1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কোটা আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের পরিবার পেল সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি, আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের সঙ্গে সরকার পতনের আলোচনা হয় ভিপি নুরের! শিক্ষিত প্রজন্মের কাছে আমরা সম্মান চাই: বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তী এমপি এভাবে রাষ্ট্রের ধ্বংস মানতে পারছি না: প্রধানমন্ত্রী আন্দালিব রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে কোটা আন্দোলন সহিংসতায় নিহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেবেন প্রধানমন্ত্রী : কাদের গবেষক দীপংকর মোহান্ত সুনামগঞ্জ পিটিআইয়ে সুপার হয়ে আসায় কবি লেখকদের ফুলেল শুভেচ্ছা সুনামগঞ্জে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শীথিল সিলেটসহ ১১ অঞ্চলে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস

জ্বালানি তর্ক, বহুজাতিক কর্তৃত্ব ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার ।। পাভেল পার্থ

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩, ৬.১৫ পিএম
  • ৫৭ বার পড়া হয়েছে

রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে বহু সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। ‘শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা’, ‘শতভাগ বিদ্যুতায়িত ইউনিয়ন’ কিংবা ‘ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা’। সাইনবোর্ড পেরিয়ে যদি সেইসব এলাকায় বসবাসের সুযোগ ঘটে তবে নিদারুণ ‘লোডশেডিং’ এর অভিজ্ঞতা হয়, কিংবা দেখা মেলে ‘ভিক্ষুকদেরও’। তার মানে কী দেশে বিদ্যুত উন্নয়ন ঘটেনি? ঘটেছে। বিস্ময়করভাবে। এই যে এতো কিছু একটার পর একটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন এর পেছনে রয়েছে দশাসই বিদ্যুতশক্তির অবদান। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল কিংবা শত সহ¯্র কারখানা। বিদ্যুৎ ছাড়া একটিও সম্ভব হতো না। তো এতো বিদ্যুৎশক্তি আমরা কীভাবে পাইলাম? উন্নয়নের এক দশাসই চূড়ায় দাঁড়িয়ে এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রশ্ন কেবল বাংলাদেশের নয়। এই প্রশ্ন আজ বিশে^র। বিদ্যুৎ উপৎপাদনের জন্য আমরা কী ব্যবহার করবো এবং কীভাবে ব্যবহার করবো? কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস কিংবা তেল মানে মাটির তলার জীবাশ্ম জ¦ালানিই কী বিদ্যুৎশক্তির উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবে? পারমানবিক বিদ্যুৎ নিয়েও যথেষ্ট শংকা ও তর্ক আছে। এমনকি তর্ক আছে ভূট্টা নিয়েও। ক্ষুধার্ত দুনিয়া বলছে খাদ্য পুড়িয়ে বায়ো-ডিজেল চাই না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ¦ালানি ব্যবহৃত হয় বলেই বিশে^ কার্বণ নি:সরণ বাড়ছে। আর এ কারণেই পৃথিবী আজ গনগণে এক আগুনের গোলা হয়ে ওঠছে। গ্রাম থেকে নগর আবহাওয়ার উল্টাপাল্টা খেলা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘জলবায়ু পরিবর্তন’। এমন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন কী জীবিকা সব দু:সহ হয়ে পড়ছে। বৈশি^ক উষ্ণতা বাড়তে থাকলে খুব কম উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে, এমনিক নির্দয়ভাবে মৃত্যু ঘটবে মানুষেরও। বিশ^নেতারা এই উষ্ণতা থামাতে এ পর্যন্ত ২৭ বার বিশ^ সম্মেলন করেছেন। কার্বণ দূষণ কমাতে একের পর এক অঙ্গীকার করছেন। বেহায়ার মতো অঙ্গীকার গুলো ভঙ্গও করছেন। পৃথিবীর কাঁপুনি কিন্তু বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা নিশ্চয়ই বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকতে পারি না। বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে সবুজ ভাবনাই সমাধান। তো এই সবুজ ভাবনাটা কী? বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ¦ালানি নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে শূণ্যে নামিয়ে আনা। মাটির তলার তেল, গ্যাস, কয়লা দিয়ে আমরা আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো না। এমনতর অঙ্গীকার ও চর্চা আমাদের সবুজ-শক্তির ভবিষ্যত দেখায়। বাংলাদেশ কী এই সবুজ-শক্তির পথে হাঁটছে? রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প কিংবা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎপ্রকল্প আমাদের সেই বার্তা দেয় না। বিজ্ঞানী-গবেষকেরা বহু প্রমাণ হাজির করছেন, যে, জীবাশ্ম জ¦ালানির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই সভ্যতার মেরুদন্ড অচিরেই ভেঙে পড়বে। কিন্তু এই অশনিসংকেত সামাল দিতে আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু? আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারসমূহ কতোখানি সবুজ-শক্তির সপক্ষে? জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে কয়লা, তেল, গ্যাস কিংবা সবুজ-জ¦ালানি নিয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকবে কী? যদি না থাকে তাহলে জ্বালানিশক্তি বিষয়ে রাজনৈতিক অমনোযোগিতা আমাদের বিপন্ন খাদের কিনারে ঠেলে দিবে। আমাদের সব উন্নয়ন তখন কাপ্তাই বাঁধ, সবুজ-বিপ্লব কিংবা হাওরে সড়ক করার মতো দগদগে যন্ত্রণা হয়ে বিদ্রুপ করবে।
উন্নয়নের মহীসোপানের চূড়া, তলানি বা খাদ যেখানেই আমাদের অবস্থান হোক না কেন; আমরা সবাই বিদ্যুৎ চাই। আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে এই বিদ্যুৎ আমরা কীভাবে পেতে চাই। জীবাশ্ম জ¦ালানি না সবুজ-শক্তি? এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতেই হবে। তরুণ প্রজন্মকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু কেবল সবুজ-শক্তি নির্ভরতাই কী আমাদের গ্রহকে সুরক্ষা করতে পারে? সর্বোপরি পারে না। কারণ কেবল উৎপাদনকে সবুজ হলেই হবে না, লাগাম টানতে হবে আমাদের সর্ববিনাশী ভোগবিলাসীতার। বিদ্যুৎশক্তি অপচয় বন্ধে আমাদের সোচ্চার ও তৎপর হতে হবে। জীবনযাত্রা ও যাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের প্রতিজন নাগরিকের ভূমিকা এক্ষেত্রে জরুরি। তবে গ্রামীণ গরিব নি¤œবর্গের মানুষের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানিশক্তির অপচয় করার কোনো পরিস্থিতি নাই। বিদ্যুতের অপচয় বেশি করে শহরের ধনী মানুষেরা। বিদ্যুৎ অপচয়কে নিয়মিত তদারকি করবার সক্রিয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বিদ্যুৎ অপচয়কারীদের আইন ও বিচার কাঠামোয় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। জীবাশ্ম-জ¦ালানির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই রুগ্ণ পৃথিবীকে বাঁচাতে জলবায়ু সম্মেলনের ২৮তম আসরটি বসতে যাচ্ছে দুবাইতে। কোনো নতুন সিদ্ধান্ত কি নেবে বিশ^ নেতৃবৃন্দ? আগের নেয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে তারা কি সক্রিয় হবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। অথচ নিদারুণভাবে এসব উত্তর প্রায় মীমাংসিত। জ¦ালানিশক্তি নিয়ে মীমাংসিত এসব উত্তর কারা কোন ক্ষমতায় ‘অমীমাংসিত’ করে রাখছে? এসব আলাপ জোরেসোরে পাবলিক পরিসরে হওয়া জরুরি। দুনিয়ার জ¦ালানি ও শক্তি খাত দখল এবং নিয়ন্ত্রণ করে রাখা বহুজাতিক কোম্পানির কর্তৃত্বর সামনে দাঁড়ানো জরুরি। জীবাশ্মবৈচিত্র্যকে ‘জ¦ালানি’ হিসেবে বৈধ করে রাখার নয়াউদারবাদী ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করা জরুরি।
নয়াউদারবাদী ব্যবস্থায় সবকিছুই আজ বহুজাতিক কোম্পানির জিম্মায়। কারগিল, আর্চার ড্যানিয়েলস মিডল্যান্ড, নেসলে, সিসকো কর্পোরেশন, জেবিএস, জর্জ ওয়েসটন, টাইসন ফুডস, বাঞ্জ, পেপসিকো, মনডেলেজ কোম্পানিরা দখল করে রেখেছে পৃথিবীর খাদ্যব্যবস্থা। কৃষি ও খাদ্যউৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করছে মনস্যান্টো, সিনজেনটা, ডুপন্ট, বায়ার, বিএএসএফ। সিপি, গোদরেজ, ভিএইচগ্রুপ, সগুনা, অমৃত, নিউহোপ কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে মুরগির বাজার। ভোক্তার ভঙ্গি কী আত্মবিশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করছে লরেল, ইউনিলিভার কিংবা বডিশপের মতো কোম্পানি। যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করে অস্ত্র কোম্পানি, বিলাসিতা নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানি। সামাজিক শ্রেণি ও বৈষম্য চাঙ্গা রাখে বহুজাতিক কোম্পানি। অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল, শেভরন, নাইকো, এশিয়া এনার্জীর মতো কোম্পানিরা গ্যাস দখলের নামে প্রাণ-প্রকৃতিকে ক্ষতবিক্ষত করে। জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনও নিয়ন্ত্রণ করছে বহুজাতিক কোম্পানি। জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি (জিই) ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি মার্কিন কোম্পানি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, মহাকাশ, নবায়নযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল শিল্প নানাখাতে এই বহুজাতিক কোম্পানি এখন দুনিয়ায় কর্তৃত্ব করছে। জেনারেল ইলেকট্রিকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘জিই ভারনোভা’ কার্বণ নি:সরণ মুক্ত স্থায়িত্বশীল জ¦ালানি খাতের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নির্ভর বিদ্যুৎপ্রকল্পে জড়িত আছে জিই। বলা হচ্ছে এসব প্রকল্পের কারণে ৪৩০ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটবে। এটি বাংলাদেশের বাৎসরিক জাতীয় নির্গমনের প্রায় দ্বিগুণের সমান। এমনকি শাহজীবাজারে গ্যাসনির্ভর ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চীনের ‘জিয়াংসু ইটার্ন কোম্পানি লিমিটেড’ জিইকে নির্বাচন করেছে। এই জিয়াংসু ১৯৯৪ সালে গঠিত হয় এবং সাংহাই স্টক এক্স্রেচেঞ্জে ১৯৯৭ সালে যুক্ত হয়। দুনিয়াকে নাড়িয়ে দেয়া বহুজাতিক কোম্পানিরা যদি জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভর জ্বালানি ও বিদ্যুৎশক্তি খাতের বাণিজ্যকে বাংলাদেশের মতো দেশে প্রতিষ্ঠা করতে নামে তবে সামনে বিপদ ও সংকট বাড়বে। কারণ জীবাশ্ম-জ্বালানি কার্বণ নির্গমণ বাড়াবে এবং ভোগান্তি বাড়াবে। জলবায়ু সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ও অঙ্গীকার চুরমার হয়ে যাবে।
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৭০০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদত হয়। এর বেশীরভাগই প্রায় ৪,৬৯০ গিগাবাইট জীবাশ্ম-জ্বালানি ও পারমানবিক উৎস নির্ভর। জলবিদ্যুৎ থেকে আসে ১০০০ গিগাবাইট এবং নতুন নবায়ানযোগ্য জ্বালানি থেকে আসে ১৩২০ গিগাবাইট (সূত্র: আরইএন ২১, ২০১৮)। ২০০৪ সালে পৃথিবীর ১৫৪টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জার্মানিতে আয়োজিত হয় প্রথম নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক সম্মেলন। কার্বণ নি:সরণ কমাতে এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানি বিষয়ে বৈশ্বিক তৎপরতা শুরু হয়। দেখা গেছে চীন, আমেরিকা, জাপান, জার্মানী, ভারত, কানাডা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রায় ৩৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫,৭১৯ মেগাওয়াট এবং ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬,৭০০ মেগাওয়াট। যদিও বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় প্রায় ১৫০০০ মেগাওয়াট। দেশে ৯৭ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকে, যার ৬০ ভাগ গ্যাস-নির্ভর। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত হয় মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট। দেশে বর্তমানে মোট বিদ্যুতের মাত্র ২.৭২ ভাগ উৎপাদিত হয় নবায়ানযোগ্য উৎস থেকে এবং ১.৮১ ভাগ পাওয়া যায় সৌরবিদ্যুৎ থেকে। ২০১৯ সালের ভেতর বাংলাদেশে পারিবারিকভাবে ৪.১৩ মিলিয়ন সৌরবিদ্যুত সিস্টেম গৃহীত হয় (সূত্র: ইডকল ২০২৩)। দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে এবং পরিবারভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ থেকে প্রায় ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ থেকে প্রায় এক মিলিয়ন বায়োগ্যাস চুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুতুবদিয়ায় স্থাপিত হয়েছে দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চরে স্থাপিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এসব কোনোকিছুই সবুজ-জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট কোনো ব্যবস্থা নয়। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তাকে অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের ভেতর দেশের বিদ্যুৎখাত প্রধানত কয়লানির্ভর হয়ে ওঠবে। এছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমানবিক ও কিছু বিদ্যুৎ আমদানিও ঘটবে। তাহলে নবায়নযোগ্য সবুজ-জ্বালানি খাতের কী হবে? পাশাপাশি বিদ্যুৎ অপচয় এবং চুরির ঘটনাও আছে। উদ্বৃত্ত উৎপাদনের কারণে বছরে প্রায় ৪২৩৮.৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হয়। বর্তমানে শহরের বাসাবাড়ি, কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আইপিএস ব্যবহার করছে এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যায়। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিশক্তির সম ও ন্যায্যবন্টন হচ্ছে না। জ্বালানিখাতকে সবুজ করতে হলে এরকম নানামুখী বহু কিছু নিয়ে আমাদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর জ্বালানিচিন্তাকে পরিবেশ ও জনবান্ধব করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩’ সকলের জন্য উপযোগী করে বিইআরসিকে স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে বহুজাতিকের কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত করে দেশীয় পুঁজির বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

নয়াউদারবাদী ব্যবস্থা ও বহুজাতিক বাহাদুরির বিরুদ্ধে দুনিয়াজুড়ে জনআন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠছে। বিশেষ করে জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষা প্রশ্নে। বিশ্ব জুড়ে দাঁড়ানো বিশ্বায়নবিরোধী জমায়েতগুলো বহুজাতিকের বহুমুখী অপরাধকে প্রশ্ন করছে। কোকাকোলাবিরোধী আন্দোলন কিংবা মনস্যান্টো কোম্পানির বিরুদ্ধে গণপদযাত্রায় সামিল হচ্ছে লাখো কোটি মানুষ। সম্প্রতি আমেরিকার বোস্টনে জেনারেল ইলেকট্রিকের সদরদপ্তরে জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিত্রকর ও জলবায়ুকর্মীরা। আতা মজলিশ ও দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর মতো অনেক বাংলাদেশী চিত্রকরও এই প্রতিবাদে সামিল ছিলেন। জীবাশ্ম-জ্বালানির প্রশ্নহীন বাণিজ্য থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে বিশ্বব্যাপি দীর্ঘতর হচ্ছে সর্বজনের মিছিল। এই মিছিলকে দাবিয়ে রাখবার বাহাদুরি কারোর নাই। দরকার দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা, অবস্থা ও চর্চার পরিবর্তন। দরকার জাতীয় জ্বালানি ও বিদ্যুৎচিন্তার নয়ায়নযোগ্য রূপান্তর। আমরা দৃঢ়ভাবে চাই বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীবৃন্দ সবুজ-জ্বালানি চিন্তাকে তাদের অন্যতম অঙ্গীকার হিসেবে ঘোষণা করবেন।

লেখক ও গবেষক।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!