ভারতে করোনা ভাইরাসকে করেনা সুনামি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিবিসি।আক্ষরিক অর্থেই ভারতে সুনামির গতিতে বিস্তার ঘটছে ভাইরাসটি।দেশটি আক্রান্তের দিক থেকে ইতিমধ্যে ব্রাজিলকে টপকে বিশ্বের ২ নম্বরে অবস্থান নিয়েছে।করোনা পরিক্ষায় গড়ে প্রায় প্রতি ৩জনে ১জন আক্রান্ত হচ্ছে।গত ৬দিন (২৭/০৪/২০২১ পর্যন্ত) দৈনিক টানা তিন লাখের অধিক (৩-৩.৫লাখ গড়ে)লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা এযাবৎকালের বিশ্বরেকর্ড!এই রেকর্ডই জানান দিচ্ছে করোনা কতোটা ভায়াবহ গতিতে গ্রাস করছে ভারতকে।ওয়াল্ডো মিটারের হিসেবে এখন পর্যন্ত ভারতে প্রায় ১,৭৯,৯৭,২৬৭জন (২৮/০৪/২০২১ইং এর তথ্য) আক্রান্ত হয়েছে।মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় দেশটি ইতিমধ্যে ২লাখ ছাড়িয়ে বিশ্বের ৩য় অবস্থানে পৌঁছে গেছে।আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা দিয়েই এই ভয়াবহতা উপলদ্ধি করা সম্ভব না।দেশটির রাজধানি দিল্লিসহ সবগুলো বড় শহরের হাসপাতালে রোগীর তিলধারনের ঠাঁই নাই।প্রতিটি হাসপাতালে রয়েয়ে তীব্র অক্সিজেন সংকট।করোনার মতো সংক্রামক রোগে একই বেডে ২-৩জন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।বেড,আইসিইউ সংকট চরমে পৌঁছেছে।ডাক্তার,নার্স,সাপোর্টিং স্টাফ সীমাবদ্ধতা নিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিটি হাসপতাল।প্রায় সব হাসপাতালে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে যে এখানে কোন সীট খালি নাই, কোন আইসিইউ ফাঁকা নাই।হাসপাতালের গেটের সামনে শত শত রোগী এক ফোঁটা অক্সিজেনের জন্য ছটফট করছে।ভর্তির সুযোগ না পেয়ে গেটের বাইরেই রাস্তায় বা এম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছে রোগীরা।মারা যাওয়া রোগী যে মারা গেছেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য রোগীর আতœীয় স্বজনেরা হাসপাতালকে কাকুতিমিনতি করছেন।এই দৃশ্য সহ্য করার মতো নয়।শেষ পর্যন্ত মসজিদে করা হয়েছে আইসোলেশন সেন্টার।
শ্মশানে লাশ আর লাশের স্তুপ।লাশ নিয়ে অনেক সময় দুইদিন পর্যন্ত আতœীয়রা অপেক্ষা করছে,দাহ করার সিরিয়াল পাচ্ছেনা!ইতিমধ্যে পার্কগুলোতে লাশ দাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবারে একটু ফিরে তাকাই কেন হঠাৎ ভারত মহাশ্মশানে পরিণত হলো।করোনা ভাইরাসের ১ম ঢেউয়ে ভারত মনে করেছিলো তারা করোনা জয় করে ফেলেছে।প্রায় সব কিছু স্বাভাবিক করে দেয়া হয়েছিলো।করোনাকে উপেক্ষা করেই ভারতে হয়ে গেলো ধর্মিয় হুলি উৎসব।এখানেই শেষ নয়,কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই প্রায় ২০লাখ লোক সমাগম করে কুম্ভু মেলার আয়োজন করা হলো।সেখানে লক্ষ লক্ষ লোক একত্রে ¯œান করে ধর্মিয় আচার পালন করলো।ভারত সরকার যে শুধু ধর্মিয় অনুষ্ঠানে উদারতা দেখিয়েছে তা নয়।করোনর ২য় ঢেউ যখন ভারতকে জেঁকে ধরছে তখনো সরকার প্রায় ৬টি ইলেকশন পরিচালনা করেছেন।ইলেকশনে প্রচার প্রচারণায় হাজার হাজার লোকের গণ জমায়েত,মিছিল মিটিং হয়েছে।সেখানে না মানা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব,না ব্যবহার করা হয়েছে মাস্ক।শপিংমল,মার্কেট,বাজরের চলেছে স¦াস্থ্যবিধি ভাঙ্গার মহোউৎসব।এগুলো মনুষ্যসৃষ্ট কারন;এছাড়াও ভারতে করোনা ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হয়েছে অনেকবার।বিশেষ করে ভাইরাসের ডাবল মিউট্যান্ট আচরণে এটি ছড়িয়েছে সুনামির গতিতে।
ভারত বছরের শুরতে যে অবস্থা ছিলো বংলাদেশে অনেকটা সেই পরিবেশ বিরাজ করছে এখন।এটাই ভয়ের কারন।ভারত নিজের চাহিাদা পূরণের পাশাপাশি অক্সিজেন রপ্তানিও করে থাকে।তারপরও তারা অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে খাবি খাচ্ছে।বাংলাদেশ সাধারণত ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি করে সেটাও এখন বন্ধ আছে।আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে ভারতে।দক্ষিনাঞ্চল ও কিছুটা পূবাঞ্চল বাদ দিলে বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতে সীমান্ত।ইতিমধ্যে ভারত থেকে অনেক লোক দেশে ঢুকেও গেছে এবং বেশ কিছু করোনা আক্রান্ত রোগীয়ও বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।এদের মাধ্যমে যদি বাংলাদেশেও ভাইরাসটি ভারতের মতো বিস্তার লাভ করে তাহলে আমাদের কি ভয়াবহ অবস্থা হবে কল্পনা করা যায়!আমাদের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।বিকল্প ব্যবস্থা থেকে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতেই হবে।প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন তৈরি প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে।আমাদের মতো দেশে লকডাউন দিয়ে খুব একটা সফর হওয়া যাবেনা।দিনমজুর,জরুরি সেবা,গার্মেস্টস বা ইন্ড্রাস্ট্রি এমন কি মার্কেট বন্ধ রাখা যেহেতু সম্ভব নয় তাই আমাদের লকডাউন মেথড থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।উন্নত রাষ্ট্রগুলোও লকডাউন দিয়ে টিকতে পারে নাই।সাম্প্রতিক সময়ে ভারতেই লকডাউনে লক্ষ লক্ষ লোক চাকুরিচ্যুত হয়েছে।আমাদেরও একই অবস্থা।এই মূর্হর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে ইউনিভার্সাল মাস্কিং এর দিকে যাওয়া।সরকারকে কঠোরভাবে জনগণকে মাস্ক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।একই সাথে সকল প্রকাল গণজমায়েত নিষিদ্ধ করতে হবে।বাজারে,মার্কেটে,ব্যাংকে বা যেকোন পাবলিক প্লেসে সামাজিক দূরত্ব মানাতে প্রয়োজনে আবারো সেনাবাহিনী নামাতে হবে।সবেচেয়ে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে সবাইকে পর্যায়ক্রমে ভ্যাক্সিনের আওতায় নিয়ে আসা।এক্ষেত্রে রাশিয়া ইতিমেধ্যে তাদের স্ফুটনিক-৫ ভ্যাক্সিন সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।আরোও যারা আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে চায় তাদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে।প্রয়োজনে আমাদের দেশেই তৈরি হবে তাদের ভ্যাক্সিন; সেই সক্ষমতাতো আমাদের আছেই। ্সবচেয়ে ভালো হয় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিকাল ট্র্যায়ালের অনুমোদন দিয়ে দ্রত ব্যবহার উপযোগি ভ্যাক্সিন তৈরি করা।তাতে নিজেরদর জীবন বাঁচানের পাশাপাশি বিপর্যস্ত অন্যান্য দেশের পাশে দাঁড়ানো যাবে।প্রয়োজনে আমরা তাদের কাছে রপ্তানি করলাম।এত বরং বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উচুঁ করে দাড়াঁতে পারবে। সেটা নিশ্চয় অনেক গৌরবের।
লেখক: প্রভাষক,নৃবিজ্ঞান বিভাগ,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট।