স্টাফ রিপোর্টার::
সদর উপজেলার জয়নগর বাজার মঈনুল হক কলেজে জাতীয় শোক দিবস আয়োজনকে কেন্দ্র করে কলেজের ছাত্র তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে বেধড়ক মারধর করেছেন অধ্যক্ষ ও তার সমর্থক ছাত্ররা। মারধর করে গুরুতর আহত করার পর তাদের বিরুদ্ধে কলেজ ক্যাম্পাস ও বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করিয়েছেন। গুরুতর আহত তিন ছাত্র সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাম্মাদ আহমদ, নাহিদ হাসান ও আতিক কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিল। এই বিষয়টি কলেজের অধ্যক্ষ ও জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক মতিউর রহমানের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তাদেরকে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্তৃক শোক দিবসের অনুষ্ঠান না করার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের মনোমালিন্য দেখা দেয়। গতকাল সোমবার ছাত্রলীগ কর্মী আতিককে তার অফিসে ডেকে নিয়ে তার নাকের ছিদ্রে আঙ্গুল ডুকিয়ে বুকে লাতি দিয়ে নিচে ফেলে দেন অধ্যক্ষ। এসময় তার অফিসের সামনে ২০-৩০জন তার অনুগত ছাত্রকে আগ থেকে প্রস্তুত রাখেন তিনি। এ ঘটনা দেখে ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ ও হাম্মাদ এগিয়ে গেলে তাদেরকে গণপিঠুনি দিতে ছাত্রলীগ বিরোধী ছাত্রদের লেলিয়ে দেন অধ্যক্ষ। তিন ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের ঘটনাটি আশপাশের লোকজন প্রত্যক্ষ করে অধ্যক্ষের লেলিয়ে দেওয়া ছাত্রদের কবল থেকে তাদের রক্ষা করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন কলেজের সাধারণ ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে তাদের অনুগত বানিয়ে নিজের স্বার্থে নানা সময়ে ব্যবহার করছেন তিনি। গত বছরও তিনি অনুগতদের দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে শেখ হাসিনার নামে কটুক্তিমূলক স্লোগান দিয়ে মিছিল করিয়েছিলেন। এ ঘটনায় এলাকায় বিচার হলে বিচারে তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন।
আহত কলেজ ছাত্র নাহিদ বলেন, আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ মহোদয় শুরু থেকেই বাধা দিয়ে আসছিলেন। আমরা তার বাধা না মেনে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ায় গতকাল অফিসে ডেকে নিয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের লেলিয়ে দিয়ে আমাদের মারধর করিয়েছেন।
আহত ছাত্র নাহিদের স্বজন সমরাজ মিয়া বলেন, আমাদের পরিবার আজন্ম আওয়ামী লীগ পরিবার। এই আদর্শ লালন করছে আমাদের সন্তানরা। এই কলেজের ছাত্র হিসেবে তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী পালন করার চেষ্টা করায় অধ্যক্ষ তার বাহিনী দিয়ে তিন ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান একজন দুর্নীতিবাজ। সে ছাত্রদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। সে এর আগেও আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিছিল করিয়েছে, কটুক্তি করিয়েছে। এখন জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য ছাত্রদেরও মারধর করেছে।
কলেজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কিছু হয়নি। কয়েকটা ছাত্র ক্লাস না করায় তাদের একজনকে ডেকে নিয়ে কয়েকটা থাপ্পর দিয়েছি। পরে তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে চাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মারধর করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে এখন ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে তারা মিথ্যা প্রচারণা চালাচেছ।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, শোকের অনুষ্ঠান আয়োজনে ছাত্রদের বাধা দিয়ে যে ছাত্রদের মারধর তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, এই অধ্যক্ষ বিএনপি নেতা। সে অনেক বিতর্কিত কাজে জড়িত।