হাওর ডেস্ক::
জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে বুধবার।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল পাঁচটায় শুরু হবে সংসদের বৈঠক।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মত এবারও সংক্ষিপ্ত হবে এই অধিবেশন।
বৃহস্পতিবার সংসদে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এটি হবে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার তৃতীয় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ত্রয়োদশ বাজেট।
সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় প্রস্তুতিসহ সার্বিক পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বসতে যাওয়া এই অধিবেশন ১২ দিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সরকারি দলের হুইপ ইকবালুর রহিম।
তিনি বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি ও আতংক থাকলেও তা মোকাবেলার জন্য কঠোর সতর্কতাও অবলম্বন করা হচ্ছে। বাজেট অধিবেশন থেকে যাতে নতুন কেউ সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“অধিবেশন কক্ষে আসন বণ্টন আগের মতোই থাকছে। নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখেই সদস্যরা বসবেন। নির্ধারিত সময় পার হলেই অধিবেশনে যোগদানের জন্য নমুনা পরীক্ষা করোনা নেগেটিভ সনদ নিতে হবে।”
মহামারীর কারণে গত বছর মাত্র ৯ কার্যদিবস চলে বাজেট অধিবেশন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত।
গতবারের বাজেট অধিবেশনের মত এবারও তালিকা করে সংসদ সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেবেন।
প্রতিটি কার্যদিবসে উপস্থিতি সংখ্যা ১০০ থেকে ১২০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এক্ষেত্রে একজন সংসদ সদস্য ৩ থেকে ৪ কার্যদিবস অধিবেশনে যোগ দেবেন।
যোগদানের জন্য তাদের করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। একদিন কোভিড-১৯ টেস্টের নেগেটিভ ফলাফলের ভিত্তিতে পরপর দুইদিন অধিবেশনে যোগ দেওয়া যাবে।
এ জন্য আইন প্রণেতাদের একাধিকবার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগেই জাতীয় সংসদের হুইপের দপ্তর থেকে সংসদ সদস্যরা কে কোন দিন যোগ দেবেন তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্যদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সংসদ চলাকালীন দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সীমিত সংখ্যক আইনপ্রণেতাকে নিয়ে জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বসে বাজেট অধিবেশন; অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বসতে হয়েছে দূরত্ব রেখে, মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস পরে। ছবি: পিআইডি
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও এই বিষয়ে থাকছে কড়াকড়ি।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশও সীমিত করা হচ্ছে এই অধিবেশনে।
সাধারণ সময় বাজেট পেশের দিনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংসদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবারও তা হচ্ছে না।
মহামারীর কারণে গত বছর বাজেট অধিবেশনও তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সংসদ অধিবেশনে যোগদানের জন্য ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
জাতীয় সংসদ মেডিকেল সেন্টারে সংসদ সদস্যরা ছাড়াও অধিবেশনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা চলছে।
২ জুন অধিবেশন শুরুর পর চলতি সংসদের সদস্য আবদুল মতিন খসরু ও আসলামুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও গ্রহণের পর অধিবেশন রেওয়াজ অনুযায়ী মুলতুবি করা হবে।
পরের দিন বিকেল ৩টায় বাজেট প্রস্তাব ও অর্থ বিল উত্থাপন করা হবে।
সংসদের কর্মকর্তারা জানান, বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পর দুইদিন বিরতি দিয়ে ৬ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হবে।
ওইদিন থেকে বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হবে। ৭ জুন সম্পূরক বাজেট পাসের পর অধিবেশন আবারও মূলতবি করা হবে।
এরপর টানা ছয় দিন বিরতি দিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা ১৪ জুন থেকে শুরু হবে। এই আলোচনা চলবে ১৫, ১৬, ১৭ ও ২৮ জুন।
সাধারণ আলোচনা শেষে ২৯ জুন অর্থবিল এবং ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। পরদিন ১ জুলাই বাজেট অধিবেশন শেষ হবে।
সংসদের খসড়া অধিবেশন সূচী অনুযায়ী, প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাত্র পাঁচদিন আলোচনা হবে। এতে নির্ধারিত সংখ্যক সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য অংশ নিবেন।
পুরো বাজেট পাসের প্রক্রিয়া ব্যয় হবে ১০ দিন। সেক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা বাজেট আলোচনা হতে পারে। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে।
অধিবেশনে বাজেট ছাড়াও কয়েকটি বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
সংসদে বাজেট পেশের আগে ওইদিন বেলা ১২টায় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিসভা অনুমোদনের পর অর্থ বিলে স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ কারণে রাষ্ট্রপতি সেদিন তার সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে অবস্থান করবেন।
রাষ্ট্রপতির আগমনসহ অধিবেশনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে সংসদ সচিবালয় এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
যা থাকছে প্রথম দিনের বৈঠকে
২ জুন বিকাল পাঁচটায় সংসদের বৈঠক শুরু হবে। শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেয়া হবে। এরপর রয়েছে শোক প্রস্তাব।
প্রথম দিনের বৈঠকে প্রশ্ন উত্তর এবং জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণের (বিধি ৭১) এর নোটিশ নিষ্পত্তির কথা রয়েছে।
দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন উত্তর পর্ব রয়েছে।
সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী, চলতি সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে বৈঠকে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে সেদিন বৈঠক মুলতুবি করা হয়।
চলতি সংসদের সদস্য আসলামুল হক ও আব্দুল মতিন খসরু যথাক্রমে ৪ ও ১৪ এপ্রিল মারা গেছেন।