আশিস রহমানঃ
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের উদ্যোগে স্নাতক (সম্মান) শিক্ষাবর্ষ ২০১৬-২০১৭ এর নবীনবরণ ও স্নাতক (সম্মান) শিক্ষাবর্ষ ২০১১-২০১২ (১১তম ব্যাচ) এর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কলেজের দর্শন বিভাগের হলরুমে দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তাহেরের সভাপতিত্বে ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন রাজিবের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সহকারী অধ্যাপক মোঃ দিলওয়ার হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আব্দুছ ছত্তার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশ সেবার ব্রত নিয়ে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য বিদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে সরকার ডাকছে। যারা বিদায়ী তাদের উপর এখন আরো দায় দায়িত্ব এসে বর্তাবে। আর নবীন যারা, তারা সুন্দর ভাবে লেখা পড়া করে এই কলেজ থেকে আলোকিত মানুষ হয়ে বের হয়ে যাবে এটাই আমাদের কাম্য। বক্তব্যের এক পর্যায়ে গত কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সুনামগঞ্জের সন্তান এবং এই কলেজের অধ্যক্ষ। গত কিছুদিন আগে ভুল পথে পরিচালিত কিছু শিক্ষার্থী অথবা ভুল পথে পরিচালিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমি তখন ঢাকায় অধ্যক্ষ সম্মেলনে ছিলাম। আমার কাছে খবর গিয়েছিল এবং টেলিভিশন সহ পত্র পত্রিকায় দেখেছি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আমিতো সুনামগঞ্জের ছেলে, কিন্তু আমি কি করেছি? কেন আমার বিরুদ্ধে এক দফা এক দাবি। কলেজে এসে দেখি আমার বিরুদ্ধে ১১টি কুৎসা রটনা করা হয়েছে। আমি ৭৩ বছর পরে এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমার বিরুদ্ধে অপবাদ করা হয়েছে আমি কলেজের তহবিল হরিলুট করেছি। অথচ যে পরিমাণ তহবিল নিয়ে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম এর দেড় বছর পরে তার রিজার্ভ দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। অথচ আমাকে বলা হয়েছে আমি নাকি হরিলুট করেছি। আন্দোলনকারীরা প্রথমে পিকনিকে যাওয়ার জন্য এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার একটা দাবি দিয়েছিল। এটাও আমি স্যারদের মাধ্যমে দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া করেছিলাম। কিন্তু এটা কেন স্যারদের হাতে দিলাম তাদের হাতে দিলামনা সেজন্য এটাকে ইস্যু করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়েছে। আমাকে অপসারণে দাবিতে এক দফা, এক দাবি পেশ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, কলেজে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করে, অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমি দর্শন বিভাগে মাস্টার্স চালু করেছি। সামনে যেন প্রত্যেকটি বিভাগে মাস্টার্স চালু হয় সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে কলেজের পাচঁতলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবনের দাবিতে মাননীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দারস্থ হয়েছি। এব্যাপারে তিনি আমাকে আশ্বস্থও করেছেন। বর্তমানে কলেজের অপর আরেকটি ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর প্রসূন চন্দ্র মজুমদার, অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার আলম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোমা পাল প্রমুখ। অতিথিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অধ্যাপক জমশেদ আলী, সহকারী অধ্যাপক আবু হায়দার মোহাম্মদ নূরে আলম। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী জিনিয়া আক্তার, সোনিয়া আক্তার, রীমা রানী দাস, আশিস রহমান, আব্দুল মুকিত আকাশ, বিদায়ী শিক্ষার্থী স্বরূপ চক্রবর্তী, নাজনীন লিজা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সুনামগঞ্জের কৃতিসন্তান, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জাতীয় অধ্যাপক ও ভাষা আন্দোলনের সংগঠক দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের নামে একাডেমিক ভবনের নামকরণের প্রস্তাব পেশ করেন দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তাহের ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন রাজিব। অধ্যক্ষ মহোদয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের নামে নতুন একাডেমিক ভবনের নামকরণ করবেন বলে জানান।