বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সুনামগঞ্জের পাদদেশে অবস্থিত মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় অবস্থার আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খুলে জরুরি ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা শহরের বেশিরভাগ এলাকাই নিমজ্জিত হয়েছে। পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন বাসা, বাড়ি, সরকারি অফিস ও বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। শহরের প্রায় ৫ শতাধিক বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে বন্যার্তদের স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্যাবিধি মেনে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন। তবে করোনা মহামারির মধ্যে বন্যা অবস্থার আরো অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে রবিবার বিকেল ৩টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭.৮০ অতিক্রম করে বিপৎসীমার ৮.৩৫ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৫৫ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সীমান্ত নদী যাদুকাটার পানিও বিপৎসীমার উপর প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য সীমান্ত নদ নদীর পানিও বাড়ছে। পাউবো আরো জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ২১৩ মি.মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই সময়ে চেরাপুঞ্জিতে হয়েছে ৫১২ মি.মিটার বৃষ্টি। উজানের এই পানি ভাটিতে এসে চাপ তৈরি করায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পাউবো।
অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের কাজীর পয়েন্ট, ষোলঘর, সাহেববাড়ি, পশ্চিম বাজার, মধ্যবাজার, তেঘরিয়া, উকিলপাড়া, আরপিননগর, জামাইপাড়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, হাজীপাড়া, নতুনপাড়া, গড়াপাড়া, জামাইপাড়া, কালিবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়ে গেছে।
ওবিবার পৌর শহরের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলায়ও আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলার ১৬৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার ১৪৩ জন বন্যার্ত লোক আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যান্য আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত রয়েছে।
পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, জামালগঞ্জ-মদনপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ সাচনা সড়ক, দোয়ারা সুনামগঞ্জসড়ক সহ বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তাছাড়া নি¤œাঞ্চলেও বন্যার পানির চাপ তৈরি হওয়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, দুপুরে সুরমার পানি কিছুটা কমলেও নি¤œাঞ্চলে চাপ তৈরি করছে। তাছাড়া মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৭২ মি.মিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেই পানি ভাটির জনপদ হিসেবে এই অঞ্চলে এসে চাপ তৈরি করবে। এতে অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা জরুরি সভা করে ৪১০ মে.টন চাল ও ২৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।