স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ জামালগঞ্জে এক সুদখোরের সুদের টাকা পরিশোধের চাপ সইতে না পেরে থানার ওসি বরাবর একটি চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করেছেন কানু সরকার (৪৫) নামের এক থাই ব্যবসায়ী। কানু সরকার দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউপির হাসিমপুর গ্রামের মৃত অমরচাঁদ সরকারের পুত্র। সোমবার জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের নতুনপাড়া এলাকায় ভাড়াটে বাসায় তিনি গলায় ফাস দিয়ে আতœহত্যা করেন। এসময় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান শশুর বাড়িতে ছিল। মঙ্গলবার এ ঘটনায় কানু সরকারের স্ত্রী প্রতীমা সরকার জামালগঞ্জের তেলিয়া গ্রামের মাসুক মিয়া ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর পালিয়ে গেছেন মাসুক ও তার স্ত্রী।
মামলার বিবরণ ও নিহত কানু সরকারের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মাসুক মিয়া ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম পেশাদার সুদখোর। বছর খানেক আগে কানু সরকার তেলিয়া গ্রামের মাসুক মিয়ার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা সুদে এনে ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। সোমবার আরো সুদের টাকা দেবার জন্য আল্টিমেটাম দেন মাসুক ও তার স্ত্রী শিল্পী। সুদের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে বাসার জিনিষপত্র নিয়ে যাবেন এবং মারধর করবেন বলেও হুমকি দেওয়া হয় কানুকে। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বসতঘরে গলায় ফাস দিয়ে আতœহত্যা করেন। আতœহত্যার আগে ভুল বানানে জামালগঞ্জ থানার ওসি বরাবর একটি চিরকুট লিখেন। পুলিশ তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার রাতে সুরতহাল রিপোর্ট করতে গিয়ে চিরকুটটি পায়। চিরকুটে কানু লিখেছেন, ‘বড়াবড় জামালগঞ্জ থানা ওসি স্যার, আমি বিচার চাই, আমি কানু বাবু আপনার কাছে বিচার চাই। ৫৫ হাজার টাকা মাসুকের কাছ থেকে নিয়ে লাভসহ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারপরেও মাসুক আমাকে হুমকি দেয় টাকা না দিলে পিঠিয়ে টাকা আদায় করিবে। এই ভয়ে আমি আমার জীবন ত্যাগ করিলাম। আজ তিনটার ভিতর টাকা না দিলে আমার বাসার মালামাল নিয়ে যাবে। এবিষয়ে নিচতলার স্বপন জানে। আমি বিসার ছাই। ইতি কানু বাবু। এই মরার দায় মাসুক ও তার বউ।’
এভাবে সুদখোর মাসুক ও তার স্ত্রীর মানসিক অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে বসতঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আতœহত্যা করেন কানু সরকার। খবর পেয়ে তার স্ত্রী শশুর বাড়ি থেকে এসে জানতে পারেন তার স্বামীর মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করার সময় একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার জামালগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন কানু সরকারের স্ত্রী প্রতিমা সরকার।
প্রতিমা সরকার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার স্বামী ছোট ব্যবসা করেন। মাসুকের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা সুদে এনে ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিল। তারপরও সে আরো সুদ চায়। সুদ না দিলে মারধর করবে ও ঘরের জিনিষপত্র নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। এই চাপ সইতে না পেরে আমার স্বামী আতœহত্যা করেছে। এখন আমি অকুল সাগরে পড়েছি। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
এদিকে অভিযুক্ত মাসুক মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জামালগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম পুলিশকে উদ্দেশ্য করে চিরকুট লেখার ও সুরতহালকালে চিরকুট প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আত্মহত্যার প্ররোচনায় নিহতের স্ত্রী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জামালগঞ্জ থানায় মামলা নং ১১/তারিখ: ২২/০৭/২০২৫। তিনি বলেন, পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।