1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় মবসন্ত্রাসে মা ও ছেলে মেয়েকে হত্যার ঘটনায় মামলা, আটক ২ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ: মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিবে সরকার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল: সিন্ডিকেট ভেঙে সেবাকেন্দ্রিক প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।। ইকবাল কাগজী সিলেটে পাথর কোয়ারি খোলার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি, একাত্মতা প্রকাশ ছিন্নমূল মিনি স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির ধ্রুব এষ পেলেন ব্র্যাক—সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ হাওরে নয়া পানি বাস সংকট সমাধানের জন্য ৮দিনের আল্টিমেটাম সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিএনপি সংবিধান রক্ষার পক্ষে, ছুড়ে ফেলার বিপক্ষে: রুহুল কবির রিজভী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আতঙ্কে এনবিআর কর্মীরা তারেক রহমান দেশে ফিরে জনগণের দিশারী হয়ে দেখা দিবেন: কামরুল

আব্দুস সামাদ আজাদ : প্রথম দেখা-প্রথম শেখা।। আল আজাদ

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১, ৩.৫৯ পিএম
  • ৩৭২ বার পড়া হয়েছে

তখন শুকনো মৌসুম। গরমকাল। বয়স আর কত হবে। না, সঠিক বলা সম্ভব নয়। তবে শিশুকাল। খেলাধুলা শেষে একদিন সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরে দেখি, আমাদের ঘরের ভেতর দরজার কাছে চেয়ারে বসা এক মোটাসোটা লোক। পরেন কালো বা এর কাছাকাছি কোন রঙের পেন্ট। গায়ে সাদা হাফ সার্ট। নিজ হাতে পাখা ঘুরিয়ে বাতাস করছেন। দেখেই বুঝে নিলাম, বড় কোন অতিথি নিশ্চয়ই। কারণ তখনকার দিনে গ্রামে পেন্ট-সার্ট পরা লোক সাধারণত: দেখা যেতো না।
আমার নানা বাড়ির খুব নামডাক। সেখানেই আমার জন্ম এবং কৈশোর পর্যন্ত বেড়ে উঠা। বড় নানা (মায়ের বড়চাচা) আব্দুল হক ছিলেন জগদল ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান। এ কারণে তৎকালীন মহকুমা সদর সুনামগঞ্জ কিংবা থানা সদর দিরাই থেকে সরকারি ছোটবড় পেন্ট-সার্ট পরা কর্মকর্তারা প্রায়ই আসতেন। আসতেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাই পেন্ট-সার্ট আমার কাছে নতুন কিছু না হলেও এই মানুষটিকে দেখে কেন জানি ভিন্নরকম অনুভূতি হলো।
একটু পরেই আমার মা মনোয়ারা বেগম রান্নাঘর থেকে নানা জাতের এক থালা পিঠা নিয়ে হাজির হলেন অতিথির সামনে। আমার চোখে তখনো বিস্ময়। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছি। আম্মা কোন কথা না বলে পিঠার থালাটি তার হাতে তুলে দিলেন। এরপর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমার নানা ছমেদ মিয়া। ঢাকাত থাকইন।’
চমকে উঠলাম নামটি শুনে। পরিচিত নাম। বড়দের কাছে বহুবার শুনেছি। আরো শুনেছি, তিনি সব সময় লুকিয়ে থাকেন। কারণ পুলিশ তাকে পেলে নাকি ধরে জেলে পাঠিয়ে দেবে। তখন ‘হুলিয়া’ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ছিলনা।
ভুরাখালির আব্দুস সামাদ (তখন পর্যন্ত আজাদ শব্দটি তার নামের সাথে যুক্ত হয়নি)। আমার সম্পর্কে নানা। মায়ের চাচা। অন্যদিকে আমার অকাল প্রয়াত একমাত্র খালা আনোয়ারা বেগমের চাচা শ্বশুর। এই তাকে প্রথম দেখা। তাও মাত্র কিছুটা সময়। এরপর দীর্ঘবিরতি। ১৯৭০ সালে এসে আবার তার দেখা পেলাম। ততদিনে কতটি বছর পার হয়ে গেছে সে হিসেব কোনদিন পাবো না।
এই দেখার সুবাদে তিনি খুব কাছে টেনে নিলেন। সুযোগ পেলাম তার মতো একজন জাতীয় নেতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভের। তাকে বহুদিন খুব কাছাকাছি থেকে দেখেছি। এ কারণে স্মৃতির ভাণ্ডার বেশ বড়; কিন্তু সব স্মৃতিতো আর একবারে রোমন্থন করা যাবেনা। তাই একটি ঘটনা তুলে ধরছি।
আমাদের পরিবার তখন দিরাই থানা সদরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। সময়টা ১৯৭০ সাল। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশ উত্তাল। নির্বাচনী প্রচারণায় মুখর। দিনরাত সভা-সমাবেশ-মিছিল চলছে। অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন বলে পরিচিত দিরাই-শাল্ল­ায় তখন কি অবস্থা থাকতে পারে তা রাজনীতি সচেতন যে কেউ অনুমান করে নিতে পারেন।
বাঙালি জাতির ভাগ্য নির্ধারণী ওই ঐতিহাসিক নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সিলেট-১০ আসন ছিল তখনকার দিরাই, শাল্ল­া, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ থানা নিয়ে। প্রার্থী ছিলেন মূলত: তিনজন। আওয়ামী লীগের আব্দুস সামাদ আজাদ, ন্যাপের গুলজার আহমদ ও পিডিপির অ্যাডভোকেট গোলাম জিলানী চৌধুরী। প্রাদেশিক পরিষদের আসনটির নম্বর ছিল সিলেট-২। এলাকা গঠিত ছিল দিরাই ও শাল্ল­া থানা নিয়ে। প্রার্থী ছিলেন, আওয়ামী লীগের অক্ষয় কুমার দাস, ন্যাপের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও পিডিপির আব্দুল খালিক। আরো দুয়েকজন প্রার্থী ছিলেন; কিন্তু তাদের তেমন পরিচিতি ছিলনা। কারো অবস্থানও ছিল না হিসেবের মধ্যে। তাই হয়তো এত দ্রুত স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছেন।
আমি তখন কিশোর। সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। থাকি মিরের ময়দান এলাকায় মামা মাস্টার আব্দুল খালিকের বাসায়; কিন্তু নির্বাচনের আগে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে চলে যাই।
দিরাইতে এই বয়সের আমরা কয়েকজন ছিলাম বুঝে না বুঝে ‘নৌকা’র ঘোর সমর্থক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারুণ ভক্ত। আব্দুস সামাদ আজাদের কিশোর কর্মী। প্রতিদিন নির্বাচনী মিছিলে যাওয়া চাই। বিকেলটা আমাদের কাটতো দিরাই বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে। সেখানে যাবার আরো একটা কারণ ছিল। আর তা হলো চারণশিল্পী আব্দুল মান্নানের দরাজ গলার গান। একটানা মাইকে বাজতো এসব গান। বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস, ছয়দফা-এগারো দফা, বঙ্গবন্ধু, আব্দুস সামাদ আজাদ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, নির্বাচন, নৌকা ইত্যাদিকে উপজীব্য করে সহজ-সরল ভাষার এসব গান ছিল তার নিজের লেখা। টেপ রেকর্ডার দিয়ে বাজানো হতো। কখনো কখনো তিনি নিজে গাইতেন। এই গানগুলো সাধারণ মানুষের মনকে দারুণভাবে নাড়া দিতো।
অত্যন্ত দরদী কণ্ঠের অধিকারী আব্দুল মান্নান সারাক্ষণ আব্দুস সামাদ আজাদের সঙ্গে থাকতেন। প্রতিটি সভা-সমাবেশে এসব গান গেয়ে উদ্দীপ্ত করতেন জনগণকে। মাঝে মধ্যে নির্বাচনী কার্যালয়ে ফিরলে সবাই তাকে গান গাইতে চেপে ধরতেন।
আব্দুস সামাদ আজাদের সেই কিশোর কর্মী বাহিনীতে ছিলাম মূলত: আমরা চারজন। এরমধ্যে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈয়দ হাম্মাদুল করিম (আলিকোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা) ও আমার ছোটভাই সুজাত মনসুর (সাবেক ছাত্রনেতা) ছিল ভাল বক্তা। আমার অপর বন্ধু মারুফ চৌধুরী ছিল বৈঠকি কথাবার্তায় দারুণ পটু। আমার ছিল ছবি আঁকার নেশা। হাতের লেখাও ছিল ভাল। তাই আমাকে দেওয়া হয় পোস্টার লেখার দায়িত্ব। আমিও সানন্দে তা গ্রহণ করি।
এক পর্যায়ে আমাদের বাসার একটি কক্ষে আমরা রীতিমতো আওয়ামী লীগের একটি নির্বাচনী কার্যালয় খুলে বসি। প্রতিদিন বিকলে বেলা বসতাম গিয়ে সেই নির্বাচনী কার্যালয়ে। আমি বসতাম পোস্টার লিখতে। অন্যদিকে চলতো বক্তৃতার পর বক্তৃতা, যেন সত্যি সত্যিই কোন জনসভায় দাঁড়িয়ে কেউ বক্তব্য রাখছে। এই ফাঁকে পোস্টার লেখা শেষ হয়ে যেতো। তখন সবাই মিলে তা বড় রাস্তায় লাগাতে যেতাম।
নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে কয়েকদিনের বিরতির পর একদিন বিকেল বেলা হঠাৎ করে আব্দুস সামাদ আজাদ আমাদের বাসায় উপস্থিত। সঙ্গে দুয়েকজন নেতা-কর্মী। তিনি সোজা চলে গেলেন রান্নাঘরে। আম্মা ছিলেন সেখানে। রান্নাঘরে ঢুকেই বাঁশের বেড়ায় ঝুলানো একটি আধি (ছোট আকারের পাটি) নিজের হাতে খুলে নিয়ে মেঝেতে বিছালেন। ধপাস করে বসে পড়লেন সেটার উপর। সারা শরীরে তার ক্লান্তির ছাপ। রোগা রোগা লাগছে। সম্ভবত: বেশ ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাই আম্মাকে তাগিদ দিয়ে বললেন, ‘যা আছে দাওতো।’
আম্মা তাড়াহুড়ো করে তাকে খেতে দিলেন। তিনিও গোগ্রাসে তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া খাবার খেয়ে আবার উঠে দাঁড়ালেন। চলে যাবেন। সাহস করে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি খবর।’ বললাম, ‘আমাদের অফিস দেখে যান’। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিসের অফিস’। জানালাম, ‘আওয়ামী লীগের’। ‘তাই নাকি। তাহলে চলো দেখি, কেমন অফিস বানিয়েছো’-বলেই সামনের দিকে পা বাড়ালেন। এই ফাঁকে আম্মা অনুরোধ জানালেন, ‘চাচাজী, সময় পাইলেওই খাইতে আইবা’। আবারো হাসি। এবারের হাসিতে বুঝি বুঝাতে চাইলেন, ‘মা রে, ইচ্ছে করলেই আসতে পারবো না। সামনে কঠিন পরীক্ষা। এতে জিততে না পারলে সবাই আমরা শেষ হয়ে যাবো। আগে জয়ী হই তারপর এসে পেট ভরে খাবো’।
আমাদের নির্বাচনী কার্যালয়ে ঢুকে বেশকিছু সময় ধরে দেয়াল জুড়ে লাগানো পোস্টারগুলো দেখলেন। পড়লেন। হাসলেন। আদর করলেন তার কিশোর সেনাদেরকে। এরপর বাইরে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, ‘তোমার আমার ঠিকানা…’ বলেই থেমে গেলেন। আমরা বুঝলাম, তিনি এর পরের অংশ আমাদের নিকট থেকে জানতে চাইছেন। কে একজন বলে উঠলো, ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। আব্দুস সামাদ আজাদ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই স্লোগান লেখা পোস্টার কিন্তু তোমাদের অফিসে নেই’। বেশ লজ্জা লাগলো; কিন্তু তিনি আর কিছু বললেন না।
নেতা চলে যাবার পরপরই রঙ-তুলি নিয়ে বসে পড়লাম। অল্পক্ষণের মধ্যেই পোস্টার লেখা হয়ে গেলো, ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’। শুধু পোস্টার লেখা হলো না সেই সাথে স্লোগানটি শেখাও হয়ে গেলো। হয়ে গেলো মুখস্থ; কিন্তু স্লোগানটি যে কত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তখনকার সময়ের জন্যে তা বুঝতে অনেকদিন লেগেছিল।
এই একটি ছোট্ট ঘটনাই জানান দেয়, আব্দুস সামাদ আজাদ কত বড় মাপের এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ‘জয়বাংলা’র পর ‘তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা’র মতো স্লোগানগুলোকে প্রতিটি বাঙালির ঠোঁঠে তুলে দিতে হবে, যাতে তারা তাদের প্রকৃত ঠিকানা খুব সহজেই চিনে নিতে পারে।
(লেখক: সভাপতি সিলেট প্রেসক্লাব। লেখাটি লেখকের ফেইসবুক থেকে নেওয়া)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!