বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই জলমহাল দখল নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় এক জেলে নিহতের ঘটনায় ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের বিচারক মিসবাহ্ উদ্দিন আহমদ এই মামলা গ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, তাঁর ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেলন হোসেন রোখন, আরও দুই ভাই মোবারক হোসেন মাসুদ ও মোবারক হোসেন যতনসহ ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বাদী।
অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্মপাশা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক ধর্মপাশা থানার ওসি দোলোয়ার বলেছেন,‘ বৃহস্পতিবার আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত (বিকাল চার ঘটিকা) আদালতের কোন আদেশ পাইনি।’
মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হচ্ছেন, (যথাক্রমে) মাহাবুব আলম রিপন (৪৫), আ. ছালাম মুন্সি (৪৮), সোহরাব (৪৫), তমিজ উদ্দিন (৫২), খায়রুল (৫০), কাশেম (৫৫), শাহজাহান (৩৫), সোফেল (২৮), জাহাঙ্গীর (৩২), রনি খান (৩৮), সালমান শাহ (৩০), আবু জাহিদ (৫০), জুলহাস (৩২), স¤্রাট (৩৮), সাগর মিয়া (২৮), মনিরুজ্জামান মোহন (৩২), তানিন চৌধুরী (২৪), খোকন (৩৫), সুবল চন্দ্র বর্মণ (৫০), দিগেন্দ বর্মণ (৫০), গিয়াস উদ্দিন (৪২), সাগর বর্মণ (২৮), রিপন বর্মন (৩০), জানু খাঁ (২৫), রতন মিয়া (৫০), সামছুল হক চৌধুরী (৫৫), কবির মিয়া (৫০), স্বপন মিয়া (৫০), বাতেন মিয়া (৪২), তুফাজ্জল (৪০), চান মিয়া (৪৫), রুবেল (২৮), হালিম (২৫), শরীফ (২৮), মানিক(২৫), তানভির হোসেন সাগর (২৬), মোতালিব (৫৫), আব্দুল মোতালিব (৪০), আতাহারুল (৩০), মিয়া খাঁ (৪০), মনো মিয়া (৪০), কালাম (২৬), আনিস (৩২), পিন্টু (৩২), জসিম উদ্দিন (২৭), সোহেল (৩০), জুয়েল (৪০), পিয়াস (২৮), শাহবাজ (৪৮), আমির খাঁ (৪২), সোহেল (৩৫), নয়ন (৪০), মর্ত্তুজ আলী (৪২), জহুর উদ্দিন (৪৫), শাহজাহান মেম্বার (৬৫), বকুল মিয়া (৪৮), মহিউদ্দিন আহম্মেদ কনিক (৩৫), সোনা মিয়া (৫০) ও জায়েদ মিয়া (৫২)।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার বৃহৎ সুনই নদী জলমহাল নিয়ে দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলছিল দুই বছর ধরে। জলমহালের খাজনা পরিশোধ করে দুই পক্ষই মহালের মালিকানা দাবি করে আসছে। সম্প্রতি চন্দন বর্মনের পক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তাঁর ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেলন হোসেন রোকনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছিল।
এই দ্বন্দ্বের জের ধরে ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় জলমহালে পাড়ে থাকা একপক্ষের মাছের খলায় আরেকপক্ষ আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিপক্ষের লোকজন সুনই গ্রামের সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি চন্দন বর্মনের পিতা শ্যামাচরন বর্মণকে গলা করে হত্যা করে। এসময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়। জলমহালে থাকা একপক্ষের স্থাপনা (খলা) পুড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতে শ্যামাচরণ বর্মণের লাশ উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ২৩ জনকে আটক করে পরদিন আদালতে সোপর্দ করে।
এ ঘটনায় ধর্মপাশা গত ৯ জানুয়ারি ৬৩ জনের নামোল্লেখ করে থানায় এজাহার নিয়ে যান চন্দন বর্মণ। পুলিশ তাদের মামলা গ্রহণ করে নি। কিন্তু পরদিন অজ্ঞাতনামা ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর বাদী করে থানায় একটি মামলা (নম্বর-৩, তারিখ ১০.০১.২১) হয়েছে।
নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবি করেছেন, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার জন্য ধর্মপাশা থানা পুলিশ ওই মামলা নিয়েছে।