1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

মুজিব বর্ষে স্বার্থকতা আসুক স্বদেশে-পরবাসে।। সুশান্ত দাশ

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০, ৯.১৩ এএম
  • ৪০৬ বার পড়া হয়েছে


১৯৮১ সাল। স্বাধীনতা বিরুধী তৎপরতা তুঙ্গে।স্বাধীনতা বিরোধীদের তৎপরতা রোধে ১৯৮১ সালের মার্চে গঠিত হয় ‘সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী নাগরিক কমিটি।’ ড. আহমদ শরীফ এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন ও নাগরিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছিলেন। তিনি যে-প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তাতে তাঁকে নিয়ে বিলাপ করা সাজে না; বিলাপ শুনতে পেলে তিনি বারণ করে বলতেন- ‘বিলাপ নিরর্থক, তোমরা কার কাছে বিলাপ করে আবেদন জানাচ্ছো? বিলাপের কিছু নেই, তোমাদের মেনে নিতে হবে সত্য হচ্ছে একদিন অনুপস্থিত হয়ে যাওয়া; থেমে যাওয়া’। জীবন হচ্ছে দুই গভীর অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ আলোর ঝিলিক-নিরর্থক কিন্তু রুপময়। কিন্তু আমাদের রক্ত বিলাপ করতে চায়, হাহাকার করতে চায় অস্তিত্ব,নির্বোধ অশ্রু অজান্তে বেরিয়ে এসে জানতে চায়- ডক্টর আহমদ শরীফ নেই,তিনি মহাকালের অন্তর্ভুক্ত; আমরা শোকাভিভূত। আর এই শোকাতুর অবস্থায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্যার হুমায়ুন আজাদ ‘ধর্মানুভূতির উপকথা ও অন্যান্য’ বইয়ে লিখেছেন ডক্টর আহমদ শরীফ: বামনের দেশে মহাকায়।

এখানে স্যার ডক্টর আহমদ শরীফ জীবনাবসান নিয়ে বিলাপ করতে নারাজ কিন্তু রক্ত-স্রোতের কথা ঠিকই মেনে নিয়েছেন। কারন রক্ত যখন দেখে তাঁর অস্তিত্ব বিলীনের মুখে কিংবা দেশ জাতির স্বাধিকার বা মা ও মাটির অস্তিত্ব নিয়ে মুখামুখি হয়ে হাড়তে বসেছে বা জিতলেও মুখামুখি লড়াইয়ের সামনে প্রকৃষ্ট বা প্রচ্ছন্ন রূপে দুমূখো শয়তানের বাচ্চা বন্য শুয়রের মতো কাজ করেছে তখন রক্ত ঠিকই বিলাপ করে। বিলাপ করে বলতে চায়- “রাজাকারের নলকূপের পানি বীরাঙ্গনার মুখে। রাজাকারের লাথি খেয়ে গর্ভবতী মায়ের বাচ্চা প্রসব”।
রক্ত আরো বিলাপ করে বলতে চায়,যে-পিতা মা-মাটি ও পতাকা এনে বিশ্বের বুকে পরিচয় এনে দিয়েছে তারই মৃত্যুকাম্য ১৫ আগষ্টের কুশী-লব চিন্তাশক্তি কিংবা ঘৃনিত গোলাম আযমের পৃষ্টপোষক রাজাকার,আলবদর আল-শামস বাহিনীর বংশধররের বাচ্চাদের মুজিব শতবর্ষের উদযাপনে গদগদ ভাব দেখে।
অবাকলাগে এই অপশক্তিগুলি রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন স্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বড় বড় দলে নিবিড় ভাবে গড়ে উঠার রণ কৌশল দেখে। এরা ৭০’র নির্বাচনও মেনে নেয়নি এরা ছিলো ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের মুসলীমলীগের স্থানীয় নেতা। এরাই ৭১ এর ২৫ শে মার্চ কালো রাত্রি থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্য জানোয়ারের কাজটি করেছিল। তারা দলিত করতে চাইছিলো বাঙ্গালীর স্বাধীনতার স্পৃহাকে।
অপরদিকে পাক মিলিশিয়ারা, নামে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে চিনলেও বাস্তবে চিন্তো না। চিন্তে সাহায্য করতো এই দালালরা,রাজাকাররা। আর রাজাকারদের গুরু হিসেবে কাজকরতো শান্তি কমিটির সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধে সারা বাংলার ন্যায় সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকাখ্যাত দিরাই,শাল্লা, জামালগঞ্জ থেকে আজমিরীগঞ্জ,খালিয়াজুড়ী সহ সমুদয় অঞ্চলটি নিয়েই এর ব্যপ্তি ছিলো। দেখা গিয়েছে অনেক মুক্তিযোদ্ধা এক এলাকার যুদ্ধ শেষ করে আরেক এলাকায় সহায়তা করেছেন। এর মধ্যে দাস পার্টির বিস্তৃত ছিলো প্রায় সর্বত্র। এই দাস পার্টির সবচেয়ে ছোট বালককে নিয়ে অঞ্জুলী লাহিড়ী লিখেছেন- উদ্যম এই তরুন বালকটির নাম ছিলো সামাদ। বয়স ১৬। জামালগঞ্জ (ব্রীজ ধ্বংস) যুদ্ধে জগৎজ্যোতি ছিলো তাঁর সঙ্গী। রণাঙ্গনে থাকাবস্থায় হঠাৎ জ্যোতি দেখে সামাদ ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। তাঁর বড় বোনকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়েছে। অনেক ধস্তাধস্তি আর বাঁচাও বাচাঁও বলে চিৎকার করেও রক্ষা পায়নি সামাদের বোন। তার চিৎকার আর অসহায় কান্না গ্রামের মানুষকে ভারী করে দিয়ে গিয়েছে। প্বার্শবর্তী ঘরের আজিজুর, সামাদের বোনের কান্না শুনে বাঁচাবার জন্য এগিয়ে এসেছিল,পাক বাহিনীর লোকজন হাটের মাঝে গাছের গুড়ির সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করছিলো। সামাদ আর বোনের খবর পায়নি। অত:পর ৬ ফুট লম্বা এক মিলিশিয়া সৈন্য সামাদের বুকে বেনেট ঢুকিয়ে তাঁর জীবন কেড়ে নিয়েছিলো। কিন্তু তাঁর বোনকে তো মিলিশিয়ারা চিন্ততো না,চিনিয়ে দিয়েছিলো স্থানীয় আলবদর রাজাকাররা (সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ-১৩৬/১৩৭)।
২০শে নভেম্বর ১৯৭১ শান্তি কমিটির সহায়তায় হাওরের ছেলে তালেব উদ্দীন আহমেদকে (হাতিয়া,দিরাই) সভামঞ্চে প্রথম দফায় দাঁড় করিয়ে তাঁর পরিচয় দিয়ে অনবরত বুটের লাথি মারতে থাকে। তাঁর পিঠে, চুলের মুঠি ধরে তাঁকে সহ অন্য দুইজনকে দাঁড় করানো হলো। এ দৃশ্যটি তখন নির্মম ও হৃদয় বিদারক মনেকরে সভাস্থলের অনেক আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় দফায় আবার বেয়নেটের আঘাত তালেবের উপর। আঘাতে তাঁর সামনের দাঁতগুলো ভেঙ্গে পড়ে,অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ে। তারপর কোমড়ে দড়ি বেঁধে পথে পথে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় তালেবকে নিয়ে মিছিল করে দালালরা। পথে পথে তালেবকে নিয়ে হাসি,টিটকারি নানা অশ্রাব্য মন্তব্য করে। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় যতো না মারে পাঞ্জাবীরা তার চেয়ে বেশী মারে দেশি রাজাকাররা (সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ-১৩৪/১৩৫)।
১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর; যুদ্ধের এক পর্যায়ে ম্যাগজিন লোড করে শত্রুর অবস্থান দেখতে মাথা উঁচু করতে মুহুর্তে ১টি গুলি জগৎজ্যোতির চোখে বিদ্ধ করে। মেশিনগান হাতে উপুড় হয়ে পাশের বিলের পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন জ্যোতি । পাকবাহিনীর সহযোগী রাজাকারেরা রাতে জ্যোতির লাশ খোঁজ পেয়ে পাকবাহিনীকে খবর দেয় এবং জ্যোতির মৃতদেহটি আজমিরীগঞ্জ বাজারে নিয়ে যায়। রাজাকাররা জ্যোতি হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য জ্যোতির অর্ধমৃত দেহ কে আজমিরীগঞ্জ গরুর হাটে একটি খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে পেরেক মেরে জনসমক্ষে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা জ্যোতির নিথর দেহটি কোন সৎকার ছাড়া ঝুলে থাকে । এক সময় জ্যোতির দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় কুশিয়ারা নদীতে। জ্যোতির লাশটি সনাক্তকরন থেকে খুঁটির সংগে ঝুলিয়ে পেরেক মারা; জনসম্মুখে অমানুষিক নির্যাতন কাজটিও করেছিল পাকি দোষর রাজাকাররা।
শুধু তাই নয় এই রাজাকাররা আট দিন থেকে দু-বছরের কোলের শিশুকে পর্যন্ত ছাড় দেয়নি যেমন- এক বৃদ্ধা বয়সের ভারে শরীর থর থর করে কাঁপলেও স্পষ্ট করে বলছিলেন আমার ছেলের বয়স আট,তাকে মেরে ফেললো দায়ের এক কোপে। কোলে ছিলো দুবছরের মেয়ে, টান দিয়ে নিয়ে আছাড় মেরে শেষ করে দিলো, স্বামীর বুকে গুলি-অনবরত,রক্ত ঝড়ছে, সেই রক্তের ওপর দিয়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে – – – – (দাস পার্টির খোঁজে-১০৭)।
এই ভাটি অঞ্চলের হাজার বছরের বাঙ্গালীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। আর এসব অগনিত ঘটনার মাঝে আরো অনেক লোম হর্ষক ঘটনাতো রয়েই গিয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীরা এখানে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের চেনা দূরের কথা এখানে আসাটাই ছিলো দুস্কর ব্যাপার। কারন এই জায়গাগুলো এতোই প্রত্যন্ত অঞ্চল যে যা ছিলো যোগাযোগ বিহীন। সময়টাও ছিলো বর্ষা। তারমানে পরিস্কার-যে পাক হানাদাররা নখে-দর্পনে খুটিয়ে খুটিয়ে শান্তি কমিটির সদস্যদের মগজে রাজাকারদের সহায়তায় এই অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে মুক্তিবাহিনীর লোকদের খোঁজতো। চিহ্নিত করে নিতো এদের বাপ-দাদার ভিঠা। জ্বালিয়ে দিতো তাদের ভিঠে ভারি। তাদের এহেন কুকর্মের সাথে জড়িত থাকার কথা মানুষের মুখে মুখে থাকলেও তা বিভিন্ন পুস্তকে বিভিন্ন তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে। এইসব পুস্তকের মধ্যে তখনকার সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু রচিত ‘সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ’থেকে (৮০পৃ:)একটি তালিকা নিম্নরূপ-

মুক্তিযুদ্ধে এই অপদার্থরা জুলিয়াস সিজারের অনুগত রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্থনির ভাষণের পরিণতি যেমন ওদের মাথায় কাজ করেনি ঠিক অনুরূপ ভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষান সম্পর্কেও তারা ভাবতে পারেনি ৯ মাস পরে এই ভাষনটই কার্যকর হয়ে দাঁড়বে। কারন এটা মা ও মাটির বিশ্বাস, মা মাটির আশীর্বাদ। পৃথিবীতে মা ও মাটি সম্ভ্রমহীন অবস্থায় থাকতে পারে না। মায়ের ছেলেরা মেনে নিতে পারেনা। কারন এটা ভয়াবহ অবিচার।

দেশ স্বাধীনতা হওয়ার পর যখন এই প্রথম মুজিব বর্ষ পালন হতে যাচ্ছে হাওরের ভেড়ামোহনার পাড়ে ঠিক তখনই জগৎজ্যোতিদের আত্মত্যাগের কথা মনে পড়ছে; মনে পড়ছে এপাড় থেকে কালাই গংদের “দেখি শুনি বলিনা কোন আপদে পায়না”র চাহনি;এর অন্যপাড়ে জ্যোতিকে(আজমিরিগঞ্জে)যীশু খৃষ্টের মতো জনসম্মুখে ক্রুশবিদ্ধ করে খুঁটির সাথে পেরেক মেরে নির্যাতন করা;দেহ চিহ্নিতকরণের নামে তাঁর মার সামনে নির্যাতনের তীব্রতা দেখিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া আরো ভাসছে জ্যোতির মায়ের অশ্রুহীন ভাষাহীন বুক ফাঁটা কান্না। মুজিবর্ষের প্রোগ্রামে জ্যোতি,তালেব সামাদের মতোই একই মতাদর্শের দেশমাতৃকার কাজের সারথী হাওরের কৃতি সন্তান মান্যবর রাষ্ট্রপতি সহ আরো অনেক পূজ্যব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন জাতীয় পর্যায়ের নন্দিত সিনেমা-টেলিভিশন অভিনয় শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক এবং সংগীত শিল্পীগণ সহ স্থানীয় লোক শিল্পীদের সমাগম।
এছাড়াও গ্রামীণ বারোয়ারি মেলা, কৃষি ও গৃহস্থালী উপকরণ প্রদর্শনী, ষাঁড়ের লড়াই, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ফানুস উৎক্ষেপণ, পুতুল নাচ, রক্তদান কর্মসূচি সহ শান্তির কবুতর উড়ানো হবে। এতো সমস্ত ব্যস্ততার মাঝে হয়তো আমার ক্ষুদ্র হাতের কাঁচা লেখাটি সবার নজড়ে নাও আসতে পারে। তবুও বিদেশের প্রবাসে টেমসের তীর থেকে কুশিয়ারা-কালনী-মেঘনার ভেরামোহনায় হাওর উৎসবে সূচনা লগ্নে শাল্লা সমিতির সদস্য হিসেবে স্বশরীরে উপস্থিত না হতে পারলেও মনের আকুতিতে শেয়ার করে নেয়াটাই-বা কম কিসের।
বাংলা নব বর্ষের নাম উচ্চারন করলে যেমন সম্রাট আকবরের নাম স্বার্থকতায় আসে তেমনি মুজিব বর্ষেও স্বার্থকতা আসুক স্বদেশে-পরবাসে প্রতিটা বাঙ্গালির। এপাড় ওপাড় মিলে সারা বিশ্বে জেগে উঠুক বাঙ্গালি। প্রাণে প্রাণে প্রাণ মিলোক বাঙ্গালির।
৭১এর পরাজিত শক্তি নিপাতযাক! ১৫আগষ্ট কুচক্রি নিপাতযাক। জয় বাংলা।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!