1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারকে অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর দাবিতে মতবিনিময় সুনামগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ বন্যার্তদের সহায়তায় সুনামগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির ব্যতিক্রমী ছবি আঁকার কর্মসূচি জগন্নাথপুরে শিক্ষিকা লাঞ্চিত: দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার মরদেহ হস্থান্তর করলো মেঘালয় পুলিশ কাদের সিদ্দিকী বললেন: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

রাজনীতির কবিয়াল সুরঞ্জিত।। পীর হাবিবুর রহমান

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ৩.০১ পিএম
  • ৬৪২ বার পড়া হয়েছে

মন কাঁদছে আমার। বুকের ভিতর ভাঙছে আমার। কত স্মৃতি রয়ে গেলেও অনেক কথাই বলার ছিল। শেষ দেখাটি হলো না আর।

দাদা, তুমি এমন করে হঠাৎ যেন চলে গেলে! আমার এত কান্না আসছে, তোমার প্রতি ভালোবাসার অশ্রু ঝরছে।
তিন দিন আগে সংসদ থেকে অনুজপ্রতিম সহোদর পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ফোন করে আমাকে বলে, ‘দাদা কথা বলবেন। ’ টেলিফোনে দাদাকে বড় ক্লান্ত মনে হচ্ছিল।

কিন্তু দেশের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা, সংবিধান, আইনকানুন ও রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে তার প্রখর দৃষ্টিভঙ্গির কোনো ঘাটতি ছিল না। কুশল বিনিময়ের পর তিনি একটি বিষয় নিয়ে আমাকে লেখার তাগিদ দিয়ে বললেন, তুমি ছাড়া কে লিখবে? তোমার কাছেই পাঠকের এমন বিষয় নিয়ে লেখার প্রত্যাশা। উত্তরে বললাম, ‘দাদা, সব সত্য বলা যায় না; সব সত্যের কাছে যাওয়া যায় না। শুধু উপলব্ধি করা যায়। ’ আপনার শরীর কেমন? আমি আপনাকে দেখতে এসে কথা বলব। সংসদ ছিল তার প্রাণ। সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল ও ভাটি বাংলা ছিল তার রাজনীতির তীর্থস্থান। সেখান থেকেই রাজনীতির পাঠ নিয়েছিলেন তিনি। মানুষের মনকে পড়তে শিখেছিলেন। সেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথাই বলছি

যিনি নিরন্তর সংগ্রাম করে উঠে এসেছিলেন অবিরাম কথা বলে চিরনিন্দ্রা নিয়েছেন। তার মৃত্যুতে সংসদীয় রাজনীতিতে গভীর শূন্যতাই সৃষ্টি করেনি, ভাটির মানুষের বুকই ভেঙে যায়নি; বৃহত্তর সিলেটের জাতীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী শেষ রাজনীতিবিদটিরও বিদায় ঘটেছে।
সেদিন রাতে দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে মিসবাহ বলেছিল, শরীরটা খুব খারাপ। হাত কাঁপছিল স্যুপ খেতে খেতে। লিফটে নামতে গিয়ে টুলের ওপর বসেছিলেন। ষাটের ছাত্র রাজনীতি দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সুমহান মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে জাতীয় সংসদে এসে তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে ধ্রুবতারার মতো জ্বলে উঠেছিলেন। আজকের সংসদের দিকে তাকালে বলা যায়, একজন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নয়, সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস থেকে শেষ নক্ষত্রটির বিদায় ঘটল। রবিবার ভোররাত ৪টা ১০ মিনিটে তিনি পরলোকগমন করেছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তখনই কেউ কেউ ছড়িয়ে দেন তিনি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি এক ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সংসদ ও রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে বিচরণ করে আসছিলেন। তিনি উন্নত চিকিৎসা নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর থেকে।

রাজনীতির ভিতরে-বাইরে জোছনার আলোকিত রূপ যেমন থাকে, অমাবস্যার কুৎিসত অন্ধকারও থাকে। স্থানীয় রাজনীতির কুৎসিত কিছু মানুষ তিনি মারা যাচ্ছেন বলে, তার নির্বাচনী এলাকায় ভোটের লড়াই করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বেশ আগেই চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত চিত্তে কাউকে কাউকে প্রশ্ন করেছিলেন, তোরা নাকি আমার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিস? পরবর্তীতে তিনি তার এই বেদনামিশ্রিত বক্তব্য ও অসুখের ব্যাখ্যা সংসদে দিয়েছিলেন। আপন-পর সবাই জানতেন, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কখনো শরীর ভেঙে যাচ্ছে, কখনো চোখ-মুখ ফুলে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই যেন তার বিরুদ্ধে লড়ছিলেন। নিয়তির অমোঘ বিধান প্রিয়জনদের অশ্রুজলে ভাসিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে চিরদিনের জন্য চলে যেতেই হলো।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন। ষাটের ছাত্র রাজনীতিতে তিনি ছিলেন মস্কোপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুর রাজ্জাক তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের সম্পর্ক ছিল তুই-তোকারির। ষাটের ছাত্র রাজনীতির নবজাগরণ ঘটিয়েছিল, যাকে আমি বলি রেনেসাঁর যুগ। জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সামনে রেখে উত্থান ঘটেছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন। ষাট মানেই শিক্ষার আন্দোলন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেখানে ছিলেন। ষাট মানেই শেখ মুজিবের ছয় দফা, ষাট মানেই আইয়ুবের ফাঁসির মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে জাতির জনককে মুক্ত করে আনাই নয়, ফৌজি শাসকের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া। ষাট মানেই ঊনসত্তর। ষাট মানেই স্বাধীনতার সংগ্রাম, ’৭০-এর গণরায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত পরিণতি।
সুনামগঞ্জের অবহেলিত জনপদ দিরাই-সাল্লা থেকে বঙ্গবন্ধুর নৌকার গণজোয়ারের বিপরীতে ন্যাপের কুঁড়েঘর নিয়ে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরেক শ্রদ্ধেয় অগ্রজ বাবু অক্ষয় কুমার দাসকে পরাজিত করে ’৭০-এর ভোটে স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে উঠে এসেছিলেন সুরঞ্জিত। মুক্তিযুদ্ধে তরুণ জনপ্রতিনিধি যুদ্ধ করেছেন সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে। স্বাধীন বাংলাদেশে গণপরিষদের একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য সুরঞ্জিত ছিলেন সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম একজন। আজীবন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে তার বিচ্যুতি ঘটেনি। আমৃত্যু সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনীতি করেছেন মানুষের কল্যাণে। অমিত সাহসী এই রাজনীতিবিদ সংসদীয় রাজনীতির ওপর ব্যাপক পড়াশোনা করতেন। ইতিহাসের ছাত্র হলেও ভাটির সন্তান বলেই হোক, আর হাওরের জোছনাপ্লাবিত উত্তাল ঢেউ বা ‘আফাল’-এর নৈসর্গিক রূপের মুগ্ধতায় হোক, ভিতরে বাউলের রাজধানী সুনামগঞ্জের মানুষের প্রকৃতিপ্রদত্ত পাওয়া কবি ও ভাবুক মনের রোমান্টিক হৃদয়ের জন্যই হোক, সাহিত্যের রসবোধ ছিল ব্যাপক। রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, জীবনানন্দ দাশ থেকে সুকান্ত, শামসুর রাহমান সব পড়তেন তিনি। সব কিছুতে চোখ বুলালেই মাথায় যেন ফটোকপি হয়ে যেত। আর খুলে যেত চিন্তার দুয়ার।
একজন সৃজনশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে তাকে কাছে থেকে দেখেছি গভীরভাবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, মহাকাব্যের যুগ অতীত হইয়া গিয়াছে। আমাদের রাজনীতির আদর্শিক প্রাণ পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি গোটা জাতিকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ হেঁটে এক মোহনায় মিলিত করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। সেই সময়কার বিশ্ববরেণ্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যক্তিত্বে, উচ্চতায়, শৌর্য-বীর্যে, বীরত্ব, সাহসে ক্ষণজন্মা বাঙালি রাজনীতিবিদ, যিনি আর শত বছরেও আসবেন না। দুনিয়া কাঁপানো বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকের বুলেটে জাতির জীবন থেকে হারিয়ে যেতে হয়েছে। কৃষকের বন্ধু শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই কবে চলে গেছেন। চলে গেছেন বাম রাজনীতির পুরোধা, কমিউনিস্ট আন্দোলনের অগ্রপথিক কমরেড মণি সিংহ, কমরেড অমল সেন, এম এ হকরা। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ডাকের অপেক্ষায় আছেন।
ষাটের ছাত্র রাজনীতির অনন্য সাধারণ সংগঠক কমরেড ফরহাদ, সৈয়দ মাজহারুল হক বাকী, আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর আহমদরা ছাত্র রাজনীতির আকাশে গৌরবময় অতীত রেখে চিরনিদ্রা নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সতীর্থদের নিয়ে ’৯৪ সালে যোগ দিয়েছিলেন। দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক হয়েছিলেন। আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল জলিল হয়ে উঠেছিলেন শেখ হাসিনার পঞ্চ তারকা। আবদুর রাজ্জাক ও আবদুল জলিল আগেই চলে গেছেন। সুরঞ্জিতও চলে গেলেন। ষাটের আরেক কিংবদন্তি সিরাজুল আলম খানের শরীর ভালো যাচ্ছে না। অসুস্থ শয্যায় শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন চলে গেছেন বহু আগেই।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একজন মিডিয়াবান্ধব রাজনীতিবিদ ছিলেন। মিডিয়ায় একজন রাজনীতিবিদকে কীভাবে নিয়ত থাকতে হয়, কীভাবে মানুষের হৃদয়ের ভাষাকে বলতে হয়; সেটি তিনি জাদুকরের মতো জানতেন। গণমাধ্যমে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক মহলের মতোই সেন দা বলে সবার প্রিয়। গণমাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়লেও বৈরিতায় যেতেন না। কাছে ছুটে যেতেন নতুবা কাছে টেনে নিতেন।
’৮১ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনকে জোটের প্রার্থী করেছিল। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন একতা পার্টি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সৈয়দ আলতাফ হোসেনকে নিয়ে বিএনপির রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বিচারপতি সাত্তারের বিরুদ্ধে ড. কামাল হোসেনের জন্য সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে সাচনাবাজারের বটতলায় আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে ভোট চাইতে যাচ্ছেন। ন্যাপ রাজনীতি থেকে আসা আলফাত উদ্দিন অ্যাডভোকেট তখন আওয়ামী লীগের নেতাই নন, ছাত্র সমাজের মধ্যেও জনপ্রিয়। আমি তখন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তখনো ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বাহালুল মজনুন চুন্নু। আলফাত উদ্দিন সাহেব আমাকে বললেন, জনসভায় যেতে হবে। একতা পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ আলতাফ হোসেন জনসভায় প্রধান অতিথি হলেও ভাটি অঞ্চলের মানুষ স্রোতের মতো এসেছে সুরঞ্জিত সেনের বক্তৃতা শুনতে।
জনসভায় লঞ্চে করে যেতে যেতে সেন দার সঙ্গে কথায় কথায় আমি তার মুগ্ধ ভক্ত হয়ে যাই। তার আগে ছোট পার্টির এই বড় নেতার বক্তৃতা ট্রাফিক পয়েন্টে জনতার সঙ্গে মিশে কত শুনেছি। তখনো তিনি দীর্ঘদেহী, সুদর্শন পুরুষ। তার বাগ্মিতার, নাটকীয় ঢং, কথার জাদু, সহজ সরল ভাষাশৈলী, কখনো গরম, কখনো নরম, কখনো বা কৌতুকনির্ভর কথামালা সেই সঙ্গে বাচনভঙ্গি, বাবরি দোলানো চুল জনতাকে চুম্বকের মতো টানত। সভামঞ্চে উঠতে গিয়ে দেখা হলো কৈশোরের বন্ধু, পঁচাত্তর-পরবর্তী ছাত্রলীগের সংগঠক ইয়াহিয়া সাজ্জাদ, সম্ভুর সঙ্গে। আমায় পেয়ে তারা খুশি। স্থানীয় বক্তাদের পর আমার বক্তৃতা শুনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পিঠ চাপড়ে বুকে টেনে নিলেন। সভা শেষে মঞ্চ থেকে নামার পর দেখি আমার স্যান্ডেল নেই। চুরি হয়ে গেছে। নতুন স্যান্ডেল হারিয়ে যাওয়ার খবরে আমাদের সফরসঙ্গী ষাটের ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা রব্বানী ভাই ও মাহবুব ভাই পাশেই জুতার দোকানে গিয়ে একজোড়া ট্রপিকেল স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে দিলেন। পকেট থেকে কুড়ি টাকা দিয়ে মাহবুব ভাই সেটি কিনে দিয়েছিলেন। রব্বানী ভাই সুনামগঞ্জে ও মাহবুব ভাই নিউ জার্সিতে ইন্তেকাল করেছেন।
সেই জনসভার পর থেকে ছাত্র রাজনীতির জীবনে ঢাকায় এলেই আমাদের ঠিকানা ছিল ৮৩ লেক সার্কাস, কলাবাগানে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের বাসভবন। সামাদ আজাদের কর্মী হলেও সুরঞ্জিত সেনের ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বের টানে তার ঝিগাতলার বাসভবনেও নিয়মিত যেতাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ছাত্র রাজনীতি থেকে ইতি ঘটে। সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বে জড়িয়ে গণতন্ত্রের নবযাত্রায় ’৯১ সাল থেকে সংসদ ও রাজনৈতিক বিটের আপদমস্তক রিপোর্টার হয়ে উঠতে থাকি। সেই সময় বিরোধী দলের উপনেতা ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ। বিরোধী দলের চিফ হুইপ মোহাম্মদ নাসিম, গণতন্ত্রী পার্টি থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এনডিএফ থেকে আসা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসিতে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নিয়মিত সামাদ আজাদের কার্যালয়ে আসতেন। আসতেন রাশেদ খান মেননও। সেই সংসদ ছিল সবচেয়ে প্রাণবন্ত। সেখানেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছে সংসদীয় রিপোর্টিংয়ে আমি যে সহযোগিতা পেয়েছি, সেখান থেকেই পেশাদারিত্বের জীবনে রাজনৈতিক রিপোর্টার থেকে একজন কলামিস্ট হয়ে ওঠার নেপথ্যে যে দু-চারজনের তুমুল উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি তাদের অন্যতম সুরঞ্জিত সেন। পৃথিবীর সব ঋণ শোধ করা যায়, ভালোবাসার ঋণ কখনো শোধ হয় না।
ভাটি বাংলার রাজনীতির রাজপুত্র সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মানুষের মন পড়তে জানতেন। রাজনীতির গতিপ্রকৃতি, সংসদীয় রাজনীতি, সংবিধান, আইন ও বিধিবিধান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। এসব নিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, কখনো সংসদে, কখনো তার ঝিগাতলার বাসার বেডরুম থেকে পেছনের বারান্দায় বসেও আলোচনা করেছি। পঞ্চম সংসদ এতটাই কার্যকর ছিল, এতটাই বিতর্কমুখর ছিল; সেই সংসদে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের পারফরমেন্স ছিল আমাদের নজরকাড়াই নয়, মুগ্ধ করাই নয়; তার জীবনের সেরা। ওই সংসদেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কারণে উপলব্ধি করেছি একজন এমপিরই নয়, দেশে রাজনীতি ও সংসদ গতিময় থাকলে, ছন্দময় থাকলে রাজনৈতিক ও সংসদ রিপোর্টারদেরও সংবিধান এবং কার্যপ্রণালি বিধি হাতের নাগালে সব সময় রাখতে হয়। সে সময় সংবিধানের অনেকগুলো ধারা-অনুচ্ছেদ ও সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি প্রায় মুখস্থ হয়ে পড়েছিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেছিলেন, ’৭৯ সালের সংসদে সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান এত অভিজ্ঞ ছিলেন, এত পড়াশোনা ছিল, হাতে এত বই ছিল যে যখন তখন রেফারেন্স দিয়ে কথা বলতেন। তাকে মোকাবিলা করতে গিয়েই সংসদের লাইব্রেরিতে তারা নিয়মিত পড়াশোনা করতেন। সেখান থেকেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সখ্য গড়ে উঠেছিল।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন আমাকে হাতের কাছে সংবিধান রাখতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংবিধান এবং কার্যপ্রণালি বিধি পাঠ এবং আয়ত্ত করতে শিখিয়েছিলেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমাকে অনেক বুঝতে পারতেন। আমার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত প্রামাণ্য গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘পীর হাবিবের ৫০ বছর অতিক্রমের এই সময়ে বলব, সে সুখে আছে। সে কলম ধরলেই অনেক কিছু লিখে ফেলে। আজ সে একজন পরিণত সাংবাদিক। হাবিব, আবেগ দিয়ে লেখে, তবে হৃদয় যত বাড়ে লেখার সেন্সরশিপ ততই কমে। সে মানুষের সঙ্গে চলে হৃদয় দিয়ে, মাথা দিয়ে নয়। মূলত হাবিবের পরিবারের যে শহরে বসবাস, তার জন্ম-উত্থান সে শহরটা ছিল বামপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের দুর্গ। খুব সহজেই যে তারা পেয়ে গেছে তা নয়। তাদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়েছে। সেই লড়াই আবেগের, আদর্শের, মানবিকতার। স্বাধীনতা-উত্তর ’৭৫-পরবর্তী সময়ে সুনামগঞ্জ শহরে হাবিবের বড় ভাই মতিউর রহমান পীরসহ কিছু ছাত্র নেতা তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা, সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা দিয়ে বেরিয়ে আসে এবং তাদের নেতৃত্বেই ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের মাঝে জনপ্রিয় হয়— মানুষের অন্তরে স্থান করে নেয়। সেই ধারায় পীর হাবিবের উত্থান ঘটে স্থানীয় ছাত্র রাজনীতিতে। এক মুহূর্তের আনন্দই তার কাছে অমূল্য সম্পদ। এ আনন্দ কোনো বৈভবের নয়; কোনো আত্মগরিমার নয়। সুনামগঞ্জের প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা পীর হাবিবের একখানি কবি মন আছে। গভীর আবেগ আছে, প্রেম আছে। দীর্ঘ সম্পর্কের সূত্রে আমি দেখেছি, তার মধ্যে কবি নজরুলের দ্রোহ আছে। আজ তার লেখা পড়লে মনে হয়, সে আমার, কাল পড়লে বোঝা যায়, সে আমার নয়। সে তার পথেই হাঁটে। প্রথা ভেঙেই হাঁটতে হাঁটতে এখানে এসেছে। তাকে হাওর টানে, জোছনা টানে। বাউল গানের জলসা টানে। সে হুটহাট চলে যায় মনের সুখে। তাকে বলতে ইচ্ছে করে কলামের আকার ছোট করতে, বলা হয় না। যদি রেগে যায়! আমার কাছে পীর হাবিব এখনো বিভ্রান্ত হয়নি। তার পথ আঁকাবাঁকা। প্রথা ভাঙার সাংবাদিকতা, প্রথা ভাঙার রাজনীতির জন্য যেখানেই গেছে সেখানেই সে চেষ্টা করেছে। পার্থিব জগতের লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করেনি। ’
আজ সোমবার তার রাজনীতির সেই তীর্থস্থান দিরাইয়ে শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হবে। লাখো জনতা অশ্রুসজল নয়নে তাকে শেষ বিদায় জানাবে। তার শূন্য আসনে উপনির্বাচনে তার প্রিয়তমা পত্নী জয়া সেনকেই চাইবে। চিতার আগুনে দাদার শেষকৃত্য হবে। কীর্তিমান মানুষেরা আপন কীর্তিতেই অমরত্ব পায়। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সংসদীয় রাজনীতি তাকে অমরত্ব দিয়েছে। পঞ্চম সংসদে প্রথম স্পিকার ছিলেন আবদুর রহমান বিশ্বাস। গণতন্ত্রের নবযাত্রায় রহমান বিশ্বাস একদিন অধিবেশন চলাকালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস ডেকে বের করে দিতে চাইলে অধিবেশন কক্ষে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখনই প্রবেশ করেন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার মধ্যে দেখেছি, সংসদীয় রাজনীতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ। আজকের সংসদের দিকে তাকালে যদিও তার হিসাব মিলাতে পারি না। তিনি সংসদ নেতা আর এমন বিরোধী দল যেন মানায় না। বনেরা যেমন বনে সুন্দর, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তেমনি সংসদেই সুন্দর ছিলেন। শেখ হাসিনাকেও একটি প্রাণবন্ত, কার্যকর সংসদেই মানায়।
সুরঞ্জিত সেন বিয়ে করেছিলেন বিদুষী রমণী জয়া সেনগুপ্তকে। ব্র্যাকের এক সময়ের গবেষক এই মমতাময়ী নারী শিক্ষকতাও করতেন, গানও গাইতেন। সুরঞ্জিত সেনের ঘরণী হয়ে একে একে সব ছেড়েছেন। ছুটির দিনটি তিনি পূজা-অর্চনা করতেন। আলাবোলা সুরঞ্জিত বিয়ের দিন ভুলে গিয়েছিলেন। আগের দিন শ্বশুরপক্ষ থেকে টেলিফোন না এলে বিপত্তিই ঘটত। তার বাড়িতে যতবার গেছি, জয়া বৌদির হাতের তৈরি ফলের জুস না হয় ভাত খেতে হয়েছে। ভাতের টেবিলে একদিন ঝিঙে দিয়ে শোল মাছের ঝোল সেন দা আমার প্লেটে তুলে দিচ্ছিলেন বেশি করে। বৌদি বললেন, এত দিচ্ছ কেন? দাদা বললেন, ওর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বৌদি বললেন, এই রান্না তোমার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ও বয়সে তরুণ। ওর বয়সে তুমি একবেলাতেই দুটো মোরগ খেয়ে নিতে। রাজনীতিবিদের বাড়ি কর্মী ও দর্শনার্থীদের আনাগোনায় এলোমেলো করে রাখতেন দাদা। অগোছালো সেন দা, ঘরের ভিতরে কুকুর প্রবেশ করিয়ে দিতেন। এ নিয়ে বৌদি রাগও করতেন। বৌদি যেদিন বাসায় থাকতেন, তার পূজা-অর্চনার জন্য তিনি সংসদের অফিসে চলে যেতেন। সুরঞ্জিত সেন ভোজনরসিক হলেও গত কয়েক বছর ধরে বৌদি খাবারে পরিবর্তন এনেছিলেন। বৌদি বলতেন, আপনি কবে আসবেন, তা জানিয়ে আসবেন। ঠিকমতো রান্না থাকে না আর ও আপনাকে এনে টেবিলে বসিয়ে দেয়। একদিন দাদা আমাকে জোর করছেন খেয়ে আসতে। বৌদি দৌড়ে বেরিয়ে এসে আমাকে বলছেন, ওর কথায় টেবিলে বসবেন না। ও জানেই না খাবার আছে কি বা নেই? তার খুব ইচ্ছে ছিল সংসদীয় রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আত্মজীবনীমূলক একটা বই লেখার। সেটি আর হলো না। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে নন্দিত হয়েছেন, কখনো বা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু রাজনীতির প্রাথমিক পর্ব থেকে জীবনে শেষ ঘুমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার জীবন ছিল দহনের, সংগ্রাম ও লড়াইয়ের। যা কিছু পেয়েছেন মেধা, যোগ্যতা, সাহস ও লড়াইয়ের মধ্যেই পেয়েছেন। দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবন তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছিল। তাকে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন কেন? বলেছিলেন— অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই শুধু নয়; বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে বুঝতে পারেন। তার সঙ্গে রাজনীতি করা যায়। রাজনীতিতে নেতৃত্বের বিরোধ ছিল আরেক কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে। বিরোধ তুঙ্গে উঠলেই বলতেন, উনার আশ্রয়ের জায়গা যেখানে, আমারও আশ্রয়ের জায়গা সেখানে। সাহসী ছিলেন, হৃদয় দিয়ে রাজনীতি ও মানুষকে পড়তে পারতেন। হিউমারসেন্স উঠতে বসতে দেখেছি। হবিগঞ্জের এক বহুল আলোচিত ধনাঢ্য জলমহাল ইজারাদার তার ভক্ত ছিলেন। দাদার সামনে একদিন উনাকে তার পিএস পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। নাম শুনতেই বললাম, আপনার অনেক গল্প শুনেছি। স্বভাবসুলভ হাসিতে দাদা বললেন, হ্যাঁ দস্যু বনহুর, দস্যু বাহারামের মতো তোমার নামও সবাই জানে। শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে ‘শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার’ এমন তীর্যক মন্তব্য তিনিই করতে পারতেন। দাদাই করতে পারতেন দলের ভিতরে থেকে, সরকারের মধ্যে বাস করে মানুষের মনের কথাটি ঠোঁটকাটার মতো বলে ফেলতেন। জাতীয় পর্যায় থেকে ঘরোয়া পর্যায় পর্যন্ত তার মুখে কোনো আগল ছিল না। সারল্যতাও ছিল। যা বলতেন মুখের ওপর বলতেন।
’৯৬ শাসনামলে অল্প ভোটে তার নির্বাচনী আসনে পরাজিত হন। হবিগঞ্জের উপনির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনকে বিজয়ী করে আনেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে তার নেত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল। সংসদে একদিন বসে আছি এমন সময় তার কাছে ওই এলাকার এক কর্মী এলে গল্পে গল্পে তিনি জানতে চাইলেন, তোমার ছেলে-মেয়ে কয়টা? লোকটি ৯ জন বলতেই তিনি বলে উঠলেন, বাহ, বাহ। স ষ্টারও লীলাখেলা। আমাকে সামর্থ্য দিছে কিন্তু বাচ্চা দিছে একটা। তোমাকে সামর্থ্য দেয়নি, বাচ্চা দিছে ৯টা। জীবনের শুরুতে আইন পেশায় জড়িয়ে ছিলেন। রাজনীতির জন্য সময় দিতে পারেননি। আক্ষেপ ছিল, দেশসেরা আইনজীবীটি হতে না পারার। একজন সংসদ সদস্যকে কীভাবে স্পিকার ও গণমাধ্যমের নজর কাড়তে হয়; সেটি স্বাধীনতার পর তালিম নিয়ে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের একজন বামপন্থি পার্লামেন্টারিয়ানের কাছ থেকে। গণপরিষদে তাকে সেই সুযোগটি দিয়েছিলেন আরেক দেশবরেণ্য পার্লামেন্টারিয়ান মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী। ’৭৯ সংসদে আইডিএল নামে জামায়াত এসেছিল। আইডিএল নেতা ছিলেন মাওলানা আবদুর রহিম। সংসদ নেতা শাহ আজিজ বক্তৃতা করছেন, সুরঞ্জিত বারবার হাত তুলছেন। শাহ আজিজ বক্তৃতা থামিয়ে স্পিকারকে বললেন, তাকে ফ্লোর দিতে। ফ্লোর নিয়ে সুরঞ্জিত সেন বললেন— আপনি আরবিতে যেটুকু বক্তৃতা করেছেন সেটুকু সত্য বলেছেন। বিস্ময় নিয়ে শাহ আজিজ জানতে চাইলেন— ইংরেজি বাংলা না বুঝে আপনি আরবির অংশটুকু বুঝলেন কী করে? সুরঞ্জিত বললেন, আপনি যখন আরবিতে বক্তৃতা করছিলেন তখন মাওলানা রহিম সাহেব সম্মতিসূচক মাথা নাড়ছিলেন। সংসদে হাসির রোল পড়ে।
কাল শত শত স্বজন ঝিগাতলার বাসভবনে দাদাকে দেখতে যান শোকার্তচিত্তে। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে পংকজ দেবনাথের হাতে হাত রেখে যখন শেষ দেখা দেখছিলাম, বুকের ভিতরে ক্রন্দন উঠল। চিরঘুমন্ত মুখটি দেখে মনে হচ্ছিল, আর কোনো দিন কি সংসদ, কি জনসভায় স্বভাবসুলভ নায়কোচিত নাটকীয়তায় মানুষের হৃদয়ের ভাষা কেড়ে নিয়ে তিনি আর সাহসের সঙ্গে কথা বলবেন না। আমার জীবনে তিনজনকে শুধু দাদা বলেই সম্বোধন করি। একজন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, আরেকজন বাঘা সিদ্দিকী খ্যাত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সুরঞ্জিতকে দিয়েই দাদা ডাক শুরু। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রণব মুখার্জি একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘উনি কথা বলেন খুব সুন্দর করে। মুগ্ধ করতে পারেন ‘সেই মুগ্ধ হবার দিনই শেষ হয়নি; সুরঞ্জিত সেনের প্রয়াণে রাজনীতির একটি অধ্যায়ের পর্দায়ই পড়েনি। বলতে হয় সুরঞ্জিত সেন নয়, সংসদীয় রাজনীতির নক্ষত্রের বিদায়। রাজনীতির এক কবিয়ালের বিদায়। দাদা, আর দেখা হবে না। আমার দুই ফোটা অশ্রু দিয়ে আপনাকে প্রণতি জানাই, যেখানেই থাকেন, ভালো থাকেন, এবার শান্তিতে ঘুমান।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ইমেইল : peerhabib.rahman@gmail.com
(লেখকের অনলাইন থেকে)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!