বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে পুলিশ এসল্ট মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করেছেন পরিবারের লোকজন। পরিবারের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন করতে চাইলে লাঠিচার্জ করে ভ-ুল করে দিয়েছে পুলিশ। পরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতির নেতৃত্বে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। দাবি না মানা হলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা।
অরিন্দম চৌধুরী অপুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হেফাজত নেতা মামুনুল অনুসারীদের হামলার ঘটনায় সরব ছিলেন অরিন্দম চৌধুরী অপু। এ কারণে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি ধমকি দেওয়া হয়। তার ভাই আইনজীবী অমিতাভ চৌধুরী রাহুল এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে গত ১০ এপ্রিল শাল্লা থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে ঠালবাহানা করতে থাকেন এসআই শাহ আলী। পরে অপুর পরিবারের লোকজন পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর জিডিটি গ্রহণ করা হয় এবং তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই শাহ আলীর কাছে। পরিবারের অভিযোগ শাহ আলী তদন্ত চলাকালীন সময়ে সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে কথা বলেন এবং উল্টো হুমকি ধমকি দেন। এ কারণে অপুর পরিবার পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে এসআই শাহ আলীকে শোকজ করা হয় বলে জানায় তার পরিবার। এসব কারণে ক্ষুব্দ ছিলেন এসআই শাহ আলী।
অপুর পরিবার ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতৃবৃন্দের অভিযোগ এর জের ধরে গত ১৩ এপ্রিল ঘুমন্ত অপুকে রাত আড়াইটায় তার বাসা থেকে ধরে এনে এসআই শাহ আলীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন শাল্লা থানার ওসি মো. নূর আলম ছুটিতে ছিলেন। চার্জে ছিলেন এসআই শাহ আলী। এ ঘটনায় অপুর ঘনিষ্ট বিশ্বজিৎ রায়, পলাশ সরকার পল্টু, রতন রায় ও চন্দন রায়কেও আটক করে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা আরো আসামি রাখায় এলাকাবাসী গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন। থানায় এনে গ্রেপ্তারকৃতদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার। একই সময়ে একই থানার এসআই আল মামুন অরিন্দম চৌধুরী অপুর বিরুদ্ধে মাদক আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। দুটি মামলাকেই সাজানো আখ্যায়িত করেছেন পরিবার ও এলাকাবাসী। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে সিলেটে মানববন্ধন করেছেন শাল্লাবাসী। তারা এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এদিকে একই দাবি জানিয়ে শাল্লা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ শনিবার দুপুরে শাল্লা ডাক বাংলোর সামনে মানববন্ধনের ডাক দেয়। মানববন্ধনে অংশ নিতে ঘটাস্থলে ছুটে যান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সুয়েব চৌধুরী। দুপুরে তারা মানববন্ধনে দাড়ানোর চেষ্টা করলে ভ-ুল করে দেয় পুলিশ। এসময় কয়েকজন নেতার উপর লাঠিচার্জ করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শাল্লা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পলাশ চৌধুরী বলেন, আমরা দুপুরে মানববন্ধনের জন্য ডাকবাংলোয় জড়ো হয়েছিলাম। এসময় আমাদেরকে জড়ো দেখে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সভাপতি সুয়েব চৌধুরী বলেন, আমরা মানববন্ধন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলে পুলিশ করতে দেয়নি। পরে আমরা আইন শৃঙ্খলা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের সঙ্গে কথা বলে আমরা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। আমরা বলেছি মামলাটি সাজানো। তারা বিষয়টি অধিক তদন্ত করে প্রকৃত সত্য সামনে নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন।
শাল্লা থানার ওসি মো. নূর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।