স্টাফ নিপোর্টার
সুনামগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে দুই রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্ম সনদ দেবার মামলায় সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখ্তসহ চার জনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। রোববার সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কুদরত-এ-ইলাহী ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১’এর এ ধারা মোতাবেক চার্জের দায় থেকে এই চারজনকে অব্যাহতি প্রদান করেন। সুনামগঞ্জ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মলয় চক্রবর্তী রাজু এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করতে আসেন দুই রোহিঙ্গা। তাঁদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। তাঁরা টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চার ব্যক্তির সহযোগিতায় সুনামগঞ্জে আসেন। এই চার ব্যক্তি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ওই দিন সকালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। বিকেলে আবার ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে দুই রোহিঙ্গা ও তাঁদের সহযোগী চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
ওই দিনই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের মো. ফরহাদ আহমদ (৩৬), রামনগর গ্রামের মো. নূর হোসেন (২৩), সুজাতপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও আমির উদ্দিনকে (২৩) আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার। এর আগে ওই দুই রোহিঙ্গা সুনামগঞ্জ পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেলের সুপারিশে পৌরসভা থেকে জন্মসনদ নিয়েছিলেন।
এই মামলায় ওই বছরের ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে এজাহারভুক্ত চার আসামি ছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোসেন আহমদ রাসেল, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পিযুষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক ও স্যানিটারি পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন, পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ও সুনামগঞ্জ বারের আইনজীবী কাওসার আলমকে যুক্ত করা হয়।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ওই সময়েই বলেছিলেন, ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যখন এসব সনদপত্র দেওয়া হয়, তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন। তাঁর দায়িত্বে ছিলেন পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর (তখনকার প্যানেল মেয়র-১) হোসেন আহমদ রাসেল। তাই রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই তিনি যুক্ত নন।
রোববার এই মামলার চার্জ গঠন সংক্রান্ত আদেশের দিন ধার্য ছিল। শুনানী শেষে আদালত পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত, আসামী আমির উদ্দিন, পিযুষ কান্তি তালুকদার ও মো. সেলিম উদ্দিনকে অব্যাহতি দেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ আদালত পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্তসহ এই চার আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার মতো কোন উপাদান না পাওয়ায় তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অসিম চন্দ্র দেবও চার্জ গঠনকালে এই চারজনকে অব্যাহতি দেবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আপ্তাব উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, সৈয়দ শামছুল ইসলাম, আইনুল ইসলাম বাবলু, শুকুর আলী, প্রদীপ আচার্য সেন্টু, মনিষ কান্তি দে মিন্টু, আসিক মিয়া প্রমুখ।
সরকারপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত পিপি মলয় চক্রবর্তী রাজু।
(সুনামগঞ্জের খবর)