হাওর ডেস্ক ::
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর, অর্জুন ও রবিউল। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এ কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের তদারকিতে ঘাটতি ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। অবশ্য অপর্যাপ্ত সীমানা প্রাচীর ও জনবলের অভাবের কারণেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি সার্বিকভাবে যে চিত্র পেয়েছে, তাতে তদারকির ক্ষেত্রে এ ঘাটতি দেখেছে। এ জন্য কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরও কর্মতৎপর ও দায়িত্বশীল হওয়া এবং ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনসহ ছয় দফা সুপারিশ করেছেন তারা।
চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি সাইফুর ও অর্জুন লস্কর গতকাল শুক্রবার বিকালে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে গণধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর আসামি রবিউল মহানগর হাকিম আদালত-২ এর বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে জবানবন্দিমূলক স্বীকারোক্তি দেন। বিকাল ৩টা থেকে পৃথকভাবে তিনজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টায়।
এর আগে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুরে আদালতে তোলা হয় সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে। দুপুরে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে তাদের আদালত প্রাঙ্গণে হাজির করে শাহপরান থানা পুলিশ।
এর আগে ধর্ষণ মামলায় এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও আসামি অর্জুন লস্কর গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এবং একই দিন বিকালে মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সেদিন তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান।
এদিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন আসামি রাজন আহমদ, আইন উদ্দিন এবং এজাহারভুক্ত আসামি মুহিবুর রহমান রনি, ৩ নম্বর আসামি তারেক ও ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাছুমও রিমান্ডে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই তরুণীকে জোর করে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে বেঁধে রাখা হয়।
এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন : সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার পর কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে গত সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এমসি কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
সূত্র জানায়, কমিটি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় ঘাটতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে ওই কমিটি। তবে কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ করেনি কমিটি। কমিটি বলছে, প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তদন্ত কমিটি আরও যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাসে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাতি স্থাপন ও জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাদের সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়মিত পরিদর্শন করা।