নিজস্ব প্রতিবেদক::
মেঘালয়ের পূর্ব খাসি ও পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড় জেলার জেলা প্রশাসন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেড়াবিহীন এলাকায় অনুপ্রবেশ, জঙ্গি গতিবিধি ও অবৈধ সীমান্ত কার্যকলাপ ঠেকাতে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করেছে। কারফিউ প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং আপাতত দুই মাসের জন্য এই আদেশ কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার ম্যাজিস্ট্রেটগণ – আর.এম. কুরবাহ (পূর্ব খাসি পাহাড়) এবং অভিনব কুমার সিং (পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়)। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই কারফিউর মেয়াদ কমানো বা বাড়ানো হতে পারে।
এরই প্রেক্ষিতে সীমান্তের ওপার, বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার ১২ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ২৮ ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে সতর্ক করে জানানো হয়েছে যে, ভারতের পক্ষ থেকে কারফিউ জারি থাকায় এপারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসএফের পুশ-ইনের (বেআইনি অনুপ্রবেশ) কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ সীমান্তজুড়ে বিজিবি’র টহল বৃদ্ধি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলায় বিস্তৃত ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে ৯০ কিলোমিটার রয়েছে ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতায়। এই সীমান্তের ৮৯ কিলোমিটার স্থল এবং ১ কিলোমিটার জলসীমা নিয়ে গঠিত। সীমান্ত অঞ্চল দুর্গম, পাহাড়ি এবং কোথাও কোথাও কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় পাচার ও অনুপ্রবেশের ঝুঁকি অনেক বেশি।
সিলেটের ৪৮ বিজিবির আওতাধীন দোয়ারাবাজার উপজেলার কিছু এলাকাতেও ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি থাকায়, বিজিবি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিজিবি কর্তৃপক্ষ সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের সাথে বৈঠক করে তাদের সতর্ক করেছে যে, বেআইনি পথে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে তারা বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
নর্থইস্ট নিউজ ও দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকা জানায়, মেঘালয়ে ৪৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকায় এখনও বেড়া নেই। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, ঘন বন ও বিচ্ছিন্ন জনবসতির কারণে এই এলাকায় টহল ও নজরদারি কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ, পাচার এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ মোকাবিলায় প্রশাসন একতরফাভাবে কারফিউ জারি করেছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের জারি করা আদেশ অনুযায়ী, সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত, লাঠি, পাথর, রড বহন, এবং গবাদি পশু, সুপারি, শুঁটকি মাছ, সিগারেটসহ চোরাচালানযোগ্য পণ্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পশ্চিম জৈন্তিয়া পাহাড়ে জিরো লাইনের ২০০ মিটার মধ্যে কারফিউ বলবৎ থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ, শিং মাছ, সুপারি, আর ভারতে থেকে বাংলাদেশে গরু, পেঁয়াজ, চিনি, মসলা, চকলেট, প্রসাধনী ও মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে। তবে এসব চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবি নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ.কে.এম. জাকারিয়া কাদির (পিএসসি) জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মিডিয়া সহযোগিতায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।