বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকায় পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে প্রাণ ও প্রকৃতিবিরোধী আয়োজন সম্পন্ন করেছে একটি সংগঠন। তারা টাঙ্গুয়ার হাওরের জয়পুরে ওয়াচটাওয়ারে ক্যাম্প করে ‘হাওর সম্প্রীতি ও পূর্ণিমা উৎসব’ নাম দিয়ে উচ্চ শব্দে মাইক ও ড্রামসেট বাজিয়ে গানের আসরের আয়োজন করেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীসহ স্থানীয়রা। রামসার নীতিমালাসহ সরকারের ইসিএ (ইকোলজিক্যাল-ক্রিটিক্যাল এরিয়া) অনুযায়ী এসব সংরক্ষিত এলাকায় মাইক বাজানোসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিরোধী সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ১৯৯৯ সনে টাঙ্গুয়ার হাওর সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত হবার পর ২০০০ সনে সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়। এর পরিবেশ, প্রাণ ও প্রকৃতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এলাকাটিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি ‘ডাহুক’ নামের একটি সংগঠন জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে বিনা ভাড়ায় ট্যুর ঘোষণা করে ওই প্রতিষ্ঠান। তবে খাবারের জন্য তারা ৯৯৯ টাকা এবং তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে কিলোমিটার প্রতি ২০০ টাকা ভাড়া ঘোষণা করে প্রচারণা চালায়। পানির জন্য হাহাকার করা হাওরবাসী তাদের এমন আয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকায় পরিবেশ বিধ্বংসী এমন আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। কিন্তু এর মধ্যেই ২ জুন শুক্রবার সন্ধ্যা রাত থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকা জয়পুর গ্রামের পাশে ওয়াচটাওয়ার সংলগ্ন হিজলকরচের বাগের ভেতর গানের আসরের আয়োজন করে ‘ডাহুক’। সন্ধ্যা রাত থেকেই উচ্চ শব্দের ড্রামসেট ও মাইকের আওয়াজে এলাকাবাসী অতীষ্ট হয়ে ওঠেন। পাখপাখালিসহ হাওরের গাছে ও কান্দায় আশ্রিত পাখপাখালি ও কীটপতঙ্গও উচ্চ শব্দ ও শোরগোলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। এঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
জয়পুর গ্রামের পরিবেশকর্মী আহমদ কবীর বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচটাওয়ার এলাকা সংরক্ষিত। এখানে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে আয়োজন নিষিদ্ধ। কিন্তু হঠাৎ করে একটি সংগটন কাল ‘হাওর সম্প্রীতি ও পূর্ণিমা উৎসব’ নাম দিয়ে উচ্চ শব্দে গানের আসর বসানো হয়। এতে হাওরের জীববৈচিত্র, কীট পতঙ্গ, পাখপাখালির সঙ্গে এলাকার মানুষও এমন আয়োজনকে উৎপাত হিসেবে দেখেছে।
এ বিষয়ে ডাহুকের প্রতিষ্ঠাতা মাগফি রেজা সিদ্দিকের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের ফোন ধরেননি।
প্রতিবেশ কর্মী ইয়াহইয়া সাজ্জাদ বলেন, রামসার নীতিমালা বাদ দিলেও বাংলাদেশ সরকারের ইসিএ নীতিমালা অনযায়ী পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এমন আয়োজন আইনবিরোধী। সরকারের এই নীতিতে বলে দেওয়া আছে সংরক্ষিত এলাকায় কী কী করতে হবে। মাইক বাজিয়ে এমন আয়োজন নীতিমালা বিরোধী। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, রামসার নীতিমালা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশে এমন আয়োজন করায় ইউএনও ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে নিষেধ করেছে। পরে তারা গ্রামের ভিতর এসে অনুষ্ঠান করেছে।