বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে সম্প্রতি আনফিট গাড়ি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই রোগিদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিচ্ছে এক শ্রেণির লোভী ব্যবসায়ী। এতে রোগিদের ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্বলতার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়াও নিচ্ছে তারা। ভুক্তভোগীরা এম্বুলেন্স নামধারী লক্করঝক্কর গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে সদর হাসপাতালের সামনে গত কয়েক বছর ধরে আনফিট মাইক্রোবাস গুলোকে এম্বুলেন্সে রূপ দিয়ে সেবা দিচ্ছে এক শ্রেণির লোভী ব্যবসায়ী। তারা হাসপাতাল চত্বরে আড়াআড়ি করে রাখে এম্বুলেন্সগুলো। এতে জঠিল রোগীরা হাসপাতালে আসলে তাদের কারণে গাড়ি নিয়ে ডুকতে সমস্যায় পড়েন। এম্বুলেন্স চালকরা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে এম্বুলেন্স ফেলে রেখে জরুরি বিভাগের ভেতরে বাইরে বসে থাকে। রোগি একটু জটিল হলেই বাইরে ট্রান্সফার করার সুযোগ নিয়ে এম্বুলেন্স চালকরা রোগিদের স্বজনদের দুর্বলতার সুযোগে তাদের যাত্রী করে। অনেক সময় ভাড়া না নির্ধারণ করায় নামিয়ে দেবার সময় ঝগড়া শুরু করে তারা। এতে রোগিদের স্বজনরা বিলম্ব হলে রোগির ক্ষতি হবে ভেবে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা এম্বুলেন্স চালকদের দিতে হয়। অনেক সময় সিলেট শহরের একটি ক্লিনিকে গিয়ে সিট বা চিকিৎসা অবকাঠামো না পেলে শহরের অন্য হাসপাতালে নিতে হয়। এ কারণে টাওন ট্রিপ ধরে তাদেরকে ৬০০-৮০০ টাকা বেশি দিতে বাধ্য করে এম্বুলেন্স চালকরা।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের সামনের চত্বরে ৬টি এম্বুলেন্স আড়াআড়িভাবে রাখা। সেবা, স্মৃতি, তোহাসহ বিভিন্ন নামের এম্বুলেন্স গুলো রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। একজন চালকও গাড়িতে নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল চালকদের সবাই জরুরি বিভাগের ভেতরে ও সামনে রোগির অপেক্ষা করছে। জানালা দিয়ে দেখা গেল একটি গাড়িতেও এম্বুলেন্স উপযোগী কোন অবকাঠামো নেই।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে এম্বুলেন্স সুবিদা পেতে রেজিস্ট্রেটশন এম্বুলেন্স নামেই রেজিস্ট্রেশন নেবার কথা। কিন্তু সুনামগঞ্জে বেসরকারি পর্যায়ে এম্বুলন্সে নামধারী গাড়ির সংশ্লিষ্টদের কেউই এখন পর্যন্ত বিআরটিএ থেকে এই রেজিস্ট্রেশন নেয়নি। আনফিট গাড়ি গুলোকে রঙচঙ করে কেবল এম্বুলন্সে নাম লিখেই তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতারণার মাধ্যমে। একটি এম্বুলেন্স এখ ন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন নেয়নি বলে বিআরএ জানায়। জানা গেছে সম্প্রতি একটি গাড়ি এম্বুলেন্স হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেবার জন্য বিআরটিএ-তে আবেদন করেছিল। সংশ্লিষ্টরা এম্বুলেন্সের অবকাঠামো না থাকায় রেজিস্ট্রেশন দেয়নি। সূত্র জানায় এম্বুলেন্স হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেতে হলেম অক্সিজেন, সাকার মেশিন, স্প্রিং সিস্টেম সিট এবং এসি থাকা বাধ্যতামূলক। এর কোনটিই সুনামগঞ্জে চলা এম্বুলেন্সগুলোর নেই। লক্করক্কর আনফিট গাড়িতে এম্বুলেন্স নামে রোগিদের স্বজনদের পকেট কেটে টাকা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।
সাইদুল নামের এক রোগির স্বজন বলেন, কিছু দিন আগে তার সন্তানকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সিলেটে রেফার্ড করেন। তখন এম্বুলেন্সের এক চালক জরুরি বিভাগে ছিল। সে অফার করে তার গাড়িতে যাওয়ার জন্য। আমি দ্রুত ওই গাড়িতে ওঠে পড়ি। গাড়িতে ওঠে দেখি সিট ভাঙ্গা, নোংড়া, অক্সিজেন মেশিন নেই। দ্রুততার জন্য আমরা রাগিব রাবেয়ায় যাই প্রথমে। সেখানে ওই রোগের ডাক্তার ওইদিন না থাকায় অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলে আবারও ওই এম্বুলেন্সে শহরের অন্য একটি মেডিকেল কলেজে যাই। সেখানে ভর্তির পর ড্রাইভার ২৫ শ টাকা ভাড়ার নির্ধারণ করে টাওন ট্রিপ ধরে আরো ৮০০ টাকা দাবি করে। এ নিয়ে কথা বললে খারাপ আচরণ করে। পরে বাধ্য হইে তার চাহিদার টাকা দিতে হয়।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক রাসেল আহমদ বলেন, আমার জানা মতে সুনামগঞ্জে এম্বুলেন্স হিসেবে বেসরকারিভাবে কেউ রেজিস্ট্রেশন নেয়নি। সম্প্রতি একজন ব্যক্তি এম্বুলেন্সের লাইসেন্স নিতে এসেছিলেন। গাড়িতে এম্বুলেন্স উপযোগী কোন অবকাঠামো না থাকায় আমরা লাইসেন্স দেইনি। তিনি বলেন, আমাদের কর্তৃপক্ষ রেজিস্ট্রেশন বিহীন এম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে।