1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারতের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৮৮ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে :প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার দেশের যে যে বিভাগ গুলোতে টানা ৩ দিন ঝড়বৃষ্টি হতে পাড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুড়তে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু রোববার থেকে খোলা হতে পাড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে যা জানাল মন্ত্রণালয় সিলেটের মাঠে ভারতকে হারাতে প্রস্তুত বাঘিনীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অতি বৃষ্টিপাতে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা ভাষাসৈনিক ও জাতীয় নেতা সামাদ আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ আজ থেকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্চ ভর্তি পরীক্ষা শুরু পৃথিবীকে গুরুত্ব দিয়ে এডিবির সেফগার্ড পলিসি সংশোধনের দাবিতে সুনামগঞ্জে অভিনব কর্মসূচী

দালাল ধরে রোগী টানে শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার: টেস্ট বাণিজ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ১ জুন, ২০১৯, ৪.৩৫ এএম
  • ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
থাইরয়েড (গলা ফোলা) আক্রান্ত এক হতদরিদ্র রিকসাচালক রোগীকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে ভুলভাল টেস্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোগীকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিয়েছে সুনামগঞ্জ বিএমএ (মেডিকেল এসোসিয়েশন) নেতৃবৃন্দ। ‘শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় গত এক বছর ধরে কথিত ডাক্তারদের দিয়ে ব্যবস্থাপত্র প্রদানসহ ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দিয়ে অসহায় ও হতদরিদ্র লোকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা একটি রিকসাচালক সিন্ডিকেটকে কমিশনের মাধ্যমে রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে টেস্ট-বাণিজ্যে মেতে ওঠেছে।
সুনামগঞ্জ বিএমএ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাক কান গলা রোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও ওই হাসপাতালের হেড নেক সার্জন এবং বিএমএ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারি ডা. নূরুল ইসলামের কাছে এক হতদরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেন শহরের এক ব্যক্তি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাক্তারপার গ্রামের হতদরিদ্র রিকসাচালক এরশাদ আলীর কিছুদিন আগে থাইরয়েড রোগ দেখা দিয়েছিল। ওই রোগী গত ৩ মে গলার সমস্যা নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খোঁজে সুনামগঞ্জ শহরে আসেন। ওই সেন্টারের কমিশনপ্রাপ্ত রিকসাচালক গোলাপ মিয়া তাকে ‘কম টাকায় বড় ডাক্তারের সেবা’ দিবেন বলে ‘শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ নিয়ে আসেন। এখানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা ডাক্তার মো. সাবিরুল ইসলাম তাকে এক্সরে, রক্ত-পরীক্ষা, পেটের আল্ট্রাসনো এবং গলার (থাইরয়েড) পরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই টেস্ট করাতে বলেন। ডাক্তার তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ৪০০ টাকা রেখে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহীদ মিয়াকে ডেকে টেস্ট করানোর জন্য রোগীকে তার কাছে দেন। শহীদ মিয়া রোগীকে কিছু না বলেই টেস্টগুলো করে তার কাছে তিন হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু হতদরিদ্র রিকসাচালক টাকা না থাকায় বাইরে এসে পরিচিত একজনের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে শহীদ মিয়ার কাছে দেন। ডা. সাবিরুল ইসলামের ওষুধ খাবার পরই আরো সমস্যা দেখা দেয় এরশাদ আলীর।
গতকাল শুক্রবার সুনামগঞ্জের এক ব্যক্তি এরশাদ আলীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে ফ্রি চিকিৎসা করাবেন বলে সুনামগঞ্জ বিএমএ’র সেক্রেটারি ডা. নূরুল ইসলামের চেম্বারে নিয়ে আসেন। এরশাদ এবং তার টেস্ট ও ব্যবস্থাপত্র দেখে ডা. নূরুলের সন্দেহ হলে এরশাদ তার কাছে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। এসময় পাশে সুনামগঞ্জ বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাসও উপস্থিত ছিলেন। অসহায় রোগীর সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বিএমএ নেতৃবৃন্দ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহীদ মিয়া এবং ডাক্তার মো. সাবিরুল ইসলামকে তলব করে রোগীর সঙ্গে প্রতারণার কৈফিয়ত চান। এ সময় শহরের কয়েকজন সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। পরে রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ফেরত দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহীদ মিয়া। ক্ষমা চান ডা. সাবিরুল।
এদিকে এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় ডা. সাবিরুল ইসলাম ও কানন কুমার দে চেম্বারে বসে আছেন। ডা. কানন কুমার দে’র প্যাডে যে ডিগ্রিগুলো আছে তাও ভুলভাবে লেখা আছে। প্যাডে ‘সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে’র নামও ভুল করে লেখা আছে ‘উসমানী’। তার প্যাডে মেডিসিন, মা ও শিশু, চর্ম ও যৌন, ডায়াবেটিস, বাত, ব্যথা, হাড়ক্ষয়সহ আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে অভিজ্ঞ বলে উল্লেখ রয়েছে। ডা. সাবিরুল ইসলামের প্যাডে আলট্রাসনোতে বিশেষজ্ঞসহ মেডিসিন, মা ও শিশু, চর্ম ও যৌন, ডায়াবেটিস, বাত ব্যথা, এলার্জিতে অভিজ্ঞ বলে উল্লেখ রয়েছে। সদ্য পাস করে কিভাবে এতো রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হলেন জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি দুই ডাক্তারের কেউই।
এসময় দেখা যায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মো. শহীদ মিয়া নামসর্বস্ব মিডিয়ার কথিত সাংবাদিককে ফোন করে এই প্রতিবেদকের সম্পর্কে জানতে চায়। এই প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ওই কথিত সাংবাদিকরা তার কল কেটে দেয়। এসময় রিসিপশনে কথা হয় সদর উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের রোকসানা বেগমের সঙ্গে। তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে তিনি সুনামগঞ্জের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বিশ্বজিৎ গোলদারের কাছে দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কমিশনপ্রাপ্ত রিকসাচালক নজরুল মিয়া তাকে ডা. বিশ্বজিতের চেয়ে আরো কম টাকায় ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দিবেন বলে নিয়ে আসেন এখানে। তার কথা বিশ্বাস করে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসলে তাকে কয়েকটি টেস্ট দেয়া হয়। এই সময় অপর রোগী দক্ষিণ সুনামগঞ্জের হাসনাবাদ গ্রামের সিজিল বেগমও পাশে বসা ছিলেন। তিনি জানান, তিনি বাড়ি থেকে পুরাতন বাসস্টেশনে নেমে শহরের উকিলপাড়ায় পাইওনিয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. মালেকা বাহার লাইলির কাছে দেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করলে রিকসাচালক গোলাপ তাকে পাইওনিয়ারে না নিয়ে শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর ডাক্তার তাকে কয়েকটি টেস্ট দেন। লোকগুলোর হাবভাব দেখে তার সন্দেহ হলে তিনি ও রোকসানা বেগম তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চেঁচামেচি শুরু করেন। এর মধ্যেই দেখা গেল পুরাতন বাসস্টেশন থেকে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বাকী বিল্লাহকে দেখাতে আসা বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চিনাকান্দি গ্রামের আলকাস উদ্দিন ও তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে এসেছেন শহীদের কমিশনপ্রাপ্ত রিকসাচালক নজরুল ইসলাম। তারা অন্য রোগীর চেঁচামেচি শুনে বুঝতে পারেন দালালের খপ্পরে নি¤œমানের প্রতিষ্ঠানে চলে এসেছেন। তাই তারাও এখানে না দেখিয়ে মেডিকেয়ারে বিশেষজ্ঞ চেম্বারে চলে যান। এভাবে রোগীপ্রতি ১৫০ টাকা দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহীদ মিয়া রিকসাচালকদের নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মুক্তি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইউনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ কয়েকটি নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার এভাবে অসচেতন ও অসহায় রোগীদের প্রলোভনে ফেলে দিয়ে ধরে এনে টেস্ট বাণিজ্যে মেতে ওঠেছে।
হতদরিদ্র রিকসাচালক এরশাদ মিয়া বলেন, আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল রিকসাচালক গোলাপ মিয়া। সেখানে যাবার পর আমাকে প্রায় ৩ হাজার টাকার টেস্ট দিলে আমি বাইরে এসে ঋণ করে টাকা পরিশোধ করি। আজ ডা. নূরুল ইসলামের চেম্বারে এসে কাগজপত্র দেখালে তারা ডাক্তার সাবিরুল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে ডেকে এনে আমার টাকা আদায় করে দিয়েছেন। আমি খুশি। আমি এদের বিচার চাই।
শহীদ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহীদ মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে শহরের নাম সর্বস্ব কয়েকজন সাংবাদিকের রেফারেন্স দিয়ে তিনি বিষয়টি ঘুরানোর চেষ্টা করেন। পরে তিনি বলেন, রোগী আনার জন্য তিনি কোন দালাল নিয়োগ দেননি এবং তার এখানে কোন নি¤œমানের টেস্টও হয়না। তিনি এসময় তার ল্যাবটেকনেশিয়ান উসমানগণি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে তাকে ধরে এনে দেখান।
সুনামগঞ্জ বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পরই ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক মালিককে ডেকে এনে প্রতারিত রোগীর টাকা আদায় করে দিয়েছি। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের নিঃস্বই করছেনা ভুল চিকিৎসা ও ভুল টেস্টে দিয়ে রোগীকে আরো সংকটে ফেলে দেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!