1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

সমাজের বিশুদ্ধ মানুষ ছিল জয়ন্ত।। শ্যামল দেব

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২.০২ এএম
  • ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

২০১৭ সালে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উদীচীর জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলনে ঢাকায় জয়ন্ত কুমার সরকারের সাথে আমার প্রথম দেখা। এই বছরই আমি উদীচী শান্তিগঞ্জ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হই। আমরা শান্তিগঞ্জ উদীচী ধামাইল দল নিয়ে ঢাকায় যাই।
দিরাই থেকে উদীচীর বন্ধুরা নাটক নিয়ে যান। তখন থেকেই জয়ন্ত’র সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমার দেখা নিঃস্বার্থ একজন সংস্কৃতিকর্মী সে। ২০১৭ সালে আমি ধামাইল দল গঠন করি। বিভিন্ন এলাকায় দল নিয়ে অনুষ্ঠান করতাম। তখন জয়ন্ত ধামাইল গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। দিরাই উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়ে সে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধামাইল গানের আসর শুরু করে। ‘কুটুম পাখি’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে প্রতিদিন অনুষ্ঠান করা শুরু করে। করোনাকালীন সময় কেন্দ্রীয় উদীচীর একটি জুম মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কেন্দ্রীয় উদীচীর সহ সভাপতি মাহবুব সেলিম বলেছিলেন, ‘কোনো কোনো জেলা থেকেও দিরাই উপজেলা শাখা বেশি কাজ করে।’
আমি ও জয়ন্ত বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে ধামাইল গান সংগ্রহ করতাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো ধামাইল গান প্রাণ ফিরে পাক। আমার উপজেলার ধামাইল কবি প্রতাপরঞ্জন তালুকদারকে আমি চিনতাম, কিন্তু বাড়ি যে টাইলা সেটা জানতাম না। জয়ন্ত’র মাধ্যমেই জানা হয় এবং আমরা প্রতাপরঞ্জন তালুকদারকে নিয়ে কি করা যায় এবং এই গুণী জনকে কিভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরা যায় তা নিয়ে পরামর্শ করি। জয়ন্ত ও লোকগবেষক সুমনকুমার দাশ দাদার সাথে পরামর্শ করে প্রতাপরঞ্জন তালুকদারের প্রথম সংকলন ধামাইল গানের বই প্রকাশ করি। বই প্রকাশের পরে আমি ও জয়ন্ত পরামর্শ করি কিভাবে বইগুলো পাঠকের হাতে পৌঁছানো যায়। আমরা বিভিন্ন উপজেলায় বিয়ে বাড়ির অধিবাসের ধামাইল গানের অনুষ্ঠানকে টার্গেট করি। রাতে বিয়ে বাড়ির অধিবাসে, তুলনামূলক যারা ধামাইল গান একটু ভালো গাইতে পারেন তাঁদের হাতে উপহার স্বরূপ বই তুলে দিতাম। জয়ন্ত প্রতাপরঞ্জন তালুকদারের স্মৃতিচারণ করতো। এভাবে আমরা কতো রাত যে কাটিয়েছি এর কোনো হিসেব নেই। এই কাজে আমাদের মাঝে কোনো ক্লান্তি ছিল না।
শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে বর্বরোচিত হামলার পরে থমথমে পরিস্থিতিতে আমি আর জয়ন্তই প্রথম উদীচীর ব্যানারে শান্তিগঞ্জ ও দিরাইয়ে মানববন্ধন করি। কেন্দ্রীয় উদীচীর টিমের সাথে জয়ন্ত ও আমি শাল্লার পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাই।

প্রতাপরঞ্জন ধামাইল উৎসব করতে সব চেয়ে বেশি শ্রম ছিলো জয়ন্ত’র। এতো সুন্দর একটি ধামাইল উৎসব জয়ন্ত’র দ্বারাই সম্ভব হয়েছিলো। আমাদের দু’জনের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া ছিলো। আমরা একে অন্যের পরামর্শ নিয়ে কাজ করতাম। সে কাজ করার জন্য পাগল হয়ে যেতো। গত জুনের বন্যায় সে দিরাইয়ের মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছে। প্রতিদিন খাবার নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে থেকেছে, ত্রাণ দিয়ে প্রতিদিন ছুটেছে মানুষের ঘরে ঘরে।
জয়ন্ত ধামাইল গানের দুটি ধামাইল দল গঠন করেছিলো- ‘কালনির কূলে’ ও ‘পিইয়াইন’ ধামাইল দল। এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি করে অকালেই চলে গেলে প্রিয় মানুষটি। জয়ন্ত কুমার সরকার একজন শুদ্ধ মানুষ ছিলো। ছিলো সুনামগঞ্জে ধামাইল ও লোক সংস্কৃতির একজন অন্যতম সেবক, পরিচর্যাকারী, নিঃস্বার্থ সংগঠক, নির্মোহ সাংবাদিক, নিবেদিত সংস্কৃতিকর্মী। দিরাই-সুনামগঞ্জ-সারাদেশ-ভারত ও প্রবাসের শিল্পী জগতের প্রিয়মুখ ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল খুনসুটি প্রিয় আমার জয়ন্ত। ফুটফুটে দুটি ছেলেমেয়ে ও উনার স্ত্রী ও পরিবার কেমনে সইবে তাঁর এই অকাল প্রয়াণ। একজন মানবিক মানুষকে আমরা হারালাম। আসছি বন্ধু শীঘ্রই, সেখানেও আমরা এই চর্চা অব্যাহত রাখবো।
লেখক : সংস্কৃতিকর্মী

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!