1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

কৃষিজমির কর্পোরেটায়ন: পাভেল পার্থ

  • আপডেট টাইম :: শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ২.৫৩ পিএম
  • ৫৮০ বার পড়া হয়েছে

কৃষি জমি সুরক্ষার প্রশ্নে রাষ্ট্র ২০১৫ সনে তৈরি করেছে ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন’। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে ‘কৃষিজমিকে’ কেবলমাত্র খাদ্যশস্য উৎপাদনের স্থান হিসেবে দেখা হয়েছে। আইনের প্রেক্ষাপট বা ভূমিকা অংশে কৃষিজমি সুরক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে ‘পরিবেশ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার কথা’। কৃষিজমি কোনোভাবেই কেবলমাত্র খাদ্যশস্য উৎপাদনের জায়গা নয়। এটি এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় বাস্তুসংস্থান এবং এখানে নানা প্রাণী ও উদ্ভিদের যৌথ বসবাসের ভেতর দিয়ে এক জটিল প্রতিবেশব্যবস্থা চালু থাকে। কৃষিজমি জীবন্ত, এর প্রাণ আছে। এটি নানা অণুজীব, পতঙ্গ, কেঁচো, কাঁকড়া, শামুক, সাপ, ছোট পাখি, গুল্ম ও বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদের আবাস ও বিচরণস্থল কৃষিজমি। কৃষিজমি একইসাথে কোনো গ্রামীণ সমাজের বসতিস্থাপনের ইতিহাস এবং কৃষিসভ্যতার এক জীবন্ত দলিল। এটি সামাজিক সংহতি ও নানা বর্গ-শ্রেণির ঐক্যের প্রতীক। কৃষিজমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা প্রকাশ করে। এক এক অঞ্চলের কষিজমি এক এক ঋতু মওসুমে এক এক রঙ ও ব্যাঞ্জনা নিয়ে মূর্ত হয়। কখনোবা ধানের সবুজ প্রান্তর, কখনো হলুদ সরিষার ক্ষেত, কখনো জুমের মিশ্র ফসল আবার কখনোবা রসুনের জমি। কৃষিজমি জলবায়ু সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এবং পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের কৃষিজমিই দুনিয়ার সামগ্রিক টেকসই বিকাশে ভূমিকা রাখে। ভৌগলিকভাবে কৃষিজমি স্থানীয়, কিন্তু এর সামগ্রিক অবদান বৈশ্বিক। উল্লিখিত আইনে কৃষিজমিকে খুবই সংকীর্ণ অর্থে দেখা হয়েছে এবং এটিই আইনের প্রধান দর্শনগত ও মনস্তাত্ত্বিক ত্রুটি।

খাদ্যশস্য উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষিজমি মানুষসহ অনেক প্রাণের অনেক খাদ্যের জোগান দেয় সত্য। কিন্তু কৃষিজমির সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি কৃষিসভ্যতা বিকাশের ভিত্তিস্থল। কৃষিজমির সামগ্রিক অবদান ও সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়ে উল্লেখ করা জরুরি। আইনটির প্রেক্ষাপটের প্রথম বাক্যে একটি ভুল আছে, বলা হয়েছে ‘পরিকল্পিত আবাসনের জন্য কৃষিজমি কমছে’। শব্দটি হবে ‘অপরিকল্পিত এবং জবরদস্তিমূলক আবাসন’। কৃষিজমি হ্রাসের জন্য যে কারণগুলি উল্লেখ করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। এখনে আরো যুক্ত করা জরুরি যেমন, খনিপ্রকল্প, ইটভাটা, বিদ্যুৎপ্রকল্প, আন্ত:রাষ্ট্রিক উন্নয়ন আঘাত, বৃহৎ বাঁধ, বৃহৎ অবকাঠামো, বড় সেতু, রেলপথ, বিমানবন্দর, সেনানিবাস সম্প্রসারণ ইত্যাদি কারণগুলিও। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কৃষিজমি গুলো আজ মূলত বহুজাতিক কর্পোরেট আগ্রাসনে বন্দি। প্রশ্নহীনভাবে এখানে কৃষিজমির কর্পোরেটায়ন ঘটছে।

২.
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছিল এক বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্যারাবন। বাণিজ্যিক চিংড়িঘেরের কারণে এই বন আজ সম্পূর্ণ বিলীন, এমনকি বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের মত বহুপাক্ষিক ব্যাংক এই বনবিনাশে জড়িত। শুধু বন নয়, বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘেরের কারণেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিজমির বড় সর্বনাশটি ঘটেছে আশির দশকের পর থেকে। উপকূলীয় লবনপানির জোয়ারভাটায় এককালে গড়ে ওঠা কৃষিজীবন থেকে বাণিজ্যিক চিংড়িঘেরের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছেন লাখো মানুষ। উপকূলীয় বাঁধ দিয়ে গ্রামের সাথে নদীগুলোর জোয়ারভাটার প্রবাহ আটকে কৃষিজমিতে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের। দীর্ঘসময়জুড়ে আবদ্ধ ঘেরে লবনপানি আটকে থাকায় জমিতে অভ্যন্তরণীয় লবণের মাত্রা বাড়ে এবং এবং জমি ক্রমান্বয়ে আবাদ অনুপযোগী হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (২০১০) দেখিয়েছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৬টি জেলাতেই কৃষিজমি কমেছে এবং সামগ্রিকভাবে উপকূলে ৫.৮৯ ভাগ কৃষি জমি কমে গেছে। যখন জমি গুলো ধান চাষ থেকে বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের পরিবর্তিত হয় তখনই শস্য উৎপাদন কমতে থাকে। ইসলাম ও অন্যান্যরা (২০১১) দেখিয়েছেন বাণিজ্যিক চিংড়ী ঘেরের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের কৃষিজমিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ১৯৭৭, ১৯৯০ এবং ২০০৪ সনের কৃষি জমির ব্যবহার বিশ্লেষণ করে তারা দেখান ১৯৭৭ সনে সেখানে কোনো চিংড়ি ঘের ছিল না। ২০০৪ সনে ৩৬.৪৪ ভাগ কৃষি জমিতে চিংড়ি ঘের তৈরি করা হয় এবং এর ফলে ৬৫.২৬ শতাংশ থেকে কৃষি জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৭.৫৫ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৯২ সালে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৮০ হাজার ১৫ হেক্টর কৃষি জমিতে চিংড়ি চাষ হতো। ২০০৫ সালে তা বেড়ে প্রশ্নহীনভাবে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৪ হেক্টর জমিতে সম্প্রসারিত হয়েছে।
চিংড়ি মহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সংক্রান্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছিল, চিংড়ি মহাল এলাকার কোন খাস জমিই কৃষিজমি হিসাবে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হইবে না। ইতিমধ্যে চিংড়ি মহাল এলাকায় কৃষি জমি হিসাবে প্রদত্ত সকল বন্দোবস্ত এই নীতিমালা জারীর সাথে সাথে চিংড়ী মহাল হিসাবে চিংড়ি চাষের জন্য প্রদত্ত জমি হিসাবে বিবেচিত হইবে। কিন্তু কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের ২ (২) নং ধারায় বলা হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ভূম/শা-৮/চিংড়ি/২২৭/৯১/২১৭, তারিখ-৩০/৩/১৯৯২ ইং পরিপত্রে চিংড়ি মহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক ঘোষিত চিংড়ি চাষের এলাকাসমূহ হলো চিংড়ি মহাল। কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের ৭(৪) নং ধারায় চিংড়ি চাষের জন্য ভূমি জোনিং এর কথা উল্লেখ হলেও শুধুমাত্র পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষাকেই এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষিজমিতে বাণিজ্যিক চিংড়িঘের নির্মাণবন্ধে সুস্পষ্ট বিধান রাখতে হবে, এমনকি বড় কৃষিজমির কোথাও চিংড়ি চাষ করে আশেপাশের জমির শ্রেণি ও বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা যাবে না। চিংড়ি মহাল জোনিং এর কারণ হিসেবে কৃষিজমি সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি আইনে উল্লেখ করতে হবে।

৩.
দেশে যেখানেই কৃষিজমি দখল করে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে সেখানেই ব্যাপক দূষণ ঘটেছে। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জে এই দূষণ তীব্র। গবেষণায় গাজীপুরের মতো শিল্পঘন অঞ্চলের মাটি ও পানিতে ব্যাপক দূষণ লক্ষ্য করা যায়। শিল্পাঞ্চলের আশপাশের মাটিতে ব্যাপক পরিমাণে আর্সেনিক, সীসা ও ম্যাঙ্গানিজসহ নানা ধাতুর ক্ষতিকর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে অধিকাংশ কলকারাখানার বর্জ্যব্যবস্থাপনা নেই এবং কৃষিজমিতে সরাসরি বিপদজনক রাসায়নিক বর্জ্য জমা হয়। এ নিয়ে জমিমালিকেরা নানাসময়ে আপত্তি তুলেছেন, মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। কিন্তু কৃষিজমিনে শিল্পদূষণ ঘটছেই। এতে মাটি নষ্ট হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। সুস্পষ্ট বিধানসহ কৃষিজমিতে শিল্পদূষণ বন্ধ করতে হবে।

৪.
প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন বা আহরণ, ব্যবহার, বাণিজ্য ও বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনার উপরেই গড়ে ওঠেছে পৃথিবীর নানাপ্রান্তের সভ্যতা। এই সম্পদ উত্তোলন বা আহরণের ক্ষেত্রে প্রাণ, প্রকৃতি ও জনজীবনে এর নানামুখী প্রভাব নিয়ে নানাসময়ে প্রশ্ন ওঠে। আহরণÑবৈরিতার বিরুদ্ধে তৈরি হয় জনআন্দোলন। দেখা যায় অধিকাংশ আহরণ প্রকল্পগুলিই হয় অরণ্য, জলাভূমি, কৃষিজমি ও পাহাড়ের মত প্রাকৃতিক বিভিন্ন বাস্তুসংস্থানে এবং এই আহরণ নিয়ন্ত্রণ ও দখলে রাখে বহুজাতিক কোম্পানিগুলি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্থানীয় প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জনজীবন। বাংলাদেশে মূলত: বিভিন্ন খনি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কয়লা, চুনাপাথর, সাদামাটি আহরণ করা হয়। সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোণা, পঞ্চগড়ের সীমান্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলছে দীর্ঘদিন থেকে। তবে বাংলাদেশে আহরণের বৃহৎ প্রকল্পগুলি মূলত: গ্যাস, কয়লা ও চুনাপাথর ঘিরেই।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পুড়িয়ে দেয় বহুজাতিক অক্সিডেন্টাল কোম্পানি গ্যাস খননের নামে ১৯৯৭ সনে, পরবর্তীতে ইউনোকল বন থেকে শুরু করে কৃষিজমি লন্ডভন্ড করে পাইপলাইন বসায় এবং ২০০৮ সনে শেভরণ কোম্পানি বনজুড়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। দিনাজপুরের বড়পুকরিয়া কয়লা খনির ফলে আশেপাশের বিপুল কৃষিজমি আজ নিহত এছাড়া ফুলবাড়ি কয়লাখনিও ছিনিয়ে নিয়েছে আদিবাসী ও বাঙালিদের কৃষিজমিগুলো।

জামালপুরের বকশীগঞ্জ, শেরপুরের ঝিনাগাতী ও নালিতাবাড়ী, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও নেত্রকোণার দূর্গাপুরের সীমান্তঅঞ্চলের টিলাবন ফালি ফালি করে সাদামাটি (চিনামাটি) তুলেই গত এক যুগের ভেতর চাঙ্গা করা হয়েছে দেশের ‘সিরামিক শিল্প’। টিলা ও সীমান্তের কৃষিজমি বিনাশ করেই এই সাদামাটি তোলা হচ্ছে প্রশ্নহীনভাবে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ( ১৯৯৫ সনের ১নং আইন) এর ধারা ৪(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহাপরিচালক দপ্তর হতে  ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ‘পাহাড়, টিলা, ঝর্ণা  ও বন এলাকায় খনন ও বালি উত্তোলনে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়’ (সূত্র: এস, আর, ও নং ১৭৬ আইন/২০০৭)। বিস্ময়করভাবে দেশের কোনো আইনেই কৃষিজমি খনন করে সাদামাটি বা খনিজ আহরণ নিষিদ্ধ নয়। এমনকি কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের ৫ (২) নং ধারায় বলা হয়েছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে মূল্যবান খনিজ সম্পদ থাকিলে উহা আহরণ ও রক্ষাকল্পে সরকার যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। তাহলে কৃষিজমির সুরক্ষা হবে কীভাবে? কৃষিজমিনে সকল ধরণের বাণিজ্যিক খনিজ আহরণ ও খনন নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এর জন্য দরকার সুস্পষ্ট বিধান।

৫.
দক্ষিণ এশিয়ার অভিজ্ঞতায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাবরই প্রাণ, প্রকৃতি ও জীবনে এক দু:সহ যন্ত্রণা তৈরি করেছে। তাই মানুষ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত: ভারতের সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম তো সমসাময়িককালে উন্নয়ন-বাহাদুরিকে দুনিয়া-কাঁপানো জবাব দিয়েছিল। এছাড়ও বৃহৎ শিল্পায়নের বিরুদ্ধে ভারতের গুড়গাঁও, মুম্বাই, গোয়া, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যার জনআন্দোলনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশেও কাপ্তাই বিদ্যুৎ প্রকল্প, আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর, ফুলবাড়ি কয়লাখনি, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি, বিবিয়ানা গ্যাস খনন, লাউয়াছড়াতে গ্যাস সন্ধান, রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প, মাধবকুন্ড ইকোপার্ক, বিজয়পুর সাদামাটি খনন প্রকল্প, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর মতো বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলোও শুরু থেকেই প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরও শতাধিক ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ তৈরির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। নি:সন্দেহে কৃষিসভ্যতার রক্ত বয়ে নিয়ে চলা একটি দেশের জন্য এটি এক নয়াবার্তা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নিশানা করা হচ্ছে কষিকাজে ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত জমিন ও জনপদ। হবিগঞ্জের চান্দপুর-বেগমখান চাবাগানের ক্ষেতল্যান্ড কৃষিজমি বা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের চিনিকলের নামে কেড়ে নেয়া প্রায় ১৮৪২ একর জমি।

৬.
আন্তরাষ্ট্রীয় নানা সমস্যাও বাংলাদেশের কৃষিজমি বিনষ্ট করছে। বিরোধপূর্ণ ভূমি বা সীমানা চিহ্নিকরণে সমস্যা কিংবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উজানে অপরিকল্পিত খনন, বৃহৎ বাঁধ বা প্রকল্প যা বাংলাদেশের কৃষিজমির জন্য তৈরি করছে নানা সংকট। কৃষিজমি সুরক্ষা আইনে আন্ত:রাষ্ট্রিক এ সংকটের প্রসঙ্গটি একেবারেই অনুপস্থিত। অথচ এই সমস্যার কারণে বাংলাদেশ প্রতিদিন হারাচ্ছে বিশাল কৃষিভূমি এবং কৃষিজীবন থেকে উদ্বাস্তু হয়ে মানুষ। শিল্পায়ন, বাণিজ্যিক খামার, বহুজাতিক খনন বা আন্ত:রাষ্ট্রিক উন্নয়ন সবকিছুই আজ নিয়ন্ত্রণ করছে দুনিয়ার দশাসই সব বহুজাতিক কোম্পানি। তারা গোটা দুনিয়ার প্রাণ ও প্রকৃতিকে কর্পোরেট দখলে আনার উন্মত্ত যুদ্ধে নেমেছে। এই অন্যায় যুদ্ধ থামানো জরুরি। কৃষিজমির কর্পোরেটায়ন বন্ধে কৃষিজমি সুরক্ষা আইনে স্পষ্ট বিধান রেখে একে কার্যকর করতে হবে। কারণ কৃষিজমি আমাদের ভূগোল ও সভ্যতার ইতিহাস নির্মাতা, কর্পোরেট কোম্পানির মুনাফার পুতুল নয়।
পাভেল পার্থ: গবেষক ও লেখক।

animistbangla@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!