হাওর ডেস্ক::
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা থাকা অর্থ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণেরও বেশি বেড়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ—যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮,৮৩৫ কোটি টাকা (প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে)। আগের বছর, ২০২৩ সালে এই অঙ্ক ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ।
এই তথ্য প্রকাশ করেছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের পরিমাণ ২০২২ সালের পর আবার উল্লম্ফন ঘটিয়ে ২০১৫ সালের পর পঞ্চম সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কারণ রয়েছে বলে মনে করার কোনও সুযোগ নেই। ঢাকার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের বড় কোনো বাণিজ্যিক অংশীদার নয়, ফলে ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে এত অর্থ জমা হওয়াকে সাধারণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম বলা যায় না। এটি মূলত ক্যাপিটাল ফ্লাইট বা অর্থ পাচারের ইঙ্গিত দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “৮ হাজার কোটি টাকার মতো বিপুল অর্থ কয়েকদিনেই ধাপে ধাপে পাচার করা সম্ভব, যদি ওপর মহলের মদদ থাকে। রেগুলেটরের (বাংলাদেশ ব্যাংক) অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের লেনদেন সম্ভব না। প্রশ্ন হলো, তারা কীভাবে অনুমোদন দিল?”
এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর নামে সুইস ব্যাংকে জমা এই বিপুল অর্থ ছাড়াও, আমানতকারীদের (ব্যক্তিগত) নামে জমা রয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ফ্রাঁ এবং পুঁজিবাজারভিত্তিক বিনিয়োগ রয়েছে ৮৬ লাখ ১৯ হাজার ফ্রাঁ।
দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনগুলোর মতে, এসব অর্থের বড় অংশই ‘অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত’ এবং বিদেশে ‘অবৈধভাবে পাচার’ করা হয়েছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স, বিদেশে শিক্ষার্থীদের খরচ বা বৈধ ব্যবসায়িক লেনদেন থেকেও কিছু অংশ জমা হয়ে থাকতে পারে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৬ সালে সুইস ব্যাংকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশিদের জমা অর্থ ১০ কোটি ফ্রাঁ ছাড়ায়। এরপর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, ২০০৭ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৬ সালে জমা অর্থের পরিমাণ পৌঁছায় সর্বোচ্চ ৬৬ কোটি ফ্রাঁর ঘরে। ২০২১ সালে তা দাঁড়ায় ৮৭ কোটি ফ্রাঁতে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের পেছনে থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় এবং উৎস অনুসন্ধান করতে পারে। তবে এজন্য সুইস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতা এবং আন্তর্জান্তিক চাপে প্রভাব খাটাতে হবে।
তবে সুইস আইনের গোপনীয়তা নীতির কারণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ না করায় এখনও পুরো চিত্র অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।