বিশেষ প্রতিনিধি::
বিএনপির রাজনীতি দিয়ে শুরু না করলেও ৯৬ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অল্পভোটে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে পরাজিত করে জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তৎকালীন জাতীয় পার্টি নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরী। পরবর্তীতে জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপি নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দিকে নজর দেয়। বিএনপিতে যোগদানের পর থেকেই তিনি পারিবারিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও এলাকার গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে দিরাই শাল্লা বিএনপির রাজনীতির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন নাছির উদ্দিন চৌধুরী। এর পর থেকেই এই দুই উপজেলার বিএনপির রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন।
সম্প্রতি দিরাই-শাল্লা নির্বাচনী এলাকার সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেলে এই আসনে উপনির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ক্ষমতাসীন দল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। আরো ৪ জন মনোনয়ন জমা দিলেও ড. জয়া সেনগুপ্তার বিপরিতে অন্যান্য দল থেকে শক্তিশালী কোন প্রার্থী ছিলনা। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর নাছির উদ্দিন চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন রেজুকে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে অন্য তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় মাঠে আ.লীগ প্রার্থীর সঙ্গে একা রয়ে যান মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ধনকুবের রেজু। এই প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সুরঞ্জিত বিরোধী ইমেইজকে কাজে লাগিয়ে তার সমর্থন আদায় করে নেন। ইতোমধ্যে নাছির উদ্দিন চৌধুরী দিরাই-শাল্লার বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য সমমনা দলগুলোকে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজুকে সমর্থন দেন। এরপর থেকেই অচেনা মাহবুব হোসেন রাজনীতির মাঠে চেনা হয়ে উঠেন। প্রচারণায় লোক সমাগম বাড়তে থাকে। তবে নাছির উদ্দিন চৌধুরী কর্তৃক স্বতন্ত্র এই প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেওয়ায় দিরাই-শাল্লা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের একটি অংশ এর প্রতিবাদ করে দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে রেজুর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধালাভের অভিযোগ আনে।
এদিকে বিএনপির উদারমনা একটি মহল জানিয়েছে নাছির উদ্দিন চৌধুরী চাননা দিরাই শাল্লা আসনে বিএনপিমনা কেউ তার প্যারালাল হোক। কিন্তু সম্প্রতি উপনির্বাচনে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী ধনকুবের প্রার্থী রেজুকে সমর্থন দিয়ে পৃথক সমাবেশে তার পক্ষে ভোটপ্রদানের আহ্বান করা আগামীতে নাছির চৌধুরীর জন্য বুমেরাং হতে পারে। রাজনীতির মাঠে অপরিচিত মাহবুব হোসেন এই উপনির্বাচনে সম্মানজনক ভোট পেলে আগামীতে তিনি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। আর এতে সমস্যায় পড়তে পারেন নাছির উদ্দিন চৌধুরী। ভালো ভোট পেলে রেজু এই আসনে বিএনপি থেকে আগামীতে চাইতে পারেন। ভোট ও অর্থ বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি রেজুকে নিয়ে চিন্তা করতে পারে। তাই আখেরে নাছির উদ্দিন চৌধুরীই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দিরাই উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘নাছির উদ্দিন চৌধুরী এত কাচা লোকনা। তিনি সবকিছু ভেবেই রেজুকে সমর্থন দিয়েছেন। ওই নেতা আরো বলেন, শেষ পর্যন্ত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রীর কাছে পরাজিত হবেন রেজু। আর এই পরাজয়ের গ্লানী নিয়ে তিনি বিদেশে চলে যাবেন। এতে নাছির চৌধুরীর কোন ক্ষতি হবেনা। তবে দেশে থাকলে নাছির চৌধুরীর সমস্যা হতে পারে বলে ওই নেতা জানান। তিনি টাকার গরম ও ভোটের হিসেব দেখিয়ে বিএনপিকে প্রভাবিত করতে পারেন।
এ বিষয়ে নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি রেজুকে সমর্থন দেওয়ায় আওয়ামী লীগ অখুশি হয়েছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। গালাগালিও করতেছে। তিনি বলেন, এইসব কারণে মনে হচ্ছেনা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্টু হবে। রেজু সম্মানজনক ভোট পেলে আগামীতে আপনার সমস্যা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে আমার কোন সমস্যা হবেনা। সে দেশে থাকবে কি না এটা তার ব্যাপার। আমরা আওয়ামী লীগ বিরোধী মানুষ তাই সে আমাদের সমর্থন পেয়েছে।