1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন

বইবিমুখ প্রজন্ম ও স্মার্টফোন নিয়ে যৎকিঞ্চিৎ।। ডা. নূরুল ইসলাম

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮, ৫.৪০ পিএম
  • ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে

খুব সম্ভাবত বাংলাদেশ এই সময়ে একটি অদ্ভূত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। উঠতি বয়সী আমাদের তরুণ ছেলে-মেয়েরা দিনেদিনে বই বিমুখ হয়ে পরেছে। অনেকের সাথে কথা বলে জেনেছি পাঠ্য বই ব্যতিত অন্য কোন বই তারা পড়তে চায় না। এমনকি পাঠ্য বইয়ের অনেক পড়া আছে যেগুলো কদাচিৎ পরীক্ষায় আসে তাও তারা পড়ে না। তরুণ-তরুণীদের পড়ার স্টাইল অনেকটাই পরীক্ষায় পাশ ও চাকুরি প্রাপ্তির নিশানায় পরিনতো হতে চলেছে।
গত ঈদুল আজহায় গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন সময় কাটিয়েছি। সময়ে অসময়ে আমন্ত্রিত হয়ে কিংবা স্বেচ্ছায় আশে-পাশের গ্রামের অনেকের বাড়িতে গিয়েছি। কারো বাড়িতেই পাঠ্য বই ব্যতিত অন্য কোন বই আমার নজরে পরেনি। সব ঘরের এই দৃশ্যটি না হলে মনেমনে আমি খুশিই হবো। কিন্তু আমার মন বলছে প্রায় সব ঘরের অবস্থা একই রকম। এর ভবিষ্যৎ প্রভাব কি হতে পারে, তা নিয়ে মনে অনেক সঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, গ্রাম-গঞ্জগুলোতে খেলাধূলার পরিমানও অনেকাংশেই কমে গেছে। সবকিছুই কেমন যেনো প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছে। ঘরেও প্রাণ নেই, মাঠে-ঘাঠেও প্রাণ নেই। হঠাৎ করে এসব পরিবর্তন একটি সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য মোটেও ভালো কিছু হতে পারে না বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমাদের সময়কার কথা মনে পরে। এইতো সেদিনকার কথা। পাঠ্যবই কেনার সামর্থ্যও অনেকের ছিলো না। কিন্তু পাঠ্য বইয়ের বাইরে যে বইই কারো বাড়িতে, বন্ধুদের কাছে, বড় ভাই-ছোট ভাইদের কাছে, স্কুলের লাইব্ররী থেকে সংগ্রহ করে, দিন হিসেবে ধার করে আমরা পড়তাম। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, কল্পকাহিনী, বিজ্ঞান, গনিত কোন বইই বাদ পরতো না। সুযোগ পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে গোগ্রাসে গিলতাম। আজো মনে পরে কাশেম বিন আবুবক্করের প্রেমের উপন্যাস বাবার ডরে আমি জঙ্গলে গিয়ে পড়েছি।
৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার এক প্রিয় বন্ধু অভাবের তাড়নায় সুনামগঞ্জ শহরের পপি লাইব্রেরীতে চাকরি নেয়। তাকে আমি এরপর থেকে হিংসার চোখে দেখতাম। সে নাকি লাইব্রেরীতেই ঘুমাতো। আমার মনে হতো রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পরে, সে লুকিয়ে লুকিয়ে লাইব্ররীর সব বই পড়ে সাবাড় করে ফেলে। একদিন তারে বলেছিলাম লাইব্রেরীতে রাতে যদি আমাকে থাকতে দেয় তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে লাইব্রেরীতে চলে আসবো। মালিককে বলেও ছিলো, রাজি নাকি হয় নাই!
কতো বই পড়েছি। মাসুদ রানা সিরিজের প্রেমে পরে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে এক নাগারে সিরিজের ১৪৭টি বই পড়ে শেষ করেছিলাম। পরীক্ষার সময় ভালো নাম্বার পেয়েই পাশ করেছি। মেডিক্যাল জীবনে আমার প্রায় বন্ধুদেরই দেখতাম মেডিকেলের বই পাশে রেখে গোগ্রাসে গিলসে নানান রকমের বই।
এক সজ্জ্বনের বাড়িতে নেমতন্ন খেতে গিয়েছিলাম বই নিয়ে। খুশিতো হয়ইনি বরং শুনেছি ভয়ংকর এক বাণী-‘ অ আল্লাহ! এতোগুলান বই পড়বেটা কে?’

বই কিনে আর বই পড়ে কেউ কখনো দেউলিয়া হয় না। আমার মনে হচ্ছে বর্তমান সময়ের আমাদের তরুণ-তরুণীরাই বই না কিনে, বই না পড়ে ধীরেধীরে দেউলিয়াত্বের দিকে হেঁঠে চলেছে। বই, খেলাধূলা ছেড়ে সবাই এখন স্মার্টফোনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অনেকের সাথে কথা বললে বুঝা যায় স্মার্টফোনটাই তাদের সব।
সবার ঘরে, সবার হাতে একটি করে স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমাদের তরুণ-তরুণীরা সত্যিকারের স্মার্ট হয়ে গড়ে উঠতেছেতো? উত্তর যদি নেগিটিব হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে এর একটি বিরাট বিরুপ প্রতিক্রিয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
আঠারো বছরের পূর্বে এদেশের ছেলে-মেয়েদের জন্য স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, স্যোস্যাল মিডিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করতে দেয়া উচিত হবে কি না, তা এখনই অভিবাবক মহলকে চিন্তা করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!