বিশেষ প্রতিনিধি::
পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকারদের শারিরিক ও মানসিক অত্যাচার সয়েছেন। স্বাধীনযুদ্ধে যাওয়ায় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন বারবার। তারপরও যুদ্ধের মাঠ থেকে পিছনা হননি। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করে বিজয়ের বেশে ফিরেছিলেন দেশে। বয়সের ফ্রেমে না থেমে এখনো বীর যোদ্ধারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার রয়েছেন। এবার তাদের তৈরি স্বাধীন দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর, রঙ্গারচর ও মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে শেষ বয়সে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকসেদ আলী, আব্দুল মজিদ ও মনির উদ্দিন। আগামীকাল রবিবার ২৮ নভেম্বর সদরের ৯টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ স্বাধীনতাযুদ্ধে তাদের আতœদান ও বীরত্বের মূল্যায়ণ করবেন বলে প্রত্যাশী তিন বীর যোদ্ধা তাদের স্বজনরা।
জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নে গত নির্বাচনেও ইউনিয়নে মানুষের ভালোবাসায় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকসেদ আলী। একজন সৎ ও স্পষ্টবাদী হিসেবে তিনি বিশেষ পরিচিত। গত ৫ বছর তিনি জনগণের পাশে থেকেই কাজ করছেন। করোনাকালে এই বৃদ্ধ বয়সেও সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে। আওয়ামী লীগ এবারও তাকে নৌকা প্রতীক উপহার দিয়েছে। ভোটের মাঠে আরো ৩ প্রার্থীর সঙ্গে এই বৃদ্ধ বয়সেও সমান প্রচারণা চালিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন ভোটের মাঠ। এবারও তিনি নৌকা নিয়ে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকসেদ আলী বলেন, বেঁচে ফিরব এই আশায় যুদ্ধে যাইনি। রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করতে জাতির জনকের নির্দেশে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে হানাদারমুক্ত করেছি দেশ। এখন শেষ বয়সে সেই দেশ পুনর্গঠনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের জন্য কিছু কাজ করছি। আমার স্বাধীন দেশের মানুষের সেবা করতে চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
রঙ্গারচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধ আব্দুল মজিদ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ের দীর্ঘদিনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সুখ দুখে তিনি সবসময় পাশে থাকেন। সাধারণ মানুষেরও নানাভাবে সহেযাগিতা করছেন। স্বাধীনতার পক্ষের কর্মসূচিতে রাজপথে তিনি তরুণদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এবার তিনি সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নৌকা প্রতীক চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তাকে নৌকা উপহার দেয়। মনোনয়ন পাবার পরই তিনি চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকা। এই ইউনিয়নে আরো ৭ জন প্রার্থী তার সঙ্গে ভোটযুদ্ধে আছেন। বৃদ্ধ বয়সেও তরুণদের মতো তিনি বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে নৌকার পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বলেন, জীবনের পড়ন্ত বেলায় অবস্থান করছি। যাদের জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম সেই দেশের মানুষের জন্য শেষ বয়সে কিছু করতে চাই। আশা করি আগামী ২৮ নভেম্বর নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে মানুষের সেবা করার সুযোগ পাবো। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রেখে যেতে চাই আমরা।
মোল্লাপাড়া ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন আরো ৬ জন প্রার্থীর সঙ্গে ক্লান্তিহীন সরব প্রচারণা চালিয়েছেন। এলাকার শালিস ও সামাজিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি পরিচিত। মানুষ তাকে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানালে তিনি ভোটের মাঠে প্রচারণা শুরু করেন। শেষে আওয়ামী লীগ তাকে নৌকা প্রতীক উপহার দেয়। এখন নৌকার পক্ষে তৈরি করেছেন জনমত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির উদ্দিন বলেন, আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ডাকে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। এখন তার মেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা উপহার দিয়ে মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের উন্নয়নের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আশা করি জনগণ আমাকে নির্বাচিত করে সেই সুযোগ দিবেন।
সুনামগঞ্জ শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সালেহ আহমদ বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের আদর্শ ও প্রেরণার প্রতীক। তারা ধিরে ধিরে মারা যাচ্ছেন। যারা জীবিত আছেন তাদেরকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখানো আমাদের কর্তব্য। তিনি বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তাদেরকে সমর্থন দেওয়া উচিত। আশা করি জনগণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিবেন।
সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার উত্তম কুমার রায় বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচারণায় নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে কাজ করেছেন। তাদের প্রচারণায় কেউ কোন প্রশ্ন তুলেননি।