মৌসুমী ফল হিসেবে লিচুর অনেক সুনাম। ১০৫৯ সহ¯্রাব্দের দিকে চীনে প্রথম লিচু চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশেও লিচুর চাষ হচ্ছে। ফল হিসেবে মৌসুমী এই লিচু সকলেরই পছন্দ। খেতেও সুস্বাদু। লিচুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি থাকে। লিচুতে বিদ্যমান ফাইবার আমাদের দেহের জন্য উপকারি।
লিচু সাধারণত পরিপক্ক হতে ৮০ থেকে ১১২ দিন সময় লাগে। কিন্তু বর্তমানে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অতিলোভের কারণে সুস্বাদু রসালো এই ফল অপরিপক্ক অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই অপরিপক্ক লিচু আমাদের শরীরের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। অপরিপক্ক লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন এ এবং মিথাইলিন সাইক্লোপ্রোপাইল গ্লাইসিন নামে দুটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। সাধারণত পরিপক্ক লিচুতে এই রাসায়নিক পদার্থ থাকেনা। হাইপোগ্লাইসিন এ ও মিথাইলিন সাইক্লোপ্রোপাইল গ্লাইসিন-এর প্রভাব শরীরে গ্লুকোজের (শর্করা) পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে শিশুদের মাথা ব্যথা, খিচুনি, বমি, অজ্ঞান হওয়া ও অবশ হয়ে যাওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একে বলে অপঁঃব ঊহপবঢ়যধষরঃরং ঝুহফৎড়সব। তাই অপরিপক্ক লিচুর এই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। খালি পেটে লিচু খেলেই বিষক্রিয়া হয় এমন একটি ধারণা আছে। খালি পেটে সাধারণত শর্করার পরিমাণ কম থাকে। তাই খালি পেটে অপরিপক্ক লিচু খেলে রক্তে গ্লুকোজ (শর্করা) কমে খিচুনি হতে পারে। তাই লিচু খেতে সাবধানতার পাশাপাশি শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বেশি। অনেক সময় শিশুরা লিচুর বীচি খেয়ে ফেলে। যা শ্বাসনালিতে আটকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই রসের লিচু যাতে আমাদের জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
[ডা. সৈকত দাস, এমবিবিএস (চট্টগ্রাম), ডিসিএইচ (শিশুরোগ-ইনকোর্স), বি.এস.এম.এম.ইউ; সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএমএ, সুনামগঞ্জ]