হাওর ডেস্ক::
ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতির বিধান রেখে তিন বছর আগে কার্যকর হওয়া ‘সরকারি চাকরি আইন ’ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
উচ্চ আদালত মনে করছে, এমন বিধানের মানে হচ্ছে, বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেওয়া। শুধু তাই নয়, এমন বিধান দুর্নীতিতে উৎসাহ জোগাবে।
সরকারি কর্মচারী আইনে থাকা ‘কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি’ নেওয়ার বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের উপর বুধবার শুনানির সময় বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এমন মন্তব্য আসে।
বুধবারই রুলের শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এনিয়ে রায় দেবে আদালত।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারের এক গেজেটে ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হয়।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, “কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।”
নানা মহলের সমালোচনার মধ্যে আইনের এ ধরা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাই কোর্টে আবেদন করে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
প্রাথমিক শুনানির পর একই বছরের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাই কোর্ট। সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) ও ২৬(২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
শুনানিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২(ক) ধারায় এমন বিধান রাখা হয়েছিল। পরে তা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করলে আদালত ওই ধারাটি বাতিল করেছিলেন। যদিও সরকার এখনও তা আইন থেকে বাদ দেয়নি। তখন আদালত একে ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন।”
শুনানিতে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খানও দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা বাতিলের রায়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় আপিল বিভাগের একটি রায় তুলে ধরে বলেন, “আইনটি সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষার জন্য করা হয়েছে। আইনটিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেনি। সব সরকারি কর্মচারীর বেলায় এ বিধান প্রযোজ্য।”
তখন এক বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আইন করার ক্ষেত্রে সরকার কীভাবে বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দেয়! এতে তো দুর্নীতিতে আরও উৎসাহ জোগাবে।”
সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ এর এ সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি সংক্রান্ত ধারা ৪১(১) ও ৩ চ্যালেঞ্জ করে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যান আরেকটি রিট আবেদন করেছিলেন। তার প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর রুল দেয় হাই কোর্ট। এটি হাই কোর্টের আরেক বেঞ্চে বিচারাধীন।
(সৌজন্যে: বিডিনিউজ)