1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৭ অপরাহ্ন

সপরিবারে কেন হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুকে ।। মুনতাসীর মামুন

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩, ৮.৩৩ পিএম
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

বলা হয়ে থাকে, বিপ্লবের নায়কদেরও বিপ্লব গ্রাস করে নেয়। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের পর থেকেই বোধ হয় এই প্রবাদের শুরু। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটেছে। গান্ধীজিকে কি হত্যা করা হয়নি? কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে এর একটি সপরিবারে কেন হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুকেপার্থক্য আছে।
পার্থক্যটি হলো, ওই সব ক্ষেত্রে নায়ককেই বিনাশ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা বধূ, ছোট শিশু, মহিলা কেউ বাদ যায়নি। এ রকম নৃশংস ঘটনা পৃথিবীতে কমই ঘটেছে।

সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে ষড়যন্ত্রকারীরা একটি পটভূমি তৈরি করেছিল। এবং তাতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন উগ্র বামপন্থী মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুল মতিন প্রমুখ, যাঁরা ছিলেন একসময় বঙ্গবন্ধুর বন্ধু। আরো ছিল অপেক্ষাকৃত ‘বামপন্থী’ তরুণ আবদুল হক, সিরাজ সিকদার প্রমুখ। এরা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিরা। জাসদের কথাও বা ভুলি কিভাবে? সেনাবাহিনী ছিল পাকিস্তানি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের হাতে, যাদের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দিয়েছিল। তারা জানান দিচ্ছিল, রক্ষী বাহিনীকে মূল বাহিনী করা হচ্ছে। স্বাভাবিক খাদ্যাভাব ছিল। আমেরিকা খাদ্য সাহায্যের চালান আটকে দিয়েছিল।
ওই সময় একমাত্র ব্যাপকহারে সহায়তা করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এদের প্রচারণার মূল বিষয় ছিল পাকিস্তানের বদলে ভারতীয়রা এখন বাংলাদেশকে উপনিবেশ বানাতে চায়। শেখ মুজিব হচ্ছেন তাদের পুতুল। এই প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ভাসানী।

অপপ্রচারের আরেকটি দিক ছিল। শেখ কামালকে ‘ডাকাত’ হিসেবে প্রচারণা চালানো। বেগম মুজিবকে দুর্নীতির হোতা বলে উল্লেখ করা এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অনেককে দুর্নীতিবাজ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বা তাঁর নিজের পরিবারের যে কিছুই ছিল না তা প্রমাণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যখন ত্যক্তবিরক্ত হয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবেন ‘বাকশাল’ নিয়ে, তখনই বলা হলো তিনি স্বৈরতান্ত্রিক। খুব সতর্কতার সঙ্গে একই সমান্তরালে এসব ঘটনা ঘটছিল ও প্রচারণা চলছিল।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা আমেরিকা ও তার সঙ্গীরা এবং ‘ইসলামী’ দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। তা ছাড়া পাকিস্তানের পরাজয় আমেরিকা মেনে নিতে পারেনি। দেশের অভ্যন্তরে যে অশান্তি চলছিল তাতে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে সিআইয়ের ইন্ধনকে অনেকে উড়িয়ে দেন না। মুজিব হত্যাকারী লে. কর্নেল ফারুক বলেছিলেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশ থেকে ইসলাম হঠিয়ে দিচ্ছেন। অতএব, তাঁকে হত্যা করা উচিত। অথচ বঙ্গবন্ধুই ইসলামী আদর্শ মনে রেখে ইসলামিক ফাউন্ডেশন করেছিলেন।

এভাবে একটি পটভূমি তৈরি করা হয়েছিল, যাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে যৌক্তিকতা প্রদান করা যায়।

‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে রহস্য নেই’—লিখেছিলেন শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী; কিন্তু ‘চক্রান্ত ছিল’। এই মন্তব্যের সত্যতা নিয়ে আজ আর দ্বিমত নেই। পরবর্তীকালের ঘটনাগুলো এর উদাহরণ, বিশেষ করে লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ও বিএনপির উত্থান তা প্রমাণ করে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন কে? জেনারেল জিয়া। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেসামরিক-সামরিক আমলাতন্ত্র ও পাকিস্তানপন্থী দলগুলো। আন্তর্জাতিকভাবে সৌদি-পাকিস্তানি চক্র, আমেরিকা-চীন। জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, যা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। পাকিস্তানের নির্দেশে একাত্তরের খুনিদের দলগুলোকে নিয়ে তিনি বিএনপির ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, যাতে আরো যোগ দেন দেশবিরোধী রেনিগেড কিছু রাজনীতিবিদ। জাসদের হঠাৎ উত্থান, বিশেষ করে কর্নেল তাহের ও মেজর জলিলের পার্টির তাত্ত্বিক ও প্রধান হওয়াকে অনেকে মনে করেন এসব ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় ফ্রন্ট। আরেকটু পেছনের ইতিহাস দেখলে দেখব, ১৯৭১ সালেই মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুণ নেতাদের অনেকের প্রকাশ্যে তাজউদ্দীন আহমদের বিরোধিতা, খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একাংশ ও আমলাতন্ত্রের ষড়যন্ত্র। অথচ বঙ্গবন্ধু তো ২৫ মার্চের আগে চার ছাত্রনেতা ও অন্য নেতাদের সব জানিয়ে গিয়েছিলেন।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি জারি করেছিলেন খন্দকার মোশতাক। আর জিয়াউর রহমান সেই অধ্যাদেশটিকে পঞ্চম সংশোধনীর অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ঘাতকদের বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত সেই পুরস্কার ও ইনাম দানের পালা অব্যাহত ছিল। আরো কৌতূহলের বিষয় যে খন্দকার মোশতাক ৫ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে এক গেজেট নোটিফিকেশনে জেলহত্যা তদন্তের জন্য তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করেন, জিয়াউর রহমান সেই তদন্ত কমিটি বাতিল করে দিয়েছিলেন। বিএনপি ও তার সহযোগীরা বরাবর ১৫ আগস্টকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বলেও চালিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু এটি যে সর্বৈব মিথ্যা, পরবর্তী ঘটনাবলিই তার সাক্ষী। সোহরাব হাসান যথার্থই লিখেছেন, বিরুদ্ধবাদীরা বলেন, আওয়ামী লীগই নাকি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছিল। যদি সেটাই সত্য হয়ে থাকে, জিয়াউর রহমানের দল কেন মুজিব হত্যার দায় কাঁধে নিচ্ছে? আওয়ামী লীগের যে অংশ ১৫ আগস্ট চক্রান্তে জড়িত ছিল তারা এখন কোথায়? খন্দকার মোশতাক মারা গেলেও তাঁর সব সহযোগী মারা যাননি। তাঁরা কি আওয়ামী লীগ করছেন, না অন্য পার্টি করছেন? ১৫ আগস্টকে যারা ‘নাজাত দিবস’ হিসেবে পালন করত, তারাই বা কোন দলের? বিদেশে মুজিব হত্যাকারীদের পাসপোর্ট করে দিয়েছে কোন সরকার? (যুগান্তর, ১৫.০৮.২০০৫)।

১৫ আগস্ট সম্পর্কে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ বলেছেন, কিসিঞ্জার ও সিআইএ এই হত্যাকাণ্ডের উদ্যোক্তা। কিছুদিন আগে ব্রিটিশ সাংবাদিক ক্রিস্টোফার হিচিন্স একটি বই লিখেছেন, নাম ‘ট্রায়াল অন হেনরি কিসিঞ্জার’। হিচিন্স নথিপত্র দিয়ে প্রমাণ করেছেন, কিসিঞ্জার বাংলাদেশ সফরের সময় মার্কিন দূতাবাসে বসেই ১৫ আগস্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘গো অ্যাহেড’ সিগনাল দেন।

ভারতের প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক নিখিল চক্রবর্তী বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দুই মাস পরই লিখেছিলেন, বিশ্বের রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মার্কিন ক্লায়েন্ট সরকার স্থাপন করতে হবে। মাধ্যম হবে ঘুষ, ব্ল্যাকমেইল ও হত্যা। কিসিঞ্জার যে বেইজিংয়ে মাওয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তা ঢাকায় যে জঘন্য কাণ্ড ঘটেছে সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরই হত্যাকারীরা যেভাবে সহজে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানে আশ্রয় পেল, তা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র ছিল এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে।

ইন্দিরা গান্ধী তখন ক্ষমতায়। তাঁর বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণ, জর্জ ফার্নান্দেজ প্রমুখ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তাঁরা একে আখ্যায়িত করেছেন ‘সম্পূর্ণ বিপ্লব’ বলে। ইন্দিরা গান্ধী সিপিআই নেতা ভূপেশ গুপ্তকে তখন বলেছিলেন, বিরোধীরা শুধু তাঁর মৃত্যু নয়, তাঁর সরকারের অর্জিত সব সুফলকেও ধ্বংস করতে চায় এবং এর পেছনে অভ্যন্তরীণ প্ররোচনা ছাড়া বহিঃশক্তির ইন্ধনও আছে।

ইন্দিরা গান্ধীর সেই অনুমান ভুল বলি কিভাবে, যখন দেখি ‘বিপ্লবী’ ফার্নান্দেজ মহানন্দে চরম গণবিরোধী বিজেপি সরকারের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন।

মোহিত সেন লিখেছেন, সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কমিউনিস্ট নেতাদের একটি চিঠি নিয়ে কুেসাবিন এলেন দিল্লি। কুেসাবিন সোভিয়েত পার্টির হয়ে ভারতীয় ডেস্ক দেখতেন। তিনি সিপিআই নেতাদের কাছে সেই চিঠি ও কিছু দলিলপত্র হস্তান্তর করেন। চিঠির একটি কপিও করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল পড়ার পর ধ্বংস করে ফেলতে। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ স্থাপনে যাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। উপমহাদেশের তৎকালীন সেই তিন নেতা হলেন—ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো। মস্কো থেকে প্রেরিত সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, প্রথম দুজন নেতাকে এর মধ্যে এই ষড়যন্ত্রের কথা জানানো হয়েছে। সিপিআই নেতাদের অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তাঁরা যেন প্রভাব খাটিয়ে ইন্দিরা গান্ধীকে বোঝান ষড়যন্ত্রের বিষয়টি হালকাভাবে না নিতে। কুেসাবিন আরো জানিয়েছিলেন, ভুট্টোকে বিষয়টি সরাসরি জানানো হয়নি। কারণ ভুট্টো কমিউনিস্টদের, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোটেই বিশ্বাস করতেন না। বলে রাখা ভালো, ভুট্টো বিশ্বাস করতেন মার্কিনদের। কিছুদিন পর জানিয়েছেন মোহিত সেন, কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে ফিদেল কাস্ত্রোর সই করা একটি চিঠি এলো ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতাদের কাছে। কাস্ত্রো জানিয়েছিলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বা মার্কিন ষড়যন্ত্র চলছে। কেউই গুরুত্ব সহকারে তা নেননি। মোহিত সেন অবশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি যুক্তরাষ্ট্রই ছিল এর হোতা। তবে ইঙ্গিতটি স্পষ্ট সোভিয়েত এই ষড়যন্ত্র করেনি, করলে কুেসাবিনকে দিল্লি পাঠানো হতো না। তা হলে বাকি থাকে আমেরিকা ও তার ক্লায়েন্ট স্টেট পাকিস্তান।

উপমহাদেশে সপরিবারে প্রথম নিহত হন বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা। এতে ভুট্টো সহায়তা করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়। স্ট্যানলি ওলপোর্ট ভুট্টোর যে জীবনী লিখেছেন তাতে এর ইঙ্গিতও স্পষ্ট [প্রমাণসহ]। যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক বিশ্ব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো—এটি নিক্সন-কিসিঞ্জার মানতে পারেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল পাকিস্তানের জন্য চপেটাঘাত। এটি ভুট্টো ও পাকিস্তানের সামরিক এস্টাবলিশমেন্ট মেনে নিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর পর ভুট্টোকেও যেতে হয়। মার্কিন তত্ত্ব অনুযায়ী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সামরিক কর্তারা [দুই জিয়া] ক্ষমতায় আসেন এবং মার্কিন সাহায্যে এক দশক ক্ষমতায় থাকেন। এর আগে একই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল চিলিতে। আলেন্দেকে হত্যা করে পিনোশেকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।

বিএনপি আমলে, এমনকি শেখ হাসিনার আমলেও সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়ে বলা হতো এবং অনেক বিএনপি-জামায়াত অ্যাপলজিস্ট ও ‘নিরপেক্ষ’রা বলতেন এবং বলেন, একদল বিপথগামী সেনা সদস্য শেখ মুজিবকে হত্যা করেছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় দুই ডজন সেনা কর্মকর্তার আত্মস্মৃতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তাই ফারুক-রশিদদের ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন, এমনকি জিয়াউর রহমানও। কিন্তু কেউ বঙ্গবন্ধুকে জানাননি। [বিস্তারিত আমার লেখা ‘বাংলাদেশি জেনারেলদের মন’]।

৪৮ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়ে রায় হয়েছে। এ সময়ে বিএনপি ও পাকিস্তানপন্থীরা যে প্রচারণা চালিয়েছিল, তার মূলকথা ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা একটি তাত্ক্ষণিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা। তাদের এই প্রচারণার লক্ষ্য ছিল ঘাতকদের রক্ষা এবং সমাজের সর্বস্তরে পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে মামলায় যেসব নথিপত্র উত্থাপন করা হয়েছে তার আলোকে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা ও সংবিধান পরিবর্তন এবং সিভিল সমাজের কর্তৃত্ব অপনোদন—সব একসূত্রে গাঁথা। এসব ঘটনার পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল, তা বলাই বাহুল্য।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হয়েছে, তাদের পৃষ্ঠপোষক বা দল বিএনপি-জামায়াত হীনবল হয়েছে। কিন্তু তাতে কি সেই ষড়যন্ত্রের শিকড় উৎপাটিত হয়েছে? হয়নি। এবং সে কারণেই শেখ হাসিনাকে ২২ বার খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। ভেবে দেখুন, পরাজিত পাকিস্তানপন্থীদের কাউকে একবারও হত্যার চেষ্টা হয়নি [এবং আমরা তা সমর্থনও করি না]। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু বা তাঁর আদর্শের শত্রুদের ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কেন, কারা এবং কী কারণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা হত্যা করল সে সম্পর্কে এখনো আমাদের জ্ঞান সীমিত। এ কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র উদঘাটনে একটি কমিশন হওয়া উচিত, যাতে ষড়যন্ত্রকারীদের শিকড়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কেনেডি হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ারেন কমিশন গঠিত হয়েছিল। সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।

লেখক : ট্রাস্টি, গণহত্যা জাদুঘর
(সৌজন্যে দৈনিক কালের কণ্ঠ)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!