অনলাইন ডেক্স::
রীতা ও নাহার (ছদ্মনাম) দুই বাংলাদেশি হতভাগা নারী। ভারতে মানবপাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধারের পর তাদের আশ্রয় হয় পশ্চিমবঙ্গের এক আশ্রয় শিবিরে। এরপর পেরিয়ে গেছে তিন বছরেরও বেশি সময়। কোথায় আছেন বাবা-মা, পরিজন তার হদিস জানা নেই তাদের। এখন তাই পশ্চিমবঙ্গের সেই আশ্রয় শিবিরই তাদের ঠিকানা। কয়েক বছর আগেও পরস্পরকে যারা চিনতেন না, সেই আসমা, শায়লা এখন অনেক ভালো বন্ধু। দুইজনই স্বপ্ন দেখেন একদিন দেশে ফিরবেন। আপনজনকে ফিরে পাবেন। আর একে অপরকে সেই স্বপ্নের গল্প বলে বলে প্রতীক্ষার প্রহরগুলো পার করেন তারা।
কেবল আসমা আর শায়লাই নন, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এমন দুই শতাধিক বাংলাদেশি নারী রয়েছেন। তাদের কেউ আইনি জটিলতার কারণে, কেউ ঠিকানা ভুলে গিয়ে আবার কেউ অন্য কোনও কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। আদৌ দেশে ফিরতে পারবেন কিনা এমন উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটছে এই বাংলাদেশিদের। প্রায় চার বছর ধরে আশ্রয়ে থাকা দুই শতাধিক বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আটকা পড়া নারীরা বাংলাদেশের ঠিকানা বলতে পারেন না। কোথায় তাদের পাঠানো হবে কিংবা তাদের বাবা-মা কোথায় আছে তা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন।
পশ্চিমবঙ্গের নারী ও শিশু কল্যাণবিষয়ক দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রোশনি সেন ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘বর্তমানে পাচারের সময় উদ্ধার হওয়া অন্তত ২২০ নারীকে বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে ফেরার অপেক্ষায় আছে। তবে তাদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে আইনি কিংবা অন্যান্য কিছু বাধা আছে।’
একটি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোশনি। টাস্কফোর্সটি পাচার হওয়া এই নারীদের নিয়ে কাজ করছে। এই ফোর্সে পুলিশ, বিএসএফ এবং বাংলাদেশি দূতাবাস ও অন্যান্য এজেন্সির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
রোশনি সেন জানান, গত পাঁচ বছরে পাচার হওয়া ৪শ নারীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অনেক নারীই আছেন যারা তাদের বাড়ির ঠিকানা এবং মা-বাবার পরিচয় দিতে পারেননি। তাছাড়া কিছু কিছু পাচার মামলা আদালতে ঝুলে আছে। সেইসব মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যও অনেককে ভারতে থেকে যেতে হচ্ছে।
রোশনি বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাচারের শিকার নারীদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে তাদের সাক্ষ্য নেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
পশ্চিমবঙ্গের একটি এনজিও’র কর্মী তপতি ভৌমিক বলেন,উদ্ধার করা হলেও পাচারের শিকারদের দেশে পাঠাতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। আইনি জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক কারণে বেশিরভাগকেই আটকা পড়তে হয়।
মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশন জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওইসব নারীদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে তারা টাস্কফোর্সের সঙ্গে কাজ করছে।