1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সুনামগঞ্জ পৌরসভার গোড়াপত্তনের কথা-৪ : কল্লোল তালুকদার চপল

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮, ৬.০৮ এএম
  • ৪৬১ বার পড়া হয়েছে

নূতন উদ্যমে পথচলা:
সীমিত সম্পদ নিয়েও নবনির্বাচিত ও মনোনীত কমিশনারগণের সমন্বয়ে গঠিত মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের কাজ বেশ ভালোভাবেই অগ্রসর হতে থাকে। পৌরএলাকায় অবস্থিত লোক্যাল বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্ব লোক্যাল বোর্ড ক্রমান্বয়ে পৌরসভার হাতে ছেড়ে দিতে থাকে। কলেরা হাসপাতালের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য লোক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান চিঠির মাধ্যমে পৌরসভাকে প্রস্তাব দেন। পৌরবোর্ড এতে রাজিও হয়, তবে কয়েকটি শর্তে। শর্তগুলো হলো, লোক্যাল বোর্ডের ডাক্তারকেই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে, লোক্যাল বোর্ডকে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করতে হবে এবং প্রতি বছর হাসপাতালের জন্য ১০০ টাকা (রুপি) অনুদান দিতে হবে।২৭
প্রথমে কমিশনারগণ পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করতেন যে গৃহে (সম্ভবত পুরাতন পৌরভবন, বর্তমানে পৌরকলেজ) বসে, তা ছিল লোক্যাল বোর্ডের মালিকানাধীন। এই অফিসঘরটি পৌরসভার কাছে বিক্রির প্রস্তাব দেন লোক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান। উত্তরে পৌরসভার সীমিত সম্পদের কথা উল্লেখ করে কমিশনারবৃন্দ লোক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণকে অনুরোধ করেন যে, ভবনটি যেন পৌরসভাকে বিনামূল্যে দান করা হয়। পৌরকমিশনারগণের ১৪/০৬/১৯১৮ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীর ৬ নং দফাটি নিম্নরুপ:
6. Read and discussed a letter from the chairman, Local Board to the chairman, Municipality proposing the purchase by the Municipality of the house in which the office of the commissioners held.
Resolved that the chairman, Local Board be requested to move the members of the Board to make a free gift of the building to the commissioners in view of the limited nature of the resources of the municipality and to the reduction in the Board’s expenditure on account of works taken over by the Municipality.28
লোক্যাল বোর্ড পৌরকমিশনারগণের অনুরোধ রাখলেন। কেবল ভবনটি নয়, তার আশেপাশের আরও কিছু ভূমি পৌরসভা বরাবর দান করা হয়। এজন্য লোক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের প্রতি পৌরকমিশনারগণ আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং কার্যবিবরণীতে লেখা হয়:
3. Resolved that the commissioners, Sunamganj Municipality, convey to the chairman and members of the Local Board, Sunamganj, their hearty thanks for the free gift of this office building and the adjoining quarters.29
কালের পরিক্রমায় ক্রমশ পৌরসভার কাজের অধিক্ষেত্র ও সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১ এপ্রিল ১৯২০ খ্রি. তারিখ থেকে পৌর এলাকার অভ্যন্তরে অবস্থিত লোক্যাল বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্ব লোক্যাল বোর্ড পৌরসভার হাতে অর্পণ করে।৩০
এই সময় পৌরবোর্ডের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পৌরসভার উপবিধি (Bye-laws) প্রণয়ন। মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্ট (Act. III of 1884 B.C.)-এর ৩৫০ নং ধারা অনুযায়ী পৌর-কমিশনারগণ উপআইন প্রণয়ণের কাজে হাত দেন। ২২ আগস্ট ১৯১৭ খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় ভাইস চেয়ারম্যান ৬২টি ধারা সম্বলিত উপআইনের খসড়া পেশ করেন। বিচার বিশ্লেষণের পর উক্ত উপবিধিটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্টের ৩৫১ ধারার বিধান অনুযায়ী তা প্রকাশ করা হয়।৩১ এটিই সম্ভবত সুনামগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক প্রথমবারের মতো প্রণীত কোনো উপবিধি।
প্রথমবারের মতো নির্বাচিত পৌরবোর্ডের আট জন কমিশনারের মধ্যে একজন কমিশনার কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন। তিনি লালা বিজয়কুমার দে। কী কারণে পদত্যাগ করেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। যতদূর জানা যায় যে, তিনি সিলেটে কিছুদিন আইন ব্যবসা করেন এবং পরে শিলং যান। সেখানেই তিনি স্থায়ীভাবে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ খ্রি. তারিখে বিজয় লালার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় এবং শূন্য পদে উপ-নির্বাচনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ অনুষ্ঠিত সেই উপনির্বাচনে বাবু কামিনী মোহন দে-কে পরাজিত করে বাবু মথুরাচন্দ্র দত্ত কমিশনার পদে নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, মথুরাচন্দ্র দত্ত আইনপেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে একজন কংগ্রেস নেতা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি উকিলপাড়ায় অবস্থিত তাঁর সম্পূর্ণ বাসভবনটি সুনামগঞ্জ কলেজকে দান করে দেন। এখানেই তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত হয় সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ‘কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি হিন্দু ছাত্রাবাস’। উপনির্বাচন প্রসঙ্গে পৌরসভার কার্যবিবরণীতে লেখা হয়:
The voting papers received by the Magistrate were counted with the following result.
Babu Mathura Chandra Dutta – 32 votes
Babu Kamini Mohan De – 26 votes
Resolved that Babu Mathura Chandra Dutta be declared duly elected as a commissioner for ward No. III in place of Lala Bijoy Kumar Dey, resigned.32
পৌরসভার কার্যবিবরণীসমূহ পাঠ করতে করতে যখন পাতার পর পাতা উল্টাচ্ছি, তখন ১৯১৮ সালের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত কমিশনারগণের নামের মধ্যে একটি নাম দেখে ভীষণ রকম চমকে উঠি! এ নাম তো এখানে থাকার কথা নয়! প্রথমে মনে হলো এ বুঝি চোখের ভুল। কিন্তু না, স্পষ্টাক্ষরে লেখা আছে ‘Lala Prasanna Kumar Dey.
লালা প্রসন্নকুমার দে জুবিলী হাই স্কুলের প্রবাদপ্রতিম প্রধান শিক্ষক। বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনি হয়তো অপরিচিত, কিন্তু তিনি সুনামগঞ্জ মহকুমায় আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃত। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমেই জুবিলী হাই স্কুল পড়ালেখা সাহিত্য সংস্কৃতি প্রভৃতিতে সমগ্র আসাম প্রদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছিল। কিন্তু তাঁকে নিয়ে এ যাবৎ যত লেখালেখি আমাদের নজরে এসেছে, সেগুলোর কোথাও এই পরিচয়টি প্রকাশিত হয়নি যে তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভার কমিশনার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পুত্র লালা বিজয়কুমার দে কমিশনার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর প্রসন্নকুমার পৌরকমিশনার হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং ২২/০৮/১৯১৯ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি সভায় উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান লেখার কলেবরের কথা বিবেচনা করে তাঁকে নিয়ে বিস্তারিত লেখার লোভ অতি কষ্টে সম্বরণ করতে হলো। এই বিস্মৃতপ্রায় মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে পৃথকভাবে লেখার কাজ চলছে। তবু তাঁর সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর অগ্রজ সৈয়দ মোস্তফা আলী ১৯১১-১২ সালে জুবিলী হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মোস্তফা আলী তাঁর শিক্ষক তেজস্বী ব্যক্তিত্বের অধিকারী লালা প্রসন্নকুমার সম্পর্কে আত্মকথায় লেখেন, ‘প্রসন্ন কুমার দে মহাশয় উজ্জ্বল গৌরবর্ণ দীর্ঘকায় পুরুষ ছিলেন তাঁর পরনে সাদা ধবধবে ধুতি, পাঞ্জাবি তার উপর পাট করা সাদা চাদর সাদা দাড়ি, সাদা গোঁফ, পায়ে পাম্পসু, হাতে মোটা লাঠি। ছেলেরা তাঁর কাছে যেতেই ভয়ে কম্পমান। তিনি শ্রীহট্ট শহরের উপকণ্ঠে স্থিত কাজল হাওরের অধিবাসী ছিলেন। চাকুরি নিয়ে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পাড়ে (উকিলপাড়া লেখক) স্থায়ী বাসা বেঁধে সপরিবারে বাস করতেন।’৩৩
প্রসন্নকুমার দে ‘পি. ডে.’ নামেও খ্যাত ছিলেন। আসাম প্রদশের চিফ কমিশনার Sir Archdale Earle এর সঙ্গে পি.ডে.’র ছিল হার্দিক সম্পর্ক। প্রদেশের বিভিন্ন মহকুমা সদরে অবস্থিত হাই স্কুলকে প্রাদেশিকীকরণের (সরকারি) জন্য স্থানীয়রা লাট সাহেবের নিকট আবেদন নিবেদন করতেন। একে একে প্রায় সবকটি স্কুলকে তিনি সরকারি করেন। কিন্তু স্বাধীনচেতা পি. ডে. তাঁর স্কুলটিকে সরকারি বাধ্য বাধকতায় বাঁধতে চাইতেন না। লাট সাহেবও মনে করতেন, লালা প্রসন্নকুমার দে যতদিন প্রধান শিক্ষক হিসাবে এই স্কুলে কর্মরত আছেন, ততোদিন স্কুলকে সরকারিকরণের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ লালা নিজেই এখানকার আইন। কিন্তু সরকারি সাহয্যপ্রাপ্ত (Aided) এই স্কুলটিকে লাট সাহেব সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করতেন। চিফ কমিশনার ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১১ খ্রি. তারিখে লিখেন, “I have been considering the question of provincialising some of the High Schools at subdivisional headquarters – in cases in which the local people ask for this to be done. This is not the case at Sunamganj where the present Head Master is a law unto himself.” 34
লালা প্রসন্নকুমার কলিকাতার হিন্দু কলেজ থেকে ১৮৫৫-৫৬ সালের দিকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। সমগ্র আসাম প্রদেশে তিনি সম্ভবত প্রথম কিংবা দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েট। অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী পি. ডে. ইংরেজিতে কবিতা লিখতেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে Indian Bouquet নামে পি. ডে.’র একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল। এই কাব্যের War’ এবং Svami Vivekananda at Chicago’ শিরোনামের দুটি কবিতা আমেরিকা ও ব্রিটেন থেকে ২০১৩ সালে প্রকাশিত অবিভক্ত ভারতের কবিদের কবিতা সংকলন`Mapping the Nation, An Anthology of Indian Poetry in English, 1870-1920’ নামক গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। ভার্জিনিয়ার ম্যারি ওয়াশিংটন ইন ফ্রেডারিক্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শশীলতা রেড্ডি গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন। কবিতার পাশাপাশি পি. ডে. গদ্যও লিখতেন। তাঁর ‘যুগল কিশোরের দস্যু-দমন ও বিচার ফল’ নামক প্রবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ভারতী’ পত্রিকায় ১৩১৬ বঙ্গাব্দে প্রকাশ করেছিলেন।৩৫
সম্প্রতি কলকাতা নিবাসী গবেষক ড. অমলেন্দু দে ‘সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে’ নামক গ্রন্থে দেখিয়েছেন, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদদৌলার প্রত্যক্ষ বংশধর লালা প্রসন্নকুমার দে। তাঁর বর্ণনা মতে, প্রসন্নকুমারের পিতামহ যুগলকিশোর রায়চৌধুরী নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও মাধবীর পুত্র। মাধবী (ডাক নাম হীরা) সেনাপতি মোহনলালের বোন, ইতিহাসে তিনি আলেয়া নামে খ্যাত। এই তথ্যকে নাকচ করে দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউ যেহেতু হাজির করতে পারেননি, তাই এই ড. দে’র আবিষ্কৃত তথ্য আপাতত গ্রহণ করতে হবে। তবে সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও জুবিলী স্কুলের পুরাতন কাগজপত্র থেকে সম্প্রতি আমাদের অনুসন্ধানে যে সব তথ্য উঠে এসেছে, তার সঙ্গে ড. দে’র উক্ত বইয়ে উপস্থাপিত অন্য অনেক তথ্যের গড়মিল ধরা পড়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ড. অমলেন্দু লালা প্রসন্নকুমার দে-কে জুবিলী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে দেখিয়েছেন। তাছাড়া তাঁর মতে পি. ডে.’র পরিবারে ‘লালা’ পদবীটি প্রথম ব্যবহার করেন নাকি পি. ডে.’র ছেলে বিজয়কুমার দে, তাও আবার সুনামগঞ্জ ছেড়ে শিলং যাওয়ার পর। ড. দে আরও লেখেন যে, পি. ডে. ১৯২০-১৯২১ খ্রিস্টাব্দে সুনামগঞ্জে প্রয়াত হন।৩৬ তাছাড়া পি. ডে. সম্পর্কে অ্যাডভোকেট জনাব আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন তাঁর ‘সুনামগঞ্জ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ নামক গ্রন্থে লেখেন, ‘তিনি ১৮৯৩-১৮৯৯ সাল সময়ে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন এ স্কুলের দ্বিতীয় প্রধান শিক্ষক। তাঁর আগে এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু রাধিকা রঞ্জন বসাক (১৮৮৭-১৮৯২)।৩৭
কিন্তু স্কুলের পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে আমরা এ পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি, তা থেকে কেবল দু’একটি তথ্য উদাহরণ হিসাবে এখানে উল্লেখ করতে চাই। সংগত কারণেই এখানে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ নেই।
মহকুমা সদরের একমাত্র মিডল ইংলিশ (এম.ই.) স্কুলটিকে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে হাই স্কুলে উন্নীত করা হয় এবং রানি ভিক্টোরিয়ার সিংহাসন আরোহণের সুবর্ণ জয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে নাম রাখা হয় সুনামগঞ্জ ‘জুবিলী’ হাই স্কুল। হাই স্কুলে উন্নীত হওয়ার পর প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাবু গঙ্গেশচন্দ্র চ্যাটার্জী। কিন্তু তিনি খুব অল্প সময় এখানে ছিলেন। এরপর আসেন রায় সাহেব করুণাকান্ত দাস গুপ্ত বি.এ.। তিনিও কিছুদিন পর শিলং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি পেয়ে চলে যান এবং একজন স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক হিসাবে গৌহাটি সরকারি হাই স্কুল থেকে অবসরগ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জ জুবিলী হাই স্কুলের তৃতীয় প্রধান শিক্ষক হলেন লালা প্রসন্নকুমার দে। তিনি ১৮৯৩ খ্রি. থেকে আমৃত্যু এই পদে বহাল ছিলেন এবং তিলে তিলে স্কুলটিকে গড়ে তুলেছিলেন।
এ বিষয়ে জুবিলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু অবিনাশ চন্দ্র চৌধুরীর ৭ মার্চ ১৯৩৩ খ্রি. তারিখের বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি ১৯৩২-১৯৩৫ সাল পর্যন্ত জুবিলীর প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সিলেট জেলার তৎকালীন ডি.সি. Mr. C. S. Gunning, M.A., I.C.S. সমীপে জুবিলী হাই স্কুল সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক মহোদয় যে রিপোর্ট পেশ করেন, তার অংশ বিশেষ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ÔBabu Gangeshchandra Chatterji was its first Headmaster. He, however, served here for a short period and was succeeded by late Rai Shaib Karunakanta Das Gupta, B.A. […]. After him came the late Lala Prasannakumar Dey, B.A., a distinguished educationist and a poet with a towering personality which attracted the notice of Sir Archdale Earle, Chief Commissioner of Assam who appropriately called him “The Grand Old Man of Sunamganj.” 38
পি. ডে.’র মৃত্যুতারিখ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি ১৯১৯ সালের অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে কোনো এক সময় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণের পর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ২৩ অক্টোবর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে লেখা হয়, 1. Resolved that the commissioners of the Municipality in meeting place on record their deep sense of sorrow at the death of Lala Prasanna Kumar Dey – a nominated commissioner of this municipality, who filled so large a space in the life of Sunamganj for over a quarter of a century and whose wise counsel will be so much missed by his brother commissioners and that they offer their condolence to the bereaved family.
Resolved also that a copy of the above resolution be sent to his eldest son Lala Upendra Kumar Dey. 39

পি. ডে.’র স্মরণে সুনামগঞ্জের টাউন হলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পি. ডে. মেমোরিয়াল লাইব্রেরি এবং দীর্ঘদিন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো পি. ডে. শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট। পি. ডে.’র বংশধরের কেউ এখন আর বাংলাদেশে নেই। ছড়িয়ে পড়েছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে এবং অনেকেই হয়েছেন সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর পৌত্র ডা. বিষ্ণু সুদর্শন দে এখন দিল্লীতে থাকেন। সম্প্রতি তিনি অন্য অনেক কাগজপত্রের সঙ্গে পি. ডে.’র একটি ছবি আমার কাছে পাঠিয়েছেন। অবশ্য এই ছবিটি ড. অমলেন্দু দে-ও তাঁর বইয়ে ব্যবহার করেছেন। (চলবে)
তথ্যসূত্র:
27. Resolution Book of Sunamganj Municipality, Proceedings of a meeting of the Commissioners held on 3.7.1917, Proceeding No. 1; page: 64.
28. Ibid, Proceedings of a meeting of the commissioners held on 14. 6. 1918. Page: 97.
29. Ibid, Proceedings of a meeting of the commissioners of held on 17.3. 19. Page: 110.
30. Ibid, Proceedings of a meeting of the commissioners of the Sunamganj Municipality held on 12. 04. 1920. Proceedings No. 4. Page: 142-143.
31. Ibid, Proceedings of a special meeting of the Commissioners of the Sunamganj Municipality held on 22nd August 1917, convened for the purpose of passing bye-laws. Page: 66.
32. Ibid, Proceedings of an extraordinary meeting of the Commissioners of the Sunamganj Municipality held on 19th November 1917. Page: 87.
৩৩. সৈয়দ মোস্তফা আলী, আত্মকথা, উৎস প্রকাশন, ঢাকা; পৃ. ২৪
34. Sir Archdale Earle, Chief Commissioner of Assam, Inspection note in Inspection Book of Sunamganj Jubilee High School, 20 February 1911.
৩৫. অমলেন্দু দে, সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৪ খ্রি.; পৃ. ৫৬
৩৬. অমলেন্দু দে, সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৪ খ্রি.; পৃ. ৫৭-৫৮
৩৭. আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন, সুনামগঞ্জ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ডিসেম্বর ১৯৯৫ খ্রি.; পৃ: ১২৩
38. A brief report on the working of the Sunamganj Govt. Jubilee High School, read by the Abinash Chandra Chowdhury, Headmaster, at the meeting held under the presidency of Mr. C.S. Gunning, M.A., I.C.S., Deputy Commissioner, Sylhet, for distributing the prizes, for the year 1932-33,to boys. 7th March 1933.
39. Proceedings of a meeting of the commissioners of held on 23.10. 19. Page: 123.

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!