বিশেষ প্রতিনিধি::
পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে খাসিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা বালুতে ভরে গেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের পচাশোল হাওর। ব্যক্তিমালিকানাধীন সেই হাওর থেকে জোরপূর্বক বালু তুলে বিক্রির পাশাপাশি একটি সিন্ডিকেট এখন সেই বিশাল পরিমাণের বালু প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অল্পদামে কিনে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে।
জানা গেছে গত জুন ও জুলাই মাসে সুনামগঞ্জে তিনদফা বন্যা হয়। এই বন্যা ও ঢলে ভারতের খাসিয়া পাহাড় থেকে বালু ও পাথর নেমে আসে তাহিরপুর সীমান্তের উত্তরবড়দল ইউনিয়নের বিভিন্ন নালা দিয়ে। রাজাই ও চানপুর গ্রামের মধ্যবর্তী পচাশোল হাওর এর আগেও বর্ষণে ভরাট হয়ে গেছে বালুতে। এবার আরো বেশি পরিমাণ বালু এসেছে। সেই বালু জোরপূর্বক স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ডাম্পিং করে বিক্রির উদ্যোগ নেয় একটি চক্র। এ বিষয়টি অবগত হয়ে প্রশাসন স্তুপিকৃত বালু হিসেবে উল্লেখ করে এগুলো নিলামের উদ্যোগ নেয় গত ২৮ জুলাই। নিলামে দেখানো হয় এই এলাকাসহ আশপাশের আরো কয়েকটি স্পটে অন্তত ২১ লাখ ঘনফুট বালু রয়েছে। কিন্তু নিলামে স্বচ্ছতা না থাকায় এবং মাল সরানোর সময় সীমা নিলামে না থাকাসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নিলাম স্থগিত করে দেয়। এবার ভিন্ন কৌশল নিয়ে এগোয় বালু-পাথর খেকো সিন্ডিকেট। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কেবল স্তুপিকৃত বালু সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। সম্প্রতি উপজেলার কানুনগো দিয়ে নামকাওয়াস্তে জরিপ করিয়ে বালুর পরিমাণ কমিয়ে মাত্র ৬৯ হাজার ফুট বালু উল্লেখ করে সেগুলো ২০ টাকা ফুট ধরে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন পচাশোল হাওরের বিভিন্ন স্থানে ডাম্পিং করা অন্তত ১০ লাখ ঘনফুট বালু রয়েছে। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে পছাশইল হাওর, আমতৈল, মাহারাম নদীর শাখা, চাঁনপুর, বড়ছড়া, টেকেরঘাট, বুরুঙ্গাছড়া, রজনী লাইন, কলাগাঁও, চারাগাঁও সহ বিভিন্ন সীমান্ত নালা দিয়ে এসব বালু পাথর এসেছে। এই বালু-পাথরসহ সীমান্তের জিরো লাইনের বালু ও পাথর বিক্রির নামে বালু-পাথর সিন্ডিকেটের হাতে এলাকা তুলে দিতে গত ২৮ জুলাই নিলামের তারিখ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। সিন্ডিকেটের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোও কোন গবেষণা না করে একদিনের মধ্যেই সীমান্তের এই বালু-পাথর নিলামের অনুমতি দেয়। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন পরিবেশবিদ ও সুধীজন। সংশ্লিষ্টরা নিলামের মাল অপসারণে সময়সীমা উল্লেখ না করে কৌশলে নির্দিষ্ট এলাকা বালু-পাথর খেকোর হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যাতে তারা বছর ব্যাপী মাল অপসারের নামে স্থায়ীভাবে খনন করে বালু-পাথর আহরণ করতে পারে। এ বিষয়টি অবগত হয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নিলাম স্থগিত করে।
এদিকে এ ঘটনায় আশাহত হওয়ায় বালু-পাথর খেকো সিন্ডিকেট পাথর বাদ দিয়ে কেবল বালু সংগ্রহের কৌশল নেয়। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে লোক দেখানো জরিপ করিয়ে ১০ লাখ ঘনফুট বালুকে মাত্র ৬৯ হাজার ঘনফুট দেখিয়ে সেগুলো ২০ টাকা ফুট দামে কিনে নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়াসহ কয়েকজন এই বালু কিনে নিতে চাচ্ছে। এই বালুগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়েছে তারা। গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সীশান্তের শ্রমিকদের দিয়ে বালু-পাথর সংগ্রহ করিয়ে সেগুলো অল্পদামে কিনে নিয়ে বেশি দামে চালান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বলেন, যাদুকাটা নদীর উপর নির্মিত সেতুতে এই বালুগুলো আমরা দিতে চেয়েছিলাম। আমরাই এগুলো ডাম্পিং করেছিলাম। কিন্তু গ্রুপির কারণে জঠিলতা দেখা দেওয়ায় প্রশাসন এই সম্পদে হস্থক্ষেপ করেছে। আমাদের ডাম্পিংকৃত ৬৯ হাজার ঘনফুট বালু এখন কিনে নিতে চাইছি। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মহোদয়ও ইউএনওকে আমাদের হয়ে বলেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, নিলাম স্থগিত হওয়ার পর আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে করণীয় হিসেবে লিখেছি। এখনো এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাইনি। বালু বা পাথর বিক্রির কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, আমি কাউকে বালু কিনে নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে বলিনি। এ বিষয়টি আমার জানা নেই।