স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র ৫ নম্বর সেক্টরের টেকেরঘাট সাবসেক্টরের গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দাশপার্টির কমা-ার শহিদ জগৎজ্যোতির ৫০তম প্রয়াণ দিবস পালন করেছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ। ১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শহিদ জগৎজ্যোতি দাসসহ কলেজের অপর তিন শহিদের নামে নির্মিত শহিদ স্মৃতিসৌধে পুস্পার্ঘ্য প্রদান করা হয়। কলেজের শিক্ষার্থীদের একাত্তরের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচালনা করতে এবং দেশের জন্য দুঃসময়ে জগৎজ্যোতির মতো কাজে উদ্ধুব্ধ করতে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহিদ জগৎজ্যোতির আতœদান নিয়ে বিশেষ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নীলিমা চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রজত কান্তি সোম মানস। আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলেজের বাংলাবিভাগের চেয়ারম্যান রোখসানা চৌধুরী। গুরত্বপূর্ণ এই প্রবন্ধে তিনি কলেজের শিক্ষার্থীদের আতœদানসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক তুলে ধরেন।
আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, শহিদ জগৎজ্যোতি মৃত্যুঞ্জয়ী একজন বীর যোদ্ধা। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র থাকাকালে তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে হানাদারদের নাস্তানাবুদ করেন। দুর্ধর্ষ গেরিলাদল দাসপার্টি গঠন করে দুর্গম ভাটি অঞ্চলে পাকিস্তানী হানাদার ও রাজাকরদের সঙ্গে অসম যুদ্ধে জয়ী হন। তার বাহিনী হাওরাঞ্চলের বিশাল নৌপথ মুুক্ত রেখেছিলেন। যে কারণে হানাদার সরকার বাধ্য হয়ে হাওরাঞ্চলের নৌপথে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। দুর্গম অঞ্চলে গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ পরিচালনা করে হানাদার সেনাবাহিনীর জন্য তাঁর দলটি ক্রমশ ত্রাস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার প্রাক্ষালে জগৎজ্যোতিকে ফাঁদে ফেলে যুদ্ধে জড়িয়ে তাকে হত্যা করেছিল মিলিশিয়া ও রাজাকাররা। যুদ্ধস্থলে দিনভর যুদ্ধ করে তিনি সন্ধ্যায় শহিদ হন আজমিরিগঞ্জের খৈয়াগুপি বিলে। সেখান থেকে পরদিন তার মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় বাজারে বৈদ্যুতিক খুটির সঙ্গে বেধে নির্যাতন করেছিল। পরে তার লাশ ভাসিয়ে দেয় ভেড়ামোহনা নদীতে। তিনি এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধে একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে এখনো প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। বক্তারা কলেজ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শহিদ জগৎজ্যোতি আমাদের গৌরব। আমাদের কলেজের সুনাম বৃদ্ধিতে তার ভূমিকা চিরদিন প্রোজ্জ্বল থাকবে। তাই আগামীতে দেশের জন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তারা।
উল্লেখ্য সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জগৎজ্যোতির বীরত্বের জন্য অস্থায়ী সরকার সর্বোচ্চ খেতাবের ঘোষণা দিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধী প্রদান করেছিল। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান রূপকথার মনে হলেও তিনি হাওরাঞ্চলে বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে গিয়ে ১৯৭১ সনের এই দিনে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন।