1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ভারতের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৮৮ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে :প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার দেশের যে যে বিভাগ গুলোতে টানা ৩ দিন ঝড়বৃষ্টি হতে পাড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুড়তে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু রোববার থেকে খোলা হতে পাড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে যা জানাল মন্ত্রণালয় সিলেটের মাঠে ভারতকে হারাতে প্রস্তুত বাঘিনীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অতি বৃষ্টিপাতে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা ভাষাসৈনিক ও জাতীয় নেতা সামাদ আজাদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ আজ থেকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্চ ভর্তি পরীক্ষা শুরু পৃথিবীকে গুরুত্ব দিয়ে এডিবির সেফগার্ড পলিসি সংশোধনের দাবিতে সুনামগঞ্জে অভিনব কর্মসূচী

হাওরের উত্তাল আফাল থেকে বাস্তুভিটা রক্ষা করছে কচুরিপানা

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০, ১২.৩৭ পিএম
  • ৩৭১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ৮১টি ইউনিয়ন এখন বন্যা প্লাবিত। বিস্তৃত হাওরে কেবলই জলের থৈ থৈ বিস্তার। আফাল যখন বাস্তুভিটায় আঘাত করে তখন ‘বাবা শাজলাল, শারফিন, মা কালি’র দোহাই দেন হাওরবাসী। তারপরও ভেঙ্গে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা। হাওরের এই জলে দমকা বাতাসে সৃষ্ট আফাল (বিশাল ঢেউ) আতঙ্ক ধরিয়ে দেয় মনে। ভেঙ্গে যায় হাওরের বুকে ডুবে থাকা গ্রামগুলো। তাই আফালের তা-ব থেকে ঘর বাঁচাতে বরাবরের মতো এবারও হাওরের প্রাকৃতিক জলাবন কচুরিপানাই প্রধান ভরসা। উত্তাল ঢেউ থেকে বসতঘর বাঁচাতে এখন কচুরিপানা সংগ্রহে নেমেছেন হাওরবাসী। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন হাওরে নৌকা নিয়ে এই কচুরিপানা সংগ্রহ করে বাড়ির চারপাশে বাশের আড় (বেড়া) দিচ্ছেন তারা। ঢেউ থেকে ঘর বাঁচাতে এভাবেই প্রতি বর্ষায় আবহমান কাল থেকেই সংগ্রাম করেন হাওরবাসী।
হাওরবাসী জানান, কচুরিপানা হাওরে চাষ হয়না। হাওরের বদ্ধ জলাশয় বা খালে জন্ম নেয়। তবে বর্ষায় যখন হাওর জলে ভরে যায়, সবকিছু ছাপিয়ে হাওরে জলের বিস্তার দেখা যায় তখন বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে পানি প্রবেশ করে বাইরে নিয়ে আসে কচুরিপানা। বাতাসের অনুকুলে এসে লেগে সড়কে বা গ্রামের পাশে। তখন ছুটে আসা এই কচুরিপানা আশির্বাদ হয়ে দেখা দেয় হাওরবাসীর কাছে। তারা কচুরিপানা মূল সমেত সংগ্রহ করে নৌকা যোগে নিয়ে আসেন বাড়িতে। সেগুলো বাশের বিশেষ বেড়া দিয়ে আটকিয়ে বসতবাড়ি রক্ষা করেন হাওরের উত্তাল ঢেউ থেকে। বিস্তৃত জলরাশি থেকে বাতাসে জন্ম নেওয়া উত্তা উত্তাল ঢেউ থেকে বসতবাড়ি রক্ষা করতে ঐতিহ্যগতভাবেই এই প্রক্রিয়ায় কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাজে লাগান তারা। বাস্তভিটা রক্ষার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প না থাকা কচুরিপানাই তখন একমাত্র অবলম্বন। এটা সংগ্রহ করতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।

বর্ষায় হাওরের সবগুলো গ্রামই দ্বীপসদৃস হয়ে ওঠে। ক্ষণে খোলা হাওরে দমকা বাতাস আসে। এই বাতাসের বেগ অনেক বেশি হয়। তাই তখন বড় বড় নৌ দুর্ঘটনাও ঘটে এ কারণে। দানবাকৃতির ঢেউ বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে লোকালয়ে। এতে ভেঙ্গে যায় বসবাড়ি। বসতবাড়ি যাতে না ভাঙ্গে তার জন্য আবহমান কাল থেকেই হাওরবাসী কচুরিপানা সংগ্রহ করে আসছেন।
এবার দুই দফা বন্যায় জেলার সবগুলো হাওর এখন জলে টইটুম্বর। বিপুল রূপালি জলরাশি দমকা বাতাসে ঢেউয়ের গর্জন তুলে। সা সা শব্দের সেই গর্জন আঘাত করছে তীরে। গত ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়। তখনো আবার উত্তাল হয়ে ওঠে হাওর। এসময়ও কচুরিপানা সংগ্রহ করেন হাওরের গ্রামগুলোর লোকজন। দশদিনের বিরতিতে আবারও দ্বিতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি হন হাওরবাসী। আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে বিস্তৃত হাওরগুলো। বড় বড় ঢেউ লোকালয়ে আছড়ে পড়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে রাস্তাঘাট, বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এই অবস্থায় হাওরবাসী নিজেদের বাস্তুভিটা রক্ষা করতে গ্রাম ভেঙ্গে কচুরিপানা সংগ্রহ করতে নেমেছেন হাওরবাসী। রবিবার শাল্লা উপজেলার নয়াগাও গ্রামের রাস্তার পাশে আটকে থাকা কচুরিপানা সংগ্রহ করতে বড় বড় নৌকা নিয়ে আসেন হরিপুর, শান্তিপুর, হরিনগর, মুক্তারপুর, রূপসা, বাহাড়া, নয়াগাঁও, নাছিরপুর, রহমতপুর, মন্নানপুর, গোবিন্দপুর, সুখলাইন, পুড়ারপার, শিবপুরসহ ১০-১২টি গ্রামের লোকজন। শুধু শাল্লা উপজেরা নয় অন্যান্য হাওর উপজেলার লোকজনও বাস্তুভিটা রক্ষায় কচুরিপানা সংগ্রহ অভিযানে নেমেছেন।
শাল্লা উপজেলার বাহারা গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, হাওরের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছে। প্রকৃতি যেভাবে আমাদের ক্ষতি করে ঠিক সেভাবে উপকারও করে। রূদ্র প্রকৃতি উত্তাল হাওরে আফাল সৃষ্টি করে গ্রামের পর গ্রাম ভেঙ্গে দেয়। আবার এই প্রকৃতি থেকেই আমরা কচুরিপানা সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে রক্ষা করি। আবহমান কাল থেকেই আমরা এসব করেই জীবনযুদ্ধে নিয়োজিত আছি।
কৃষক সংহতি আন্দোলনের নেতা পিসি দাস বলেন, ১০ দিনের ব্যবধানে আমাদের জেলায় দুটি বড় বন্যা হয়েছে। এতে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। তবে হাওরের ঘরবাড়ি আফালে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বেশি। মানুষের ভিটা ভেঙ্গে যাচ্ছে উত্তাল ঢেউয়ে। পৈত্রিক ভিটা রক্ষা করতে এখন হাওরের মানুষ কচুরিপানা সংগ্রহে নেমেছেন। দলে দলে তারা কচুরিপানা সন্ধান করে গ্রাম রক্ষার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, হাওরের গ্রামগুলো রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা দেয়াল দেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, বর্ষায় উত্তাল হয়ে ওঠে হাওর। তখন চলাচল ঝূকিপূর্ণ হয়। উত্তাল ঢেউয়ে গ্রাম-রাস্তা ভেঙ্গে যায়। মন্ত্রণালয়ে হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে একটি বড় প্রকল্প জমা দেওয়া আছে। এটি অনুমোদন হলে হাওরবাসী নানাভাবে উপকৃত হবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, হাওরের আফালের মুখোমুখি কেউ না হলে এর ভয়াবহতা বুঝাতে পারবেনা। এই ঢেউ আমাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট স্থাপনা বিলীন করে দেয়। তখনই এই কচুরিপানা আমাদের উপকারে আসে। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই কচুরিপানা দিয়েই উত্তাল হাওরের ঢেউকে পরাজিত করে বাস্তুভিটা রক্ষা করে আসছেন।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!