হাওর ডেস্ক ::
আজ নতুন বছরের প্রথম দিন।স্বাগত ২০১৯। ২০১৮ সালের শেষ দিকে ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই আমেজ ধারণ করে নতুন বছরের প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনকে ঘিরেই উত্তর দেন সমাজ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সরকারকে এবার দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সহনশীল বাংলাদেশ গড়ায় মনোযোগী হতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি মানবাধিকার উন্নয়নের সূচক নিয়েও কাজ করার অঙ্গীকারের প্রতি গুরুত্ব দেন সংশ্লিষ্টরা।আরেকটি নতুন বছর মানে নতুন করে শুরুর সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে যেন এসেছে ২০১৯। নববর্ষ মানে নতুন স্বপ্ন বোনা। বিদায়ী বছরের শেষ দিনের রাত জিরো আওয়ারে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সব প্রান্তের মানুষ নানা আয়োজনে ও উৎসবের আমেজে বরণ করছে ইংরেজি নতুন বছর ২০১৯ সালকে। পুরনোকে বিদায় আর নতুনকে স্বাগত জানাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানেই আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠান।পুরনো যা কিছু, তাকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আবাহনের যে সামর্থ্য— বাংলাদেশ বারবারই তা দেখিয়েছে। গত বছর জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং সে অনুযায়ী কাজও হয়েছে। সেই পরম্পরাতেই সদ্য নির্বাচিত সরকারের সামনে যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছেন সমাজ বিশ্লেষকরা, তার মধ্যে এগিয়ে আছে— দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া।একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন বছরে স্বাভাবিকভাবে যে বিজয় অর্জন করেছি, সেই বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পালন করবে এই প্রত্যাশা। এখন যেহেতু কার্যকর বিরোধী দল থাকলো না, আওয়ামী লীগকে সরকার ও বিরোধীদল উভয় দিক দেখতে হবে।’ নাগরিক সমাজের দায়িত্ব সরকারকে ঠিক পথে রাখা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে সংযত আচরণ করতে বলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। সেই সংযমটা সর্বক্ষেত্রে দেখাতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও সহনশীলতা ও সংযমের প্রতিফলন থাকতে হবে। দুর্নীতি-সন্ত্রাসসহ যে চ্যালেঞ্জগুলো বিগত বছরগুলোতে সামনে এসেছে, সেগুলোতে মনোযোগী হয়ে মৌলবাদ, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদমুক্ত একটি সমাজ চাইবো। অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্বাভাবিক নিয়মে হবে, তার সঙ্গে মানবাধিকারের যে সূচকগুলোতে অগ্রগতি হওয়া উচিত— সেগুলো প্রত্যাশার জায়গায় রয়েছে। ধর্ম-বর্ণ- জাতিসত্তার ঊর্ধে উঠে আমরা মানুষ, এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক।’সহনশীল একটা পরিবেশ তৈরি হোক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি কাবেরী গায়েন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সব মানুষ খুব উত্তেজিত। কী করছি না করছি— কিছু ভাবছি না। আমাদের এবারে নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তায় বসা দরকার। কী করছি, কেন করছি, কী চাই, সেই প্রশ্ন নিজেকে করতে হবে। বিরুদ্ধ মত ও স্বপক্ষের মত— সেসব নিয়ে যেন গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেন বহুমতকে একটুখানি জায়গা দিতে পারি। শুধু যে রাজনীতিতে তা না— রাজনীতি, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্যক্তিগত জীবন সবখানে। অপছন্দ হলেও যেন তার সঙ্গে চলতে পারি, এমন জায়গা নতুন করে তৈরি করতে হবে।’আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বাংলা ট্রিবিউনকে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘সত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে যেমন ভোট দিয়েছিল, এবারেও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না— সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ভোট দিয়েছে। এবার কাজ হলো সরকারি দলের মধ্যে আত্মশুদ্ধিকরণের অভিযান পরিচালনা করা, যার মধ্যদিয়ে দলটির নেতৃত্ব আরও গণমুখী হবে। দুর্নীতি-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতাকে নির্মূলে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সামনে এগুতে হবে। যে অঙ্গীকার ইশতেহারে দিয়েছে তারা, আগামী পাঁচ বছরে সেসব বাস্তবায়ন করা হবে এবং সুশাসনের জায়গায় অগ্রসর হবে— জনমনে এটাই প্রত্যাশা।’