হাওর ডেস্ক ::
মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো প্রটোকল পাবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইসিতে কর্মব্যস্ততার মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে কমিশনের যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “মন্ত্রী-এমপিরা প্রটোকল পাবে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়ার সময় তারা প্রটোকল পাবেন না। যদি তারা নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রটোকল ব্যবহার করেন, তবে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংসদ বহাল ও দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকায় প্রচারে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলে আসার মধ্যে ইসির এই নির্দেশনা এল।
মঙ্গলবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এমপি-মন্ত্রীদের প্রটোকলের বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, বর্তমান সাংসদরা প্রার্থী হলে প্রটোকল নয়, নিরাপত্তা পাবেন; আর ভোটের কাজ ছাড়া অন্যান্য সরকারি কাজে প্রটোকল পাবেন তারা।
ইসি বলছে, প্রচার কাজে কোনো সরকারি সুবিধা নেওয়া যাবে না। তবে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা প্রসঙ্গটি এর সঙ্গে যুক্ত নয়।
বুধবারের মধ্যে প্রচার সামগ্রী অপসারণ
আসাদুজ্জামান জানান, মার্কেট, রাস্তাঘাট, যানবাহন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাদের নামে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনসহ প্রচার সামগ্রী রয়েছে, তাদেরকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে নিজ খরচে এসব তুলে ফেলতে হবে।
এছাড়া যেসব ব্যক্তি বা যৌথ মালিকানাধীন ভবন, প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, যানবাহন ও স্থাপনায় প্রচার সামগ্রী রয়েছে সংশ্লিষ্ট মালিককে সেসব প্রচার সামগ্রী স্ব স্ব উদ্যেগ ও নিজ খরচে অপসারণ করতে হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এগুলো অপসারণ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আসাদুজ্জামান জানান।
ইসি ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের আগে ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের প্রচারে নামতে পারবেন প্রার্থীরা।
ইভিএমের কেন্দ্রে সেনাবাহিনী
একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে শহরাঞ্চলে কিছু কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে বলে তফসিল ঘোষণার সময়ই জানিয়েছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
ওই সব কেন্দ্র পরিচালনায় কারিগরি সহায়তা দিতে সেনাবাহিনী নিয়োজিত রাখা হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ইভিএমের যেসব কেন্দ্রে সেনাবাহিনী নিযুক্ত করা হবে, তা আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে নয়; ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো (অপারেট করা, টেকনিক্যাল সাপোর্ট) তারা দেবে। ওই বিষয়ে দক্ষ বলেই তাদের রাখা হবে।”
ইসির যুগ্ম সচিব ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক আবদুল বাতেন জানান, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। এ ধারাবাহিকতায় কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করতে সশস্ত্র বাহিনীর ২৭৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রত্যেক ঘাঁটি, অঞ্চল ও ডিভিশন থেকে কর্মকর্তা, জেসিও ও অন্যান্য পদবির সামরিক সদস্যদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে প্রশিক্ষণ সূচি নির্ধারণ করবে ইসি।
সংখ্যা সুনির্দিষ্ট না করে রফিকুল বলেন, ‘যথাসম্ভব কম’ সংখ্যক কেন্দ্রে ইভিএমের ভোটগ্রহণের চেষ্টা হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পক্ষে থাকলেও ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করে আসছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।
নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয় বলে জানান ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান।
৩০০ আসনের জন্য ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার দায়িত্ব পালন করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রায় ৬০০ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দেশের সব উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা রয়েছেন ভোটের দায়িত্বে। এসব কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে নির্বাচনী সামগ্রী রয়েছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনী সামগ্রী মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচনী অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রয়েছে। এখন থেকে সব ধরনের মালামাল পরিবহন ও কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে।”
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
নির্বাচনপূর্ব নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হল- নির্বাচনী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড প্রস্তুতকরণ।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা
সকালের বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮, আচরণ বিধিমালা, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিধিমালা ২০১১, নির্বাচন কর্মকর্তা আইন ১৯৯১, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য রিটানিং কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান।
প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ও সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী, নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা ও রিটার্ন দাখিল, ৮টি তথ্য সম্বলিত হলফনামা ও ব্যক্তিগত তথ্যাদি ভোটারদের জন্য প্রচার করা, মনোনয়নপত্র গ্রহণ, বাছাই, দাখিল, সিদ্ধান্ত লিখন, প্রার্থিতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তালিকা নিয়ে আলোচনা করেন নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান।
পর্যবেক্ষক নিয়োগ, কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ, গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০১০ নিয়ে আলোচনা করেন কমিশনের যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।
কমিশনের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. সেলিম মিয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির গঠন ও দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
এতে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, বাকি দুজন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার।