বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান সড়ক লাগোয়া দুই দিকের পানিনিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ খাল ভরাট ও ভরাট করে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি ডুকে পরছে। ১ জুন খোদ সড়ক বিভাগের সার্ভেয়ারের সরকারি বাসাতেই নিষ্কাশন পথ বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এছাড়াও সড়ক লাগোয়া আশপাশের অনেক বাসাবাড়ি ও রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরির হিড়িক পড়লেও সড়ক বিভাগ রহস্যজনক কারণে বাধা দিচ্ছেনা। ফলে কেউ নক্সা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট না করায় পানিনিষ্কাশনে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগের ডাক বাংলো থেকেই দুই দিকে রাস্তাসহ কর্তৃপক্ষের দেড়শ থেকে দুইশ ফিট জায়গা রয়েছে। সড়কের স্লোব থেকে দুই দিকেই রয়েছে খাল। এই খালগুলো আরপিননগরের অংশ বিশেষ, হাজিপাড়া, নতুন হাজিপাড়া, নতুনপাড়া এবং পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার পানিনিষ্কাশনে কাজ করে। পিটিআই ড্রেন দিয়ে নতুনপাড়া, পুরাতন বাসস্ট্যা- এলাকা আরপিন নগরের একটি অংশের পানিও নিষ্কাশিত হয়। গত বছর এই খালের পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় পিটিআই ভবন, পরীক্ষণ বিদ্যালয়, সমবায় অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কয়েকদিন ওই প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় পানি ছিল। এতে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি হয়। সংশ্লিষ্টরা তখন জেলা প্রশাসকের প্রবেশ পথের সেতুর নিচের অংশ ভেঙ্গে বড় করে নিষ্কাশনের পথ প্রশস্থ করে। কিন্তু পাশেই জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক সাইফুল্লাহ জুনেদ সড়ক বিভাগের জায়গা ভরাট করে ব্যবসায়ী কাজে ব্যবহার করছেন। তিনি সড়ক বিভাগের নির্দিষ্ট ডিজাইন অনুযায়ী পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি। তাই জলাবদ্ধতাও স্থায়ী হয়েছে। এর পাশেই সার্কিট হাউসের দক্ষিণ দিকেও সম্প্রতি খাল ভরাট করে ব্যবসায়ী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাগরিকরা জানান, বৃষ্টির পানি এই খাল হয়ে ঝাউয়ার হাওর ও এলজিইডির সেতুর নিচ দিয়ে টিএন্ডটি অফিসের সামনের খাল দিয়ে এক সময় সুরমা নদীতে নিষ্কশিত হতো। ফলে জলাবদ্ধতা ছিলনা।
সম্প্রতি সরকারি সার্কিট হাউসের দক্ষিণ মাথা থেকে সড়ক বিভাগের খাল ভরাট করে রাস্তা তৈরির হিড়িক চলছে। সড়ক বিভাগের নির্দিষ্ট নক্সা অনুযায়ী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে বাসা বাড়ি ও রাস্তায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ১ জুনের বৃষ্টিতে সড়ক বিভাগের সার্ভেয়ারের বাসা জলাবদ্ধতায় ডুবে গিয়েছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, সড়ক বিভাগের খাল দখল ও ভরাটের প্রতিযোগিতা চলছে। সম্প্রতি খাল ভরাট করে পানিনিষ্কাশনের পথ না রেখেই সড়ক করা হচ্ছে। সরকারি নক্সা অনুযায়ী কেউ পানি নিষ্কাশনের পথ না রাখায় কয়েকটি এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, সড়ক বিভাগের খাল ও জায়গা উদ্ধারের জন্য আমি দুই বছর আগে সড়ক বিভাগের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলাম।
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, প্রধান সড়ক লাগোয়া খালগুলো সড়ক বিভাগের মালিকানাধীন। তারা উদ্ধারে আমাদের সহায়তা চাইলে পানিনিষ্কাশনের স্বার্থে সহযোগিতা করব। তাছাড়া বর্ষা মওসুমে পানিনিষ্কাশনের জন্য আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পানিনিষ্কাশনের আধারগুলো উদ্ধারে কাজ করছি।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের সার্ভেয়ার মো. নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের প্রধান সড়ক ঘেঁষা শহরের মধ্যকার খালে সম্প্রতি আমাদের অনুমতি ছাড়াই ভরাট ও রাস্তা তৈরি হচ্ছে। আমরা তাদেরকে মৌখিক বাধা দিয়েছি। রাস্তা করতে হলে আমাদের নক্সা অনুযায়ী পানিনিষ্কাশনের কালভার্ট করতে হয়। কিন্তু কেউ অনুমতি না নিয়েই এসব করছে। তাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি।