ষে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এমএ মান্নান আরো বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে জাতীয় এই ক্রান্তিলগ্নে, একটি ইতিবাচক দায়িত্ব পালন করবেন। এটা পরিষ্কার যে স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা উন্নয়নের চাকাকে আরো দ্রুত ও ক্ষিপ্র করবে। আমাদের দেশ প্রেমিক জনগণ এখন স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা চান বলে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। দেশের সকল মানুষের সাথে হাওর অঞ্চলের মানুষ ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তে নিজেদের সম্পৃক্ত করবেন। আমি একজন সাধারণ হাওর সন্তান হিসাবে এরূপ আশা অবশ্যই করতে পারি।
তিনি বলেন, টানা এক হাজার বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের নিপীড়ন, নিষ্পেশন ও সম্পদ লুণ্ঠন প্রক্রিয়ার শিকার গাঙ্গেয় জলাভূমি বেষ্টিত আমাদের সকলের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশ। আমাদের দীর্ঘ ইতিহাসে এই প্রথম ১৯৭১ এর মহান মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চিন্তা, চেতনা ও নেতৃত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই দেশ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের জন্য সামনে উজ্জ্বল এক নতুন দিগন্ত অপেক্ষা করছে, যে দিগন্তে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বাঙালিরা সাহসের সঙ্গে ও সগৌরবে প্রবেশ করবো ও চিরস্থায়ী আসনে গড়ে তুলব। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমরা সবাই একত্রে পরিশ্রম করবো এটিই আমার বিনীত প্রত্যাশা।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!