1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন

সুনামগঞ্জ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের টাকা ব্যবহার নিয়ে নানা প্রশ্ন

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৯, ২.৫৭ পিএম
  • ২৫২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কার্গো ছিনিয়ে বিপুল সম্পত্তি উদ্ধার করেছিলেন সুনামগঞ্জের ৫নং সেক্টরের টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীনতাপরবর্তী ওই সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছিল প্রায় ২৫ লক্ষ টাকায়। এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা স্বাধীন দেশের ভেঙ্গেপড়া শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি কলেজকে অনুদান দেওয়া হয়েছিল। কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় শেষে আরো প্রায় ১০ লক্ষ টাকা রয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধ বিধ্বস্থ অভাবপীড়িত অঞ্চলে এই বিপুল টাকা নিয়ে তখন রাজনীতিও শুরু হয়। কিন্তু সৎ ও সাহসী মুক্তিযুদ্ধের বালাট সাব সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মোতালেব সম্পত্তি উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। উদ্ধারকৃত সম্পক্তি আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে দেওয়া হলে সেগুলো বিক্রি করে ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকদের উদ্যোগে ১৯৭৯ সনের ৩০ জুন ‘বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে এই টাকা ব্যংকে সংরক্ষণ করে ভালো কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দীর্ঘদিন পরে সেই টাকা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। তাই ট্রাস্ট নীতিমালা অনুযায়ী ট্রাস্টের টাকা ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন সুনামগঞ্জের বালাট সাব সেক্টরের আপসহীন মুক্তিযোদ্ধা সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব মালেক হুসেন পীর। গত ১৪ মার্চ তিনি ট্রাস্ট সভাপতি ও জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করে সম্পাদিত দলিল মতে টাকা ব্যবহারের আবেদন জানান। পাশাপাশি ট্রাস্টের টাকা দলিলমতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরের লিখিত আবেদন থেকে জানা যায়, ট্রাস্ট দলিলের ৬নম্বর দফায় ফিক্সড ডিপোজিট থেকে বার্ষিক লভ্যাংশের ৯০ ভাগ টাকা জেলার উপযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ভরণপোষণে, শহিদ স্তম্ভ নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় এবং অন্যান্য মানবকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার শর্ত রয়েছে। আবেদন থেকে জানা যায় শর্ত লঙ্গন করে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাস্টের লভ্যাংশের টাকায় স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের আপ্যায়ন, শাড়িলুঙ্গি প্রদানে ব্যবহার হচ্ছে। অল্প কিছু টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে। নিয়ম মতে ছাত্র মেধাবৃত্তি বা ছাত্র কল্যাণে তেমনভাবে লভ্যাংশের টাকা ব্যবহার হচ্ছেনা। ট্রাস্টের মোটা অংকের টাকা থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা পড়ালেখায় সহযোগিতা পাচ্ছেনা। এতে অনেকেরই শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। আবেদনকারীর মতে এই টাকার লভ্যাংশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের শাড়ি লুঙ্গি ও আপ্যায়নের এখন আর প্রয়োজন নেই। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার সঙ্গে স্বাধীনতা, বিজয়, পয়লা বৈশাখ ও ঈদোৎসবেও উৎসবে আলাদা ভাতা দিয়ে থাকে। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাগণ সরকারি হাসপতালে চিকিৎসা সহায়তাও পেয়ে থাকেন। তাই এই ট্রাস্টের টাকায় তাদেরকে নামকাওয়াস্তে সহযোগিতারও আদৌ প্রয়োজন নেই। আবেদনকারী উল্লেখ করেন, নিয়মানুযায়ী জেলা প্রশাসক স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেবেন এবং আনুষঙ্গিক আপ্যায়ন করবেন। ট্রাস্টের টাকায় সেটা করার কোন যুক্তিকথা নেই। মুক্তিযোদ্ধা মালেক পীর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ের দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ব্যয় করারও দাবি জানান।
জানা গেছে বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতিটাস্টের ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং এখন পর্যন্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা (পালাক্রমে) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাস্টে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সংগঠকদের সন্তানরাও রয়েছেন।
ট্রাস্টের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এডভোকেট সালেহ আহমদ বলেন, দলিল মতে টাকা ব্যবহার উচিত। আমি এ বিষয়ে আগামী সভায় লভ্যাংশের টাকা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার প্রসঙ্গে কথা বলব।
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি টাস্ট স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিরল উদ্যোগ। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী শত্রুদের সম্পত্তি ছিনিয়ে এনে সেগুলো বিক্রি করে ব্যংকে সংরক্ষিত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যয় করার কথা ছিল। ট্রাস্ট দলিল করে কিছু অর্থ সংরক্ষিত হলেও দলিলমতে সেটা ব্যবহার হচ্ছেনা। দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সহায়তা পাচ্ছেনা। অবিলম্বে দলিল মতে টাকা ব্যবহার, বিশেষ করে লভ্যাংশের টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের পড়ালেখায় ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই টাকায় প্রতি বছর প্রশাসনের ডাকে এসে আমাদের টাকা খরচ করে সংবর্ধনা ও সম্মাননা নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা।
ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ছালিক আহমদ বলেন, ট্রাস্টের টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেই ব্যবহার হয়। তবে শিক্ষাবৃত্তিতে তুলনামূলক কম ব্যবহার হয়। বোর্ড অব ট্রাস্টিদের সিদ্ধান্তেই লভ্যাংশ ব্যবহার হয়। ট্রাস্টিরা সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!