বিশেষ প্রতিনিধি::
উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে গৃহহীণ ও ভূমিহীনদের সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হয়েছে মর্মে এক ভূক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করায় তাকে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেখিয়ে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে অভিযোগ কারীর কাছ থেকে অভিযোগটি মিথ্যা মর্মে মুচলেকাও রাখা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেখিয়ে থানায় নিয়ে তাকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানান ভূক্তভোগী। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা দু’জনই লাঞ্চিত করার ঘটনা ও নীরিহ ভুক্তভোগীর উপর নির্বাহী ক্ষমতা দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এদিকে অভিযুক্তকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া ও পরবর্তীতে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের প্রচেষ্ঠার ঘটনার সমালোচনা করেছেন অনেকে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র আরফান আলীকে গৃহহীণ ও ভূমিহীন হিসেবে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই ঘর পাইয়ে দেবার কথা বলে একই গ্রামের মো. মানিক মিয়া উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এই টাকা তিনি সুদে এনে মানিক মিয়াকে ৫-৬ জন স্বাক্ষীর সামনে তার হাতে তুলে দেন। আরফান আলী ঘরের তালিকাভূক্ত হলেও একই তালিকার সবাই ঘর পেয়ে গেছে। তার ঘরটি এখনো নির্মাণ করা হচ্ছেনা। কেবল কিছু ইট ফেলে রেখে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী আরফান আলী আরো উল্লেখ করেন, বিবাদী মানিক মিয়া তার নামে ঘর বরাদ্দের কথা জানতে পেরেই প্রতারণা করে এই ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবেদনকারী তার নামে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত বিনামূল্যের ঘরটি নির্মাণ সহ তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ২০ হাজার টাকা ফেরত দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ২৭ সেপ্টেম্বর লিখিত আবেদনটি করেন। আবেদনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
অভিযোগ পেয়েই ক্ষুব্দ এসিল্যান্ড আরফান আলীকে ও অভিযুক্ত মানিক মিয়াকে থানায় পাঠিয়ে দেন। তিনি প্রস্তুতি নেন আরফান আলীকে ভ্রাম্যাণ আদালতে সাজা দেওয়ার। এসময় কয়েকজন তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে এসিল্যান্ড তাদেরকেও হুমকি ধমকি দেন। আরফান আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ডের এমন আগ্রাসী তৎপরতার সময় অভিযুক্ত মানিক মিয়া কোন টাকা পয়সা নেননি বলে জানালে এসিল্যান্ড অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় পাঠিয়ে দেন। পরে থানায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিলে রাত ২টার দিকে মুক্তি পান অভিযোগকারী।
অভিযোগকারী আরফান আলী বলেন, ৫-৬ জন স্বাক্ষীর সামনে এসিল্যান্ড ও পিআইও স্যারের নাম ভাঙ্গিয়ে মানিক মিয়া আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। আমি অভিযোগ করায় আমাকে উল্টো হয়রানি করে রাত ২ টা পর্যন্ত থানায় রাখা হয়েছিল।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বলেন, আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ না করায় এসিল্যান্ড মহোদয়ের পাঠানো দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নেইনি। তবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থানায় বিষয়টি শেষ করে দিয়েছেন।
এসিল্যান্ড ফয়সাল আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে হলে আমার অফিসে এসে কথা বলেন।’ এর বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমি এসিল্যান্ডকে অভিযোগকারীর অভিযোগ তদন্ত করতে দিয়েছিলাম। তার নামও অভিযোগপত্রে থাকায় তিনি থানার ওসিকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন এবং দুজনকে তার কাছে পাঠিয়েছিলেন। পরে অভিযোগকারী তার অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। কেউ তাকে মানসিক হয়রানি করেনি বলে জানান তিনি।