অনলাইন ডেস্ক ::
বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা করছেন চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তখন প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ভারত ইতিমধ্যেই অর্থবছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করেছে। বাংলাদেশ যদি এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে তাহলে ভারতের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি চলে যাবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থনীতির উন্নয়নের চাকাগুলো সচল থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। অবশ্য তাদের অর্থনীতির আকারের কাছাকাছি যেতে বাংলাদেশকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
অন্যদিকে ভারতে চলতি অর্থবছরে জিডিপির লক্ষমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ভারত লক্ষমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত অর্থবছরগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে ভারতের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি থাকে। কিন্তু বছর শেষে এসে সেই ধারা হারিয়ে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকা- উল্টো। এখানে অর্থবছরের প্রথম দিকে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হলেও বছর শেষে অনেক বেড়ে যায়। সেই হিসেবে এই বছরই ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ এমন আশা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই বাড়ছে। ২০২১ সাল নাগাদ এর প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে পৌঁছাতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার বেশিরভাগ চাকা এখন সচল। অনেক মেগা প্রজেক্ট চলছে। আবার এদেশের অর্থনীতির আকারও অনেক ছোট। তবে একটা পর্যায়ে এসে প্রবৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতা ধাক্কা খাবে। তখন সতর্কতার সাথে সঠিক পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। যেমন করছে চীন। তারা এখনো তাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে ধরে রেখেছে।
ভারতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের অর্থনীতির আকার অনেক বড়। তাই প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। এর সাথে কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যাও রয়েছে। তবে ১০ বছর আগে তাদের সাথে আমাদের যে পার্থক্য ছিল, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে সেটা দূর হয়ে এখন প্রতিযোগিতা করছে। সবগুলো মন্ত্রণালয় ঠিকভাবে কাজ করতে পারলে এদেশের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়তো।
বিগত তিন বছরের দুই দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের তুলনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ অন্যদিকে ভারতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখলেও ভারতের পালে ভাটা লাগে। আলোচ্য অর্থবছরে ভারত যেখানে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সেখানে বাংলাদেশ অর্জন করে রেকর্ড ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
দুই দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় দেখা যায়, ভারত সরকার ২০২২ সাল নাগাদ তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উক্ত সময়ে তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা ৯ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। তবে আইএমএফের হিসেব বলছে, ২০২২ সাল নাগাদ ভারতের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে থাকবে।