বিশেষ প্রতিনিধি::
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিসসহ সমমনা আদর্শের ইসলামি দলের প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের বিশ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী। বিএনপি নেতাকর্মীরা এবার তাকে ছাড় দিতে চাননা। ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা মাওলানা শাহীনূর পাশার বদলে বিএনপির প্রার্থী চেয়েছেন। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী। ঘরে বাইরের কোন্দল সামাল দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০০৮ সনের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী এমএ মান্নানের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট নির্বাচনে না যাওয়ায় তিনিও নির্বাচনী মাঠে ছিলেন না। যে কারণে গত একযুগ ধরে রাজনীতির বাইরে তিনি অবস্থান করছেন। বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার বিশাল দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। প্রকাশ্যেই বিএনপির সকল নেতাকর্মীরা তার বদলে এই আসনে অন্য যে কাউকে প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে নিজ দল ও সমমনাদের চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছেন তিনি। নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সবচেয়ে বেকায়দায় আছেন।
জানা গেছে এ পর্যন্ত মাওলানা শাহীনুর পাশার নিজ দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকেই তিনিসহ দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অপর গ্রুপ (মুফতি ওয়াক্কাস) থেকেও আরেকজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সমমনা ইসলামিক দল খেলাফত মজলিস থেকেও আরেকজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সমমনা একই আদর্শের ইসলামিক দল থেকে চারজন প্রার্থীর মনোনয়ন উত্তোলনই তাদের মধ্যে চরম বিভক্তি ও কোন্দলের বহিপ্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া বিশ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপি থেকেই ৬ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এই প্রার্থীদের সবাই একবাক্যে একাট্টা হয়ে মাওলানা শাহীনুর পাশার মনোনয়নের বিরোধীতা করে বিএনপি থেকেই প্রার্থী দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর সঙ্গে তার নিজ দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা (মুফতি ওয়াক্কা গ্রুপ) এডভোকেট সৈয়দ শামসুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলা শাখার সাবেক প্রচার সম্পাদক হাফিজ মাওলানা এনামুল হাসানও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এই প্রার্থীরা শাহীনুর পাশার প্রার্থীতার বিরোধীতায় একাট্টা। এছাড়াও খেলাফত মজলিসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ফয়েজ আহমদও প্রার্থীতা ঘোষণা করে পোস্টার ব্যানারের মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। দু’একদিনের মধ্যেই তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে নিজেদের আদর্শিক ইসলামিক দলগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করাই তার পক্ষে কঠিন বলে মনে করেন অনেকেই।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন জমাদানকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আলী আহমদ বলেন, আমাদের বিএনপির অনেক প্রভাবশালী প্রার্থী রয়েছেন এখানে। যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা রাখেন। আমাদের দাবি দলের যে কোন একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী দীর্ঘ একযুগ ধরে মাঠে অনুপস্থিত, মানুষের সঙ্গেও তার কোন সম্পর্ক নাই। জোটের এমন প্রার্থী আমাদের প্রয়োজন নেই।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল বলেন, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার আমাদের হাইপ্রোফাইল অনেক নেতা আছেন। ছাত্রদলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী অনেক উজ্জ্বল নেতাও রয়েছেন এখানে। আমরা স্থানীয় তৃণমূল বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীদের চাওয়ার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এই আসনে বিএনপির প্রার্থীই চাই। বিএনপির প্রার্থী দেওয়া হলে আসনটিতে আমরাই বিজয়ী হব।
মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।