বিশেষ প্রতিনিধি::
বারবার ঘোষণা দিয়েও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্র লীগের কমিটি দিতে পারছেনা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোন্দলের জের ধরে বিলম্ব হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। কয়েক মাস আগে বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শিঘ্রই কমিটি দেওয়ার ঘোষণা দিলেও কথা রাখতে পারেননি তারা। কমিটি বিলুপ্তির পর নেতৃত্বে আসতে আগ্রহীরা খুশি হলেও তারা এখন হতাশ।
এবারও নানা অজুহাতে হলোনা সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। আয়োজকরা বাদে সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূল ছাত্রলীগ ও নতুন নেতৃত্বের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেলেও সম্মেলন না হওয়ায় তারা হতাশ ও ক্ষুব্দ। তৃণমূল ছাত্রলীগ মনে করছে বর্তমান কমিটির নেতারা নেতৃত্ব চলে যাওয়ার ভয়ে নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ দিতে চাচ্ছেনা। জেলা কমিটি ধোপে টিকেনা এমন নানা ছুতোতে সম্মেলন পিছানোর কথা জানালেও জানা গেছে তলে তলে তারাই কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতার কমিটির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন কারণে তারা বাদ গেলে তাদের বলয়ের নেতৃত্ব নিয়ে আসতে চাইছে তারা। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ নিশ্চিত করেছে সকল পক্ষকেই নিয়ে শিগ্রই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে চলতি বছর শুরুতেই স্থানীয় ছাত্র লীগের নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীরা নানাভাবে উজ্জীবিত ছিলেন। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে রাজপথে উচ্ছ্বসিত ছিলেন তারা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ দ্রুত সম্মেলন করার জন্য জেলা ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দিয়েছিল। ১১ মার্চ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও তৎকালীন কমিটির নানা ছুতোর কারণে সম্মেলনও ভেস্তে যায়। ওইদিনই কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে ১৫ মার্চের মধ্যে আগ্রহী নেতাদের বায়োডাটা পাঠানোর নির্দেশনা জারি করে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে একটি কমিটিও ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এই কমিটিও এখন পর্যন্ত কার্যকর কিছু করতে পারেনি। এই কমিটিতে ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দারুস সালাম শাকিল, ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক চিম্ময় রায় ও সহসম্পাদক মো. মাসুদ পারভেন। এছাড়া এর আগেও ২০১৫ সনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির অগঠনতান্ত্রিক কার্যক্রমের কারণে একবার কমিটি স্থগিত করা হয়েছিল।
এদিকে কমিটি বিলুপ্তির পর নতুন নেতৃত্বে আসতে আগ্রহীরা উচ্ছ্বসিত হন। তারা কেন্দ্র ঘোষিত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে বায়োডাটাও জমা দেন। তদবির করেন নিজ নিজ বলয় থেকে। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবেও কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের অনেক নেতা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে সম্ভাবনায় তরুণদের নাম সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন বলয়ের একঝাক নেতাকর্মী বায়োডাটা পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এখন পর্যন্ত কমিটি গঠনের কোন খবর জানেননা তারা। জানা গেছে কমিটিতে সথান পেতে দীপঙ্কর কান্তি দে, ইশতিয়াক আলম পিয়াল, জিসান এনায়েত রেজা চৌধুরী, ইশতিয়াক জামান ইন্তি, হাবিব আহসান তপুসহ একঝাঁক উদীয়মান ছাত্রনেতা বায়োডাটা জমা দেন। তাদের জন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও ব্যক্তিগতভাবে তদ্বির করেন।
বর্তমানে তদ্বির করে স্থানীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নেতারাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপর তারা চটলেও নেতারা তাদের উপর নাখোশ হতে পারেন এই কারণে কোন বক্তব্যও দিতে চাচ্ছেন না। তারাও কৌশলে কেন্দ্রীয় নেতাদের মন জয় করে চলার চেষ্টা করছেন। অনেকে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের গুণকীর্তন করে ফেইসবুকে স্টেটাস দেওয়াসহ তার অনেক স্টেটাস ও লেখা শেয়ার করছেন।
এ বিষয়ে বৃহষ্পতিবার রাতে একাধিকবার সুনামগঞ্জের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দারুস সালাম শাকিলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনও ফোন ধরেননি।
তবে এর আগে এই প্রতিবেদককে কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, বায়োডাটা আহ্বানের পর আমরা স্বতস্ফুর্ত সাড়া পেয়েছি। নেতৃত্বে আসতে অনেকেই বায়োডাটা পাঠিয়েছে। এদের মধ্য থেকেই আমরা সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আগামী দিনের নেতৃত্ব বের করব।