অনলাইন ডেক্স::
মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শহীদদের স্মৃতি চির জাগরুক ও চিরসবুজ চির সবুজ রাখার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ প্রতিহত করতে সারা দেশে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণের ঘোষণা দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুর দুইটায় বঙ্গভবনে ‘গণহত্যা দিবস’ এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সেখানে আড়াইটার দিকে ‘শহীদ স্মৃতি বৃক্ষরোপণ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। জাতীয় গণহত্যা দিবসের এই অনুষ্ঠানে ২৫ জন শহীদের স্মরণে ২৫টি বৃক্ষরোপণ করা হবে।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর দিনটি এবার পালিত হবে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে। গত ২৩ মার্চ মন্ত্রীসভার বৈঠকে এবার থেকেই গণহত্যা দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য শনিবার গণহত্যার প্রথম দিবসে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করবে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে নির্মূল কমিটির নেতারা বলেন, ‘৩০ লাখ বৃক্ষরোপণের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি বৃক্ষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম একাত্তরে নির্মম গণহত্যার কথা সর্বস্তরের পৌঁছে দেবে। এতে ইতিহাস যেমন চির জাগরূক থাকবে তেমনি গণহত্যাবিরোধী জনমতও গঠন হবে। ইতিমধ্যে সারাদেশে এই বৃক্ষরোপণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হুট করেই আমাদের গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস করতে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হাস্যকর হবে। কারণ ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ইতিমধ্যে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে আরেকটি দিবসকে আলাদা করে গণহত্যা দিবস করার সুযোগ নেই। তবে আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কাজ করতে পারি। যেহেতু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বড় একটি সুযোগ এসেছে সেই বিষয়ে আমাদের আরও অনেক কাজ করার সুযোগ আছে।’
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, ‘রুয়ান্ডা, আর্মেনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই গণহত্যা হয়েছে। এ অবস্থায় ৯ ডিসেম্বর পরিবর্তন করে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস করার প্রস্তাব জাতিসংঘে দেওয়া হলে দেখা যাবে বিশ্বের অনেক দেশই তখন তাদের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তৎপর হবে। এ জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানোর আগে পুরো বিষয়টি আমাদের সম্মিলিতভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।’
বিচারপতি শামসুল হুদা মানিক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর পর আমাদেরকে যেসব দেশ স্বীকৃতি দেয়নি তাদের কেউ এই গণহত্যাকে স্বীকার করে না। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিয়ে সেসব দেশকে একটি শক্ত বার্তা সরকার পৌঁছে দিয়েছে।’
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি এলাকায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে শহীদদের ত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা ইতিহাস পৌঁছে দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের বিষয়টি জাগরূক থাকে।’
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পৃথিবীতে যতগুলো গণহত্যা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতমটি হলো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হত্যাযজ্ঞ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এতো জঘন্য হত্যাকাণ্ড হয়নি। আমাদের গণহত্যার এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা জরুরি। এই গণহত্যা বিষয়ে পৃথিবীর ২১ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। সরকারের পাশাপাশি আমাদের এক কোটি প্রবাসী এ দিবসটি পালন করলে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা ছড়িয়ে পড়বে।’
শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘এই বৃক্ষ যত বড় হবে ততই তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা সম্পর্কে জানতে উৎসাহী হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, ডা.নুজহাত চৌধুরী, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী প্রমুখ।