1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জ কারাগারে সীমাহীন দুর্নীতি-২: নিম্নমানের খাবারের অধিক দাম

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮, ১.০৩ পিএম
  • ২৭৪ বার পড়া হয়েছে

বিন্দু তালুকদার::
অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বন্দীদের কাছ থেকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রতিদিন মোটা অংকের টাকা আদায়ের অনেকগুলো খাতের মধ্যে একটি হলো কারা ক্যান্টিন। টাকা জমা দিয়ে ক্যান্টিন থেকে পছন্দমত খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করেন কারাগারের ভেতরের বন্দীরা।
কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা কারা ক্যান্টিনে যে দামে জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়, আর কোথাও এত দামে জিনিসপত্র বিক্রি হয় না। দাম শুনলে সাধারণ মানুষ অবাক হবেন। পাঁচ থেকে দশগুণ বেশি দামে কারা ক্যান্টিনে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হয়। এছাড়া বন্দীদের খুবই নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে অর্থ হাতিয়ে নেয় কারা কর্তৃপক্ষসহ বন্দীদের কাছ থেকে টাকা আদায়কারী সিন্ডিকেট।
কারাগার থেকে ফেরত আসা লোকজন জানিয়েছেন, ২৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২০০ টাকায়, ২০ টাকার আলু ২০০ টাকা, ৩৫ টাকা হালির ডিম ১৪০ টাকা, ১৫০ টাকার তেলাপিয়া মাছ ৬০০ টাকা, ১৮০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগির মাংস ৭০০ টাকা, ৩০০ টাকার দেশী মুরগি ৮০০ টাকা, ৫০০ টাকার গরুর মাংস ১২০০ টাকা, ডারবি সিগারেট ৬৫ টাকার প্যাকেট ১১০ টাকা, ১২০ টাকার সিগারেট ২০০ টাকা, আকিজ বিড়ি ১৭ টাকার স্থলে ৪০ টাকা, ৪০ টাকার লেবুর হালি ২০০ টাকা, ৮০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ ৮০০ টাকা, ৫৫ টাকার চিনি ১১০ টাকা ও ৪০ টাকা কেজির আতপ চাল ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনই শতশত লোকের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে টাকা আদায় করে সেই টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করা হয়।
অভিযোগকারীদের দাবি, কারা ক্যান্টিনের ইজারাদার তাদেরকে জানিয়েছেন ক্যান্টিনটি ইজারা নেয়ার জন্য জেল সুপারকে প্রতি মাসে দেড়লাখ টাকা, জেলারকে ৭০ হাজার টাকা, ডেপুটি জেলারকে ৫০ হাজার টাকা, সুবেদারকে ৪০ হাজার টাকা, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিকে ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।
করাবন্দীদের প্রতিদিন সকালে আধাসেদ্ধ আটার রুটি ১টি ও কম দামের গুড়, দুপুরে সামান্য ভাত ও আধা সেদ্ধ ডাল, রাতে ভাতের সাথে নিম্নমানের আধাসেদ্ধ সবজী, ১০-২০ গ্রাম ওজনের এক টুকরো পাঙ্গাস মাছ দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী মাছের জাত পরিবর্তন করার কথা থাকলেও প্রতিদিনই শুধুমাত্র পাঙ্গাস মাছ বন্দীদের খাবারে দেয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ বিশেষ দিবসে সকল কারাবন্দীদের জন্য উন্নত মানের খাদ্য দেয়ার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে তা হয় নামমাত্র।
বাজারের পঁচা সবজী বন্দীদের জন্য মসলা ছাড়াই আধাসেদ্ধ করে দেয়া হয়। যার কারণে দরিদ্র পরিবারের বন্দীরা ছাড়া সবাই অতিরিক্ত মূল্যে কারা ক্যান্টিন থেকে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করেন।
কারাগার ফেরত দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন,‘আমি একটা মামলায় ১ মাস ২২ দিন সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলাম। কারাগারের ভেতরে বন্দীদের যেসব খাবার দেয়া হয় তা খাওয়ার মত নয়। গরিব লোকজন বিপদে পড়ে এসব খাবার খায়। যাদের টাকা আছে তারা ক্যান্টিন থেকে কিনেই খায়। তবে যে চড়া দামে জিনিসপত্র বিক্রি করা হয় তা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যাবে না। ২০-২৫ টাকার জিনিস ২০০-২৫০ টাকা বিক্রি করে তারা। ১৫০ টাকার তেলাপিয়া মাছ ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। কারাগারের এসকল অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে কারা কর্তৃপক্ষ জড়িত। ভয়ে কেউ কিছু বলতে চায় না।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী পারভেজ আহমদ একটি মামলায় জামিন না পেয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে ১১ দিন কারাগারে ছিলেন। তিনি দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরকে বলেন,‘সুনামগঞ্জ কারাগারের ভেতরের অবস্থা খুব খারাপ। ভয়ে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় না। খাবারের মান খুব বাজে। সকালে গুড় দিয়ে একটা রুটি, দুপুরে আধাসেদ্ধ ডাল ও রাতে পাঙ্গাস মাছের যে তরকারি ও সবজি দেয়া হয় তা খাবারের উপযুক্ত নয়। তাই বাধ্য হয়ে সবাই ক্যান্টিন থেকে ২০ টাকার জিনিস ২০০ টাকা দিয়ে কিনে খায়।’
ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গনেশপুর নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান একটি মামলায় জামিন না পেয়ে ৬ মাস ছিলেন সুনামগঞ্জ কারাগারে। গত ১৩ মে তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন। কারাগারের ভেতরে বন্দীদের খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন,‘আমি ৬ মাস জেলে ছিলাম, একদিনও জেলের দেয়া কিছু খেতে পারিনি। পুরো ৬ মাসই ক্যান্টিন থেকে কিনে খেয়েছি। জেলে খুব নিম্নমানের খাবার দেয়া হয়। যে সবজী ও ডাল দেয়া হয় তা খাওয়া যায় না। জেলের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে দিরাইয়ের কয়েদি নানু দেওয়ান। প্রতিবাদ করলেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তাই কেউ এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারোর। ’
সুনামগঞ্জ শহরের হাছননগরের বাসিন্দা শাহ ফরহাদ দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরকে বলেন,‘কারাগারের ভিতরে খাবারের ক্যান্টিন আছে কিন্তু এতে আলুর কেজি ১০০ টাকা। শীতকালে টমেটো যখন ২০ টাকা কেজি তখন বিক্রি করা হয় ১৫০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৯০০ টাকা কেজি। এগুলো আবার জেলের কিচেন থেকে চুরি করা সব মাল। আসামিদের খাবারের দৈনিক ডায়েট চার্ট অনুযায়ী আসা সবজি ও মাছ-মাংস ১০ ভাগের দুই ভাগ রান্না করা হয়। আর বাকিগুলো এনে তিনগুণ দামে ক্যান্টিনে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনের খাবারে কোন একটি শাকের পাতা সবজি হিসেবে দেওয়া হয়। বাদ বাকি পানি। যারা কোন মতে টাকা যোগাড় করতে পারে তারা তিন-চার গুণ দামে কিনে এনে মেস করে খেতে পারে। আর যারা এত টাকা যোগাড় করতে পারে না তাদের জেলের অখাদ্যই খেতে হয়। ’
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের পরিদর্শক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হায়দার চৌধুরী লিটন বলেন,‘জেলা কারাগারের ভেতরে অনিয়ম নিয়ে নানা অভিযোগ শুনা যাচ্ছে। যতদ্রুত সম্ভব একটি শক্তিশালী তদন্তটিম গঠন করে এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন।’
তবে জেলা সুপার আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছেন, যারা জেল থেকে বের হওয়ার পর নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ ও কারা ক্যান্টিনের অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের অভিযোগ করছেন তাদের এসব অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সব ধরনের খাদ্যদ্রব্য কারা ক্যান্টিনে বিক্রি করা হয় না। যেসব পণ্য বিক্রি করা হয় তা গায়ে উল্লেখিত মূল্যেই বিক্রি করা হয়। বন্দীদের কোন সময়ই নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। যখন যেসব পণ্য বাজারে পাওয়া যায় তাই তাদের খাবারে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. এমরান হোসেন দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরকে বলেছেন,‘জেলা কারাগারের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
(সৌজন্যে: দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!