অনলাইন ডেক্স::
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়মে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ তিন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করে সোমবার (১ মে) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃতরা হলেন, সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম সরকার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ পওর (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দীনকে (তাকে আগে প্রত্যাহার করা হয়েছে) সাময়িক বরখাস্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছে।
উজান থেকে মেনে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে, বাঁধ উপচে গত ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চল ফসলসহ ডুবে যায়। এতে হাওরের হাওরের বোরো ধান নষ্ট হয়ে যায়। সরকারি হিসেবে এক হাজার ৭৬ টন মাছ মারা গেছে, হাঁস মারা গেছে ৩ হাজার ৮৪৪টি। অভিযোগ ওঠে হাওরাঞ্চলে সময়মতো বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার না হওয়ার কারণে এই ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হাওর পরিদর্শনে এসে বাধরক্ষায় কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হওরের ফসল বিনষ্ট হওয়ার কারণ ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে গত ৯ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত ৩০ এপ্রিল এ কমিটি পুনর্গঠন করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ কমিটিকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন
হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটি থেকে যুগ্ম-সচিবকে সরিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল কমিটি পুনর্গঠন করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী খানকে আহ্বায়ক করে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রশাসন) মো. খলিলুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিফ মনিটরিং অফিসার কাজী তোফায়েল হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান মন্টু কুমার বিশ্বাস কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল যুগ্ম-সচিব মো. খলিলুর রহমানকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
কমিটি সুনামগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার হাওর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ধীরগতি হয়েছে কিনা এবং হয়ে থাকলে এর কারণ বের করবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, কমিটি এ কাজে দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করবে। আগামীতে হাওর এলাকার ফসল রক্ষার বিষয়ে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে সেই বিষয়ে সুপারিশ দেবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যেক জায়গায় একটা ক্ষোভ আছে যে দুর্নীতি হয়েছে। পানি ঢোকা ও দুর্নীতি দুটি আলাদা জিনিস। বাঁধ উপচে পানি আসলেও দুর্নীতি হতে পারে। আমরাও মনে করি একটি স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া উচিত।’
এজন্য তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন ও তদন্তের নিরপেক্ষতার জন্য এ কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তও হবে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিতও হবে।’