তাহিরপুর প্রতিনিধি
স্থানীয় দুই সুদখোরের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাতারী গ্রামের ফয়সাল আহমেদ সৌরভ(৩০) । এজন্য তিন লাখ টাকা সুদ দিয়েছেন। কিন্তু সুদখোরদের দাবি আরো সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার ফয়সালের পাথর বোঝাই নৌকা আটকে দেয় এক সুদখোর। নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে ওইদিন সন্ধ্যায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এবং রাত ৮টায় গাছের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
নিহত ফয়সাল আহমেদ উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারী গ্রামের আজিজুর রহমান ওরফে মকদ্দসের বড় ছেলে। ‘ফাইজা’ নামে তিন মাস বয়সী একজন কন্যা সন্তান রয়েছে তার। এ ঘটনায় নিহত ফয়সাল আহমেদ সৌরভের পিতা আজিজুর রহমান বাদী হয়ে দুই সুদখোরের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানায় মামলা করেছেন। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ৩০৬ ধারায় মামলাটি হয়।
আসামীরা হলেন- উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে রফিক মিয়া ও বালিজুরী ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজারের মৃত আব্দুল কাহার ওরফে মুসলিম মেম্বারের ছেলে শফিক মিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাত সাড়ে সাতটার দিকে ফয়সাল আহমেদ সৌরভ তার আইডি থেকে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,‘ আমি গলায় দড়ি দিলাম তুই রফিকের লাগি। তুই আমারে কাবু করে লাশ বানাইলে, তুই ভালো থাক বেঈমান। সফিকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা এনেছিলাম সুদে। তিন লাখ টাকা সুদ দিয়েছি। এখনো সাড়ে তিন লাখ পায়। এই রফিক আর সফিকের লাগি আত্মহত্যা করলাম। ভালো থাক আমার পরিবার। মা ‘ফাইজা’ আমায় ক্ষমা করো। মা-বাবা-ভাই-বোন আমায় ক্ষমা করিও। বউ তোমাকে বলার কিছু নেই———–? ইতি, এক কাপুরুষ।
স্ট্যাটাস দেখে স্বজন ও গ্রামবাসী খোঁজাখুঁজি করে রাত ৮ টার দিকে নিজ গ্রাম পাতারী ও পাশ^বর্তী শান্তিপুর গ্রামের মধ্যে নির্জনস্থানে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ফয়সালকে দেখতে পায়। তাকে উদ্ধার করে পাশর্^বর্তী বিশম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত ফয়সাল আহমেদ এক সময় নিজের নৌকায় মালামাল পরিবহন করতেন । কয়েক বছর আগে নৌকা বিক্রি করে অন্যের নৌকায় চালক হিসাবে ব্যবসায়ীদের পাথর ও বালু পরিবহন করে আসছিলেন। বেশ কিছুদিন আগে ফয়াসল আহমেদ স্থানীয় যুবক রফিক মিয়া এবং শফিক মিয়ার কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চহারে সুদ দিলেও তাদের আসল টাকা শোধ হয়নি। উল্টো সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তারা। এজন্য হুমকিতে ও চাপে ছিলেন ফয়সাল আহমেদ। গত বৃহস্পতিবার চুনাপাথর ভর্তি নৌকা সুদের টাকার জন্য পাটলাই নদীর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে আটকে দেয় সুদখোর রফিক মিয়া। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েন ফয়সাল আহমেদ।
নিহতের নিকটাত্মীয় ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলী নেওয়াজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অধিকহারে সুদ দিয়েও সুদখোরদের কাছ থেকে তার মুক্তি মিলছিল না। সুদখোরদের চাপের কারণে অকালে জীবন হারাতে হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখর রায় বলেন, সুদখোররা গরীব, দুর্বল আর দেউলিয়াদের আতঙ্ক। কেউ একবার ওদের জালে পড়লে এ থেকে কেউ বের হতে পারে না। এক লাখ টাকায় প্রতিমাসে সর্বনি¤œ ২০ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়।
তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সোহেল রানা মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।