হাওর ডেস্ক ::
প্রায় এক বছর পর ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে নেমে ব্যাটিং বীরত্বই দেখালেন ইমরুল কায়েস। মূলত তার নান্দনিক ও শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের সুবাদে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায়, যা টপকাতে গিয়ে জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে করেছে ২৪৩ রান। এর ফলে বাংলাদেশ ২৮ রানের জয় নিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো।
গতকালের ম্যাচে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে ছাড়াই খেলতে নামে বাংলাদেশ। সাকিব আগেই বলেছিলেন, তাদের ছাড়াও ম্যাচ জয় করা সম্ভব। সেই কথাই রাখলো টাইগাররা, চমৎকার খেলে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে জয় নিয়ে তারা মাঠ ছেড়েছে।
নিজেদের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচে টাইগারদের এটি টানা একাদশ জয়। গতকালের আগে ২০১০ সালের পর বাংলাদেশের মাটিতে দলটি টানা ১০টি ম্যাচ হেরেছে।
২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের চেপাস জুয়াও ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেন। যদিও ৭.১ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান যখন ৪৮ ঠিক তখনই কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ চেপাসকে বোল্ড করে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন। চেপাসের আউটের পর একে একে বিদায় নেন অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলর, ক্রেইগ আরভিন, সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ের হয়ে আলো ছড়ানো সিকান্দার রাজা ও অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
মাশরাফি, মিরাজ, নাজমুল অপু ও মুস্তাফিজের দাপুটে বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে করেছে ২৪৩ রান। যদিও শেষ দিকে একাই লড়ে গেছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে ১২০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সেন উইলিয়ামসন। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৫০ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। নামের প্রতি তেমন একটা সুবিচার করতে পারেননি সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনালের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান লিটন কুমার দাস।
গতকাল ১৪ বল মোকাবেলায় লিটন আউট হন মাত্র ৪ রান করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে ফজলে রাব্বীও শূন্য রানেই আউট হয়ে ব্যাটিং ব্যর্থতার নমুনা দেখালেন।
ক্যারিয়ারে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নেমে রাব্বীর সুপারফ্লপের দিনে মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমও বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে পারেননি। মাত্র ১৫ রানেই আউট হন।
কিন্তু জাতীয় দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা, একসময়ে তামিমের নিয়মিত ওপেনিং সঙ্গী ইমরুল কায়েস ঠিকই ব্যাটিংয়ে জ¦লে উঠলেন।
এক প্রান্তে অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে আসা যাওয়ার মিছিলে ব্যস্ত সেখানে দলের হয়ে এক বছর পর ওপেনিংয়ে নেমে দারুণ সব শটে বাংলাদেশের ইনিংস মেরামত করতে থাকেন গতকালের আগে ওয়ানডেতে ৭৩ ম্যাচ খেলেন এ ব্যাটসম্যান।
দুর্দান্ত সব শট খেলার দিনে ইমরুল ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় শতক তুলে নেন। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে ইমরুল বলতে গেলে একাই বাংলাদেশের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যান।
৮টি চার ও ৩
টি বিশাল ছয়ের সহায়তায় ১১৮ বলে ক্যারিয়ারের ৩য় শতকে পৌঁছেন কায়েস। গত কয়েকদিন আগে পুত্র সন্তানের বাবা হওয়া কায়েস অর্ধশতকে পৌঁছেন ৬৪ বলে। যেখানে ৪টি চারের সাথে ছিল ১টি ছয়। কায়েস সেঞ্চুরি করার পর নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং-এ। সেঞ্চুরির পর তিনি মাত্র ২২ বলে করেন ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস।
৪৮.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান যখন ৬ উইকেটে ২৬৬, ঠিক তখনই ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং করেন ইমরুল। জার্ভিসের বলে মুরকে ক্যাচ দেয়ার আগে কায়েস করেন ১৪০ বলে ১৪৪ রানের নান্দনিক ইনিংস। ইমরুল আউট হয়ে ফিরলেও বাংলাদেশ পেয়ে যায় একটি শক্ত রানের ভিত। ইমরুলের দিনে সাইফউদ্দিনও তুলে নেন ওডিআইয়ের প্রথম অর্ধশতক। দুর্দান্ত খেলার জন্য ইমরুল ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন। সম্পাদনা : শোভন দত্ত, সালেহ্ বিপ্লব