1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

অতীতে একমাসে তিন প্রলয়ঙ্করি বন্যা দেখেননি হাওরবাসী!

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০, ৮.৫৭ এএম
  • ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
হাওর-বাওরের দেশ সুনামগঞ্জ। ঝড়-বান আর ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখে অভ্যস্ত হাওরবাসী। সাময়িক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করেই টিকে আছেন এই অঞ্চলের মানুষ। কিন্তু পরপর ২০ দিনের ব্যবধানে তিনটি বন্যার কথা স্মরণ করতে পারছেন না হাওরাঞ্চলের প্রবীণরাও। কখনো এমন ধারাবাহিক ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। তবে এবারের তিনটি বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছেন হাওরবাসী। এক বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আরো দুটি বন্যা দুর্ভোগের মুখে ফেলে দিয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উজানীগাও গ্রামের সত্তরোর্ধ দিনমজুর আব্দুল কদ্দুছ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের ৮২ বছরের ওয়াহিদ আলী, ৮০ বছর বয়সী জগাইরগাও গ্রামের তরজুদ আলী, সুনামগঞ্জ শহরের ৯০ বছর বয়সী তেঘরিয়া এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরুল হক তারা কেউ এই দীর্ঘ জীবনে অনেক দুর্যোগ মোকাবেলা করেছেন। তবে ২০ দিনের ব্যবধানে পরপর তিনটি ভয়াবহ বন্যা দেখেননি তাদের একজনও।
এই বন্যায় তিন দফাই আব্দুল কদ্দুছের কাঁচা ঘরটি প্লাবিত হয়েছে। ছেলে বাউল লাল শাহর গানের ঘরও ডুবে গানের যন্ত্রপাতি সব নষ্ট হয়ে গেছে। খুব কষ্টে আছেন তিনি। তার বাশের কাচাঘরটি ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জগাইরগাঁও গ্রামের তরজুদ আলী (৮০) বলেন, আমার বয়সে ইলাখান বইন্যা দেখছিনা। ২০ দিনের ভিতরে তিনটা বইন্যায় মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত অইছে। ঘরবাড়ি আরাইছে। একজন আরেকজনের ঘরো যাইব হেই ব্যবস্থাও নাই।
সোনাপুর গ্রামের ওয়াহিদ আলী (৮২) বলেন, উটাউটি তিন বন্যা দেখি নাই। আমরার ঘরবাড়ি, ক্ষেত নষ্ট করছে। রাস্তাঘাট ভাইঙ্গা নিছে। মাইনসেরে দাড়াইবার সুযোগ দিতেছেনা বন্যা। মানুষ এখন অসহায়। ঘরদোয়ার সব নষ্ট অইয়া গেছে।
এভাবেই এবারের তিন আগ্রাসী বন্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে কথা বলছিলেন প্রবীণরা। তারা স্মৃতি হাতড়ে স্মরণ করতে পারছেন না অল্প দিনের ব্যবধানে তিনটি এমন ভয়ঙ্কর বন্যার কথা। নদী-হাওর ভরাট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপিরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং পরিকল্পনা বহিভর্ূৃতভাবে সড়ক নির্মাণকেও দায়ি বলে মনে করেন তারা।
সুনামগঞ্জে গত ২৬ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথম দফা বন্যা হয়। এতে রাস্তাঘাট, মৎস্যখামারের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। মানুষের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। ধসে পড়ে অনেক গরিব মানুষের কাচা ঘরবাড়ি। এই ক্ষত না শুকাতেই গত ৯ জুলাই দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। এতে আবারও ক্ষতি হয়। বন্যা পুরো জেলায় বিস্তার লাভ করে। এতে লাখো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারও গত ১৯ জুলাই ৩য় দফা বন্যা দেখা দেয়। আবারও ক্ষতির মুখে পড়েন জেলাবাসী। অসহায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার আগেই বন্যা এসে তাদেরকে দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে সুনামগঞ্জের মাথার উপরে চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া জেলায় বিপুল বৃষ্টিপাতও হয়। এতে নদ নদী উপচে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। অনেক হাওরও ভরে যায় নদীর জলে। পরে হাওরের গ্রামগুলোও নিমজ্জিত হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অসহায় মানুষজন।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি প্রফেসর চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, আমার এই জীবনে এমন টানা বন্যা দেখিনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে আবহাওয়া আচরণ পাল্টিয়েছে। এর সঙ্গে হাওরাঞ্চলের নদ নদী, হাওর ভরাট হয়ে যাওয়া এবং ভূপ্রকৃতি বিবেচনা না করে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণের কারণেও বন্যার পানি দ্রুত সরছেনা। জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ি ঢলে আসা বালু-পলিতে ভরাট হচ্ছে হাওরের নদী-নালা খাল-বিল এবং হাওর। ফলে বন্যার পানি ধারন ক্ষমতা কমছে। তবে প্রকৃতি বিবেচনায় অবকাঠামো নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!