হাওর ডেস্ক::
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অনিয়মে জড়িত ১৮০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রয়েছেন। ইতোমধ্যে দুইজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। ওএসডি করা হয়েছে পাঁচজনকে।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসকরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিদর্শন দলের সদস্যরা। তাদের প্রতিবেদনে ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে।
সামান্য বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে ঘর।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্ল্নোগান হলো, ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঙ্গে আমাদের সবার আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ক্রটিবিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৈথিল্যের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
প্রতিবেদনে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বরগুনার আমতলী, বগুড়ার শেরপুর, শাজাহানপুর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, সুনামগঞ্জের শাল্লা ও মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলায় ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। গত রবিবার সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ইউএনওর দায়িত্ব পালন করে আসা শফিকুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়েছে। বরগুনার আমতলীর ইউএনও আসাদুজ্জামানকে ওএসডি করা হয়েছে গতকাল সোমবার। এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
এছাড়া বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে আসা লিয়াকত আলী সেখকে গত রবিবার ওএসডি করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদরে ইউএনওর দায়িত্ব পালন করে আসা রুবায়েত হায়াত শিপলু ওএসডি হয়েছেন গতকাল সোমবার। মুন্সীগঞ্জ সদরে কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন ওএসডি হয়েছেন গতকাল সোমবার। এই উপজেলার প্রকৌশলী, সংশ্নিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
মাত্র কয়েকদিরে মাথায় ধ্বসে পড়ল প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও মাহমুদা পারভীন, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সাবেক ইউএনও তাসনুভা নাশতারান, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ইউএনও আল-মুক্তাদির হোসেনকে ওএসডি এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক তদন্তে এ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়ম করার ঘটনার সঙ্গে ৩৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া আরও ২৯টি উপজেলায় ঘর নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বগুড়ার আদমদীঘি, কুমিল্লার দেবিদ্বার, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মাদারীপুরের কালকিনি, লালমনিরহাট সদর, গাজীপুরের শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, জামালপুরের ইসলামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, ময়মনসিংহ সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, ভোলার লালমোহন, পাবনার সাঁথিয়া, মানিকগঞ্জের ঘিওর, নাটোর সদর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, বরিশাল সদর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘর নির্মাণের বেলায় নীতিমালা মানা হয়নি। অনেক ঘরে নির্মাণে ক্রটি রয়েছে, গুণগত মান ঠিক হয়নি। ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলার ভেঙে গেছে। দেয়াল ধসে পড়েছে। ঘর নির্মাণে ব্যবহূত মালামালও ছিল নিম্নমানের। নিচু এলাকায় ঘর নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার ভূমির মালিকরাও ঘর বরাদ্দ পেয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর শুরু হওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ জন ভূমিহীনকে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মের খবর বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।