1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় মবসন্ত্রাসে মা ও ছেলে মেয়েকে হত্যার ঘটনায় মামলা, আটক ২ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ: মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিবে সরকার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল: সিন্ডিকেট ভেঙে সেবাকেন্দ্রিক প্রশাসনিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।। ইকবাল কাগজী সিলেটে পাথর কোয়ারি খোলার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি, একাত্মতা প্রকাশ ছিন্নমূল মিনি স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির ধ্রুব এষ পেলেন ব্র্যাক—সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ হাওরে নয়া পানি বাস সংকট সমাধানের জন্য ৮দিনের আল্টিমেটাম সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিএনপি সংবিধান রক্ষার পক্ষে, ছুড়ে ফেলার বিপক্ষে: রুহুল কবির রিজভী সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আতঙ্কে এনবিআর কর্মীরা তারেক রহমান দেশে ফিরে জনগণের দিশারী হয়ে দেখা দিবেন: কামরুল

গ্রন্থীর লেখক সম্মেলন ২০২০।। আবিদ ফায়সাল

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০, ১১.৪১ এএম
  • ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে

তিন দশকে গ্রন্থী : লেখক সম্মেলন ২০২০, ১৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিনি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো, অবিদ্যার সহযোগে। প্রায় ৭২ জন কবি-লেখক ও ছোটোকাগজ সম্পাদকের উপস্থিতি এবং শতাধিক সাহিত্যানুরাগীর অংশগ্রহণ আরও একবার প্রমাণ করলো শিল্প-সাহিত্যের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। এই লেখক সম্মেলনে অনেকেই কথা বলেন আড্ডার মেজাজে, কিন্তু কারও বক্তব্যে ক্রোধ বা একদেশদর্শিতা প্রকাশ পায়নি। এখানে এসেও যেন তাঁরা শিল্পের সম্ভ্রম মান্য করেছেন। সকালে সকলে যেমন ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে হলে প্রবেশ করেছিলেন, সন্ধ্যায়ও উজ্জ্বল মুখ নিয়ে ফিরেন আপন নিলয়ে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালক কবি জফির সেতু শুরুতেই মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সকলকে সাদর সম্ভাষণ জানান। উদবোধক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদউদ্দিন আহমদ গ্রন্থীর সাফল্য কামনা করেন। তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন গ্রন্থী সম্পাদক শামীম শাহান। আর শাহানকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ডক্টর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। উদবোধকের স্বাগতভাষণের পর অতিথিবৃন্দ গ্রন্থীর পঞ্চম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন। এর সূত্রধরে গ্রন্থীর লেখকদের অভিজ্ঞতা-উন্মোচনও শুরু হয়।
প্রথম অধিবেশন সঞ্চালক মাসুদ পারভেজ। মডারেটর আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। সুমনকুমার দাশ গ্রন্থীর ভূমিকা তুলে ধরেন। ছোটোকাগজ লেখকের কর্মশালা উল্লেখ করেন মিহিরকান্তি চৌধুরী। তিনি গ্রন্থী পুরস্কার প্রণয়ন করার গুরুত্ব আরোপ করেন। একইসঙ্গে শাবিপ্রবিকে সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রভূমি গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। গ্রন্থীই প্রথম মণিপুরি সাহিত্যকে প্রকাশের সুযোগ করে দেয়, বলেন কবি এ কে শেরাম। একজন সাহিত্য আগ্রহী হিশেবে শামীম শাহান কীর্তিস্থায়ী। নিজে না-বললেও সহলেখক অন্যদের কথায় উঠে আসে। তিনি বলেন, অসীমের সন্ধানে নামে প্রথম একটি কাগজ বের করেন। পরে এরই অন্যনাম গ্রন্থী। যা এখন দেশের বাইরেও সম্মানিত, আর এর জন্য সঙ্গীরাই কৃতিত্বের দাবিদার। শাহান তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলেন। পুরস্কার প্রণয়নের কথাও বলেন।
গ্রন্থীর নেপথ্যকথা নিয়ে বলেন কবি মোস্তাক আহমাদ দীন। এটি যে, একটা স্পর্ধা নিয়ে বের হয়, অগ্রজদের অস্বীকার করার আর তাঁদের তীর্যক সমালোচনা করার ভিন্ন প্ল্যাটফরম এবং আত্ম-অন্বেষণ তা তিনি অকপটে উচ্চারণ করেন।
সঞ্চালক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ সকলের কথার সূত্র ধরে এই পর্বকে রসসিক্ত করে তোলেন। তিনি বলেন, সাহিত্য সমাজদেহে বৃক্ষস্বরূপ। আমাদের পুষ্টিদান করে। আর সাহিত্য সৃষ্টির জন্য প্ররণোদনা এবং স্বীকৃতি হতে পারে লেখক পুরস্কার।

দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় ১১টা ৪০ মিনিটে। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন নিঃসর্গ সম্পাদক সরকার আশরাফ। বিষয় : ছোটোকাগজ, এই সময়ে। লেখক তাজুল মোহাম্মদ আলোচকদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন। প্রারম্ভিক কথা বলেন কবি হাফিজ রশিদ খান। কবি জিললুর রহমানকে নয়ের দশকের ছোটোকাগজ নিয়ে জিজ্ঞাস করা হলে বললেন, চলমান বিন্যাসকে ভেঙে ফেলে, এর থেকে বের হয়ে বিকল্প চিন্তা করাই ছিল মূল কাজ। মাহবুবুল হক বলেন, লিটন ম্যাগাজিন মানেই এক‌টি ইশতেহার। এবং এর আলোকে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্মেলক কাজ। আর কবি বা গোষ্ঠী এই ইশতেহার লালন করে চলেন। কিন্তু এই আন্দোলন একসময়ে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। নানা বিবাদে পৌঁছয়। তখন আর ইশতেহার মুখ্য হয়ে ওঠে না। চেতনার জায়গাটি থেকে তাঁরা সরে আসেন।

মডারেটর কথা পালটান। বলেন, ছোটোকাগজ আসলে শাব্দিক অর্থে ছোটো না, চেতনা ও আকারে বড়ো হতো পারে। দার্শনিক ভিত্তি মজবুত করাটা জরুরি। এবং এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত । সৈকত হাবিব বলেন, বৃহতের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্রের লড়াই। বাজারের সংজ্ঞা এবং ক্ষমতা ও চিন্তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার মধ্যে আন্দোলন জারি রাখা। ফাঁক এবং ফাঁদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা। নিজের জায়গা নির্ধারণ করা। চিন্তার নতুনতর মাত্রা তৈরি করা বড়ো কথা। শামীম রেজা তাঁর বড়োকাগজে আসার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।
চলমান প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছোটোকাগজ প্রাগ্রসর ভূমিকা রাখবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন কবি হাফিজ রশিদ খান। সঞ্চালক ছোটোকাগজকে ক্ষমতা ও অক্ষমতার প্রতীক বলে সকলকে ধন্যবাদ জানান।

চা-কফির বিরতি শেষে শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ। মডারেটর হোসনে আরা কামালী বলেন, যে কথা গদ্যে বলবার নয়, তা কবিতায় স্পর্শ করে। স্পর্শ করে মানুষের অন্তরকে। এমন কিছু কবিতা এখন আমরা শুনবো কবিকণ্ঠে। তাঁর ডাকে একে একে কবিতা পাঠ করেন মনিরুল মনির, ফজলুররহমান বাবুল, পাঁশু প্রাপণ, পুলিন রায়, সৌমিত্র দেব ও আবিদ ফায়সাল। কবি হোসনে আরা কামালীও তাঁর কবিতা পাঠ করেন।

তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয় ১২টা ২৫ মিনিটে। বিষয় : একালের সাহিত্য : গতি ও প্রকৃতি। মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার। প্রথমে কবির হুমায়ুন একটা প্রস্তাব করেন। বলেন কীভাবে লিখব, কৌশল কী? তা নিতে আলোচনা হতে পারে। কারণ আমরা আতঙ্কিত। গতির বাধা হিশেবে আছে কালো আইন, বিভিন্ন ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা অন্ধকার নিয়েও শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। প্রশান্ত মৃধা বলেন, শিল্পোত্তীর্ণ লেখা মানে রাজনৈতিক। রাষ্ট্র কল্যাণমুখী হলেও সুখকর কিছু করতে পারবে না। কথা হলো, আমি যে সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তা কি প্রকাশ করতে পারছি? যে সমাজকে যাপন করছি, আমাদের অগ্রজেরা বলতে কি পেরেছেন?
সাহিত্যে সময়ের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। জাকির তালুকদার প্রশ্ন রাখেন, বাংলা সাহিত্যে এমন কেউ আছেন কি? উত্তরে স্বকৃত নোমান বলেন, মুখবন্ধ করার প্রবণতা এর অন্তরায়। এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে লেখাটাই ইতিহাস। আমাদের লড়াই তো শুধু রাষ্ট্রের বা সমাজের বিরুদ্ধে নয়।
সালমা বাণী বলেন, নিজের মাটি ত্যাগ না করলে, এর পবিত্রতা এবং কষ্ট উপলব্ধি করা যায় না। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বপরিস্থিতিও একই। বলা যায় কোথাও লেখকের স্বাধীনতা নেই। লেখকেরা কোথাও নিরাপদ নন।
আহমাদ মোস্তফা কামাল বললেন, এই মঞ্চে আমরা প্রত্যেকে মহা ব্যর্থ। এই ব্যর্থ মানুষদের কথা শুনতে সকলে এসেছেন। আর এজন্য আপনাদের সম্মান জানাতে আমি দাঁড়িয়েছি। বলুন আমরা কী করতে পারি? পাঁচের দশকে যাঁরা ডিম, মাংসের পরিবর্তে আন্ডা গোস্তত লেখেন না, তাঁরাও সংগ্রাম করেছেন। লেখকের সংগ্রাম তো চলমান। কথা হলো যে সময়ে লিখছেন, সে সময়ের কথা লিখতে হবে এমন কথা নয়। দেখার বিষয় হলো, লেখাটা শিল্পিত মানের কি না? যাঁরা জানতে চান, তাঁরা জানেন অল্প লেখকেরা শিল্পিত মানের এবং অবরুদ্ধ সময়ে সাহসী কাজটা করছেন।
শামীম রেজা বলেন, কেউ নির্ধারণ করে দেয় না কী লিখবেন? লেখকই নির্ধারণ করবেন, কখন মুখবুজে মুক্তো ফলাবেন। রক্তাক্ত মন নিয়েই তো লিখছেন। সমকালীন, মহাকালীন চিন্তা করে কেউ লিখেন না। পরে এসে কেউ বলবেন, এই সময়টা রুদ্ধ, এই সময়টা অন্ধকার। আর শেষ বিচারে লেখক একান্তই নিজের।
প্রশান্ত মৃধা বলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বড়ো লেখক, কিন্তু না খেয়ে মারা যান। মানে তাঁর সমকালে কজনই তাঁর বই পড়েছেন? তাঁরা পরম্পরা তৈরি করেগেছেন। তাঁদের দায়িত্ব সমকালে পাঠক তৈরি করা নয়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ নিয়ে আগুনপাখি ২০০৬ সালে লেখেন কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক। অর্থাৎ সমকালের ঘটনা পরেই লেখা হয়। জাকির তালুকদার বলেন, একটা ভয়ের চাদরে আচ্ছাদিত করা হয়েছে। এই ভয়ের ভেতরেও কেউ কেউ লেখেন। লেখা চলমান থাকুক, বহমান থাকুক।

মধ্যাহ্নভোজন শেষে শুরু হয় কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ-২ পর্ব। মডারটর জফির সেতু। কবিতা পাঠ করেন প্রণবকান্তি দেব,আলতাফ শাহনেওয়াজ, জাকির জাফরান, শাহেদ কায়েস, মোহাম্মদ হোসাইন ও হাফিজ রশিদ খান। আলতাফের কবিতাটি দীর্ঘ। সঞ্চালক বললেন, কবিদের হয়ে মধুর প্রতিশোধ নিলেন তিনি। এর আগে ছিল গদ্যসাহিত্যের আলোচনা। তিনি বলেন, এই কবিদের কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতার একটা বিবর্তন উপলব্ধি করা গেল।
এর পর কবিতা পড়তে ডাকা হয় আরও দশজন কবিকে। কবিতা পাঠ করেন, আহমদ জুনায়েদ, মুহম্মদ এমদাদ, কবির হুমায়ুন, মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, জিললুর রহমান, শামীম রেজা, জালাল কবির, সৈয়দা তুহিন চৌধুরী, ওয়াহিদ রোকন, মনিরুল ইসলাম। জফির সেতুও তাঁর নির্বাচিত কবিতা গ্রন্থ থেকে একটি কবির পাঠ করেন।
কবিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন মিহিরকান্তি চৌধুরী , লিয়াকত শাহ ফরিদী, মুহাম্মদ বিলালউদ্দিন ও মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ-৩-এ মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন মোস্তাক আহমাদ দীন। কবিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন এনামুল কবির। স্বরচিত কবিতায় কণ্ঠদান করেন শামীম রফিক, এখলাসুর রাহমান, সারওয়ার চৌধুরী, শেখ লুৎফুর, সাকিরা পারভীন। পারভীন গান গেয়েও শোনান। এর পর কবিতা পাঠ করেন শামস শামীম, সুফি সুফিয়ান, সৈকত হাবিব, খালেদ উদ-দীন, বিজিৎ দেব, আলফ্রেড আমেন, আলমগীর শাহরিয়ার, মোজাহিদ আহমদ,মাসুদ পারভেজ,আবুল ফতেহ ফাত্তাহ। একে একে কবিদের পড়া শেষ হলে অনুরোধ আসে, সঞ্চালককেও কবিতা পড়তে হবে। মোস্তাক আহমাদ দীন বললেন, আমাকে নিজেই ডেকে নিয়ে আসতে হলো। তিনিও কবিতা পাঠ করলেন।
কথা শুরু হয়েছিল কবি জফির সেতুর মধ্যে দিয়ে আর শেষ হলো গ্রন্থী সম্পাদক কবি শামীম শাহানের কৃতাঞ্জলির মধ্য দিয়ে। মাঝখানে সমাজসংসার মিথ্যে করে দিয়ে আমরা সারাটা দিন সাহিত্যের আড্ডায় মজে, লেখকদের শরীর-মন ছুঁয়ে থাকলাম। আর কবি ও লেখকদের এক মঞ্চে উপস্থিত করার অভূতপূর্ব সুযোগটি করে দেয় গ্রন্থী। এই সম্মেলন ইতিহাস হয়ে থাকবে।
লেখক: কবি ও গদ্যকার।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!