1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
‘তৃতীয় বিয়ে’ নিয়ে কী ভাবনা শাকিব খান? বেগম জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে পাটানো হয় এমপি মানিকের ছোট ভাইয়ের ইন্তেকাল বৃহস্পতিবার জানাজা আজ মহান মে দিবস ধর্মপাশায় ইউপি সদস্যের শূন্য পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসানের ঘর নির্মাণ করে দেবেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান বেনজিকে গ্রে ফ তা রে দাবীতে সিলেটে দু র্নী তি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামে গণজমায়েত ও মিছিল সিলেটে যুবদল সভাপতি টুকুকে কারাগারে প্রেরণের প্র তি বা দে বি ক্ষো ভ মিছিল হবিগঞ্জে ট্রাক-পিকআপ মুখোমুখি সং ঘ র্ষে প্রাণ গেল ২ জনের লন্ডনে চুপিসারে ‘দ্বিতীয় প্রাক-বিয়ের অনুষ্ঠানে’ অনন্ত-রাধিকা!

সময়টা আমাদের জন্য খুব কঠিন: পরিকল্পনামন্ত্রী

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩, ৭.৫৯ এএম
  • ৬১ বার পড়া হয়েছে

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম::
মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ডলার সংকটে ‘কঠিন পরিস্থিতির’ মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়ে সতর্ক করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান; বলেছেন, সময়টা এখন ‘অস্থির’, সামনে আরও নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।

তার দৃষ্টিতে উৎপাদন বাড়িয়ে এবং বৈধপথে রেমিট্যান্স আসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি বন্ধ করা ছাড়া এই সংকট থেকে বের হওয়া কঠিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাপ্তাহিক আয়োজন ইনসাইড আউটের এবারের অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুবই কঠিন। কেননা, বিশ্ব বাজার খুবই অনিশ্চিত।

“যদি ইউক্রেইন যুদ্ধ কিছুটা শান্ত হয়, যেটার কোনো তাৎক্ষণিক সম্ভাবনা আমি দেখছি না, আমি মনে করি আমরা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে রয়েছি।”

ইংরেজি ভাষায় এ আলোচনা অনুষ্ঠানের এবারের আলোচ্য বিষয় ছিল বাজেট ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয় ইনসাইড আউটের পর্বটি।

চলমান ডলার সংকটের সমাধান কী- এমন জিজ্ঞাসায় মন্ত্রী বলেন, “আমাদের বেল্ট আঁটসাঁট করতে হবে, কম খরচ করতে হবে এবং অপচয় করা যাবে না। আরও কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা করতে হবে।”

এক্ষেত্রে দেশে ধান, মাছ, মুরগিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কঠিন সময় যদি নাও হয়, নিশ্চিতভাবে আমরা অস্থির সময়ের মধ্যে আছি। সামনে অনেক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। তবে সব অস্থিরতা ভেঙেচুরে যাবে এমন না। আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।

“ডলার হচ্ছে সর্বজনীন বৈশ্বিক মুদ্রা, প্রত্যেকে ডলার চায়। আমরাও চাই, অন্য সব দেশও চায়। বিদেশ থেকে পণ্য কিনতে আমাদের ডলার দরকার। আমরা যদি বেশি কিনি, বেশি ডলার দরকার। ফলে যা ঘটেছে, সম্প্রতি আমাদের রপ্তানি কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে এবং আমাদের আমদানিও কোভিডের পর বেশ বেড়ে গিয়েছে। এখন আমরা আমদানি কমাচ্ছি, উপার্জন এবং সঞ্চয় করার চেষ্টা করছি।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির জন্য আমাদেরকে আরও অনেক বেশি রপ্তানি করতে হবে। এখন আমাদের একটাই আইটেম, গার্মেন্টস। আমরা যদি ওষুধ, খাদ্য, সবজি রপ্তানি করতে পারি, তাহলে আমরা আরও বেশি উপার্জন করতে পারব।

“ডলার বাঁচাতে আমদানি কমাচ্ছি, কিন্তু আমদানিও প্রয়োজনীয়। টাকার মান কমিয়ে আমরা আরও রপ্তানি বাড়াতে পারি।”

ঈদের আগে আরও বেশি পরিমাণে রেমিটেন্স আসবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “তারা সবসময় একই পরিমাণে টাকা পাঠায় না। যখন ঈদ আসে, তারা বেশি টাকা পাঠায়। পরবর্তী কোরবানি ঈদ, যা ২-৩ সপ্তাহে আসছে, আমি মনে করি এখন বেশি রেমিটেন্স আসবে।

“বিদেশের মাটিতে আমাদের যে ভাইবোনেরা কাজ করে, আমরা তাদেরকে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে থাকি, আমরা এটাকে ৩-৪ শতাংশ করতে পারি, যাতে তারা আরও বেশি করে পাঠায়। এসবের মাধ্যমে আমরা এই সময়ের ডলার সংকট এড়িয়ে যেতে পারি।”
video

লোডশেডিং থেকে উত্তরণ কীভাবে

ডলার সংকটে কয়লা আমদানিতে সমস্যার পর লোডশেডিংয়ের ফিরে আসা নিয়েও প্রশ্ন ছিল মন্ত্রীর কাছে।

এই খাত নিয়ে এক যুগের গর্ব ছিল সরকারের, এখন কী হবে? এই জিজ্ঞাসার জবাবে মান্নান বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাই হল বিষয়। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট চালু রাখার জন্য আমাদের জ্বালানি প্রয়োজন। এটা কয়লা, গ্যাস, ডিজেল প্রভৃতি। এই সব কিছুর জন্য আমাদের ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

“আমরা ডলারের সংকটে আছি, আগের আলোচনায় বলেছি। এর আগেও দেনা আছে আমাদের, যেটা আমাদের পরিশোধ করতে হয়। এটা এমন সময়, যখন আমরা কিছুটা সংকটের পর্যায়ে রয়েছি। আমাদের এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা পরিবারেও ঘটে।

“আমাদেরকে হিসাবি হতে হবে। বিশেষ করে আমদানির ক্ষেত্রে। আমাদেরকে এমন কোনো জিনিস আমদানি করা ঠিক হবে না, যা জরুরি নয়। বিলাসবহুল কার, বড় এয়ারকন্ডিশনার, এমন বড় বড় জিনিস আমাদেরকে এড়াতে হবে।

“যেটা প্রয়োজন, কেবল সেটাই আমদানি করতে হবে। আমাদেরকে বেশি বিক্রি করতে হবে, আরও পোশাক, আরও ওষুধ, আরও সবজি, মাছ ও অন্যান্য।”
সময়টা আমাদের জন্য খুব কঠিন: পরিকল্পনামন্ত্রী

কাতার থেকে এলএনজি আমদানির নতুন চুক্তি পরিস্থিতি সহজ করবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “নিশ্চয়। কাতার আমাদেরকে অনেক বছর ধরে এলএনজি সরবরাহ করছে। তাদের জন্য ভালো বাজার এবং তারা খুব ভালো বিক্রেতা। আমরা আশা করি, এই ডিফিকাল্ট সময় উৎরে যেতে পারব।”

গত দেড় বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৭৫ শতাংশ বেড়ে গেলেও দাম অতটা বাড়ানো যায়নি। এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “এটা খুবই অস্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি। জনগণ পছন্দ করছে না, কিন্তু আমাদেরকে দাম বাড়াতে হচ্ছে। আপনি সবকিছু ভর্তুকি মূল্যে দিতে পারেন না। আমরা অনেক বেশি দামে জ্বালানি কিনছি, এ কারণে আমাদের বিদ্যুৎও বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।

“অনেক বছর ধরে আমরা ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি, সেই টাকা স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিক্ষা প্রভৃতি থেকে নিয়ে এখানে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসব ক্রমান্বয়ে, একবারে নয়। কম গতিতে, ক্রমান্বয়ে; তবে সুস্পষ্টভাবে আমরা ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসব।”

মুডি’স রেটিং নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

বাংলাদেশের সার্বভৌম রেটিং কমানোর পর ব্যাংক খাতের শক্তিশালী ছয়টি কোম্পানিরও সূচক এক ধাপ অবনমন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেটিং সংস্থা মুডি’স।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “এতদিন আইএমএফ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছিল সরকারকে, এখন নতুন করে এল মুডি’স রেটিং। তারা পেশাদার। তারা আপনাকে কোনো প্রেসক্রিপশন দিচ্ছে না, তারা বলছে না এটা করো, এটা করো না।”

“দেখি, মুডি’স শেষ পর্যন্ত কী বলে। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। এই প্রতিবেদন খুব সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে। যেভাবে আমরা আইএমএফকে সিরিয়াসলি নিয়েছি, সেভাবে মুডি’সকেও সিরিয়াসলি নেব।”

মুডি’সের প্রতিবেদন পুরোটা পড়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রতিবেদনের শেষে তারা বলেছে, বাংলাদেশ এমন খারাপ জায়গায় নেই, যেখানে থাকতে পারত।

“কারণ, বাংলাদেশ উচ্চ সুদে আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার থেকে ঋণ নেয় না। আমরা ঋণ নিই স্বল্প সুদ, সফট টার্ম ও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে থাকি বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও অন্যান্যদের কাছ থেকে। এই খুব স্বল্প সুদে।”

মান্নান বলেন, “মুডি’স বলছে, যেহেতু এখন বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ আছে, কিছুটা বিপদ সামনে আছে। তবে তারা বলছে, এটা বিপদ অতটা প্রাণঘাতী হবে না। এটা অর্থনীতিকে মেরে ফেলবে না, এই অবস্থায়ও অর্থনীতি বাঁচতে পারবে।”
সময়টা আমাদের জন্য খুব কঠিন: পরিকল্পনামন্ত্রী

মূল্যস্ফীতি কমবে কীভাবে

বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসার যে লক্ষ্যের কথা বলেছেন, সেটি কীভাবে অর্জন হবে, সেই ব্যাখ্যা তিনি দেননি। পরিকল্পনা মন্ত্রীর কাছে সেই ব্যাখ্যা আছে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল।

জবাবে তিনি বলেন, “বর্তমানে ৯ শতাংশের কাছাকাছি থেকে ৬ শতাংশে নিয়ে আসা, এটা অসম্ভব না, তবে খুব কঠিন হবে।”

উন্নয়নশীল দেশে মূল্যস্ফীতি ‘থাকবেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, বর্ধনশীল অর্থনীতিতে ঘাটতি বাজেট খুব সাধারণ ঘটনা। ঘাটতি অর্থায়ন প্রাথমিকভাবে মূল্যস্ফীতির দিকে ধাবিত করে। সব উন্নয়নশীল দেশ মূল্যস্ফীতির চাপের সময় পার করছে।

“আপনি যদি মূল্যস্ফীতি না চান, তাহলে কোনো নতুন বিনিয়োগ নেই, সব কিছু নিয়ন্ত্রণে এবং কোনো প্রবৃদ্ধিও নাই। আপনি যদি প্রবৃদ্ধি করতে চান, অর্থনীতির আকার বাড়াতে চান, আপনি বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়ান, তাহলে সেটা মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যাবে।”

রপ্তানি বাড়ানো, আমদানি কমানোর পাশাপাশি বাজারে নিত্য পণ্যের সরবরাহ ঠিক রেখে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ সরকার নিচ্ছে বলে জানান মান্নান। তিনি বলেন, “দুই নীতির সমন্বয়ের মাধ্যমে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানির উন্নয়ন এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, এসবের সমন্বয়ের মাধ্যমের মূল্যস্ফীতি কমানো যেতে পারে।”

“কিন্তু নীতি দিয়ে কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? উপার্জন এবং সঞ্চয় করার মাধ্যমে। আপনি কীভাবে উপার্জন করবেন? বেশি করে রপ্তানি করুন। আপনি কীভাবে সঞ্চয় করবেন? আমদানি কমান, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমান।”

পাশাপাশি মৌলিক পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মৌলিক পণ্য বলতে খাদ্য এবং সাধারণ পণ্য, যেগুলো দেশেই উৎপাদন করা হয়। আমরা বাজারে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে এই কাজটা করতে পারি। এতে কিছুটা সময় লাগবে।”

বাজার নিয়ে কারসাজি: ধরা ‘কঠিন’

নিত্যপণ্যের দর নিয়ে কারসাজি হলেও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না– এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমরা কারসাজিকারীদের দেখি না, যদি দেখি, তাহলে আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় আনি। কিন্তু কারসাজিকারীরা আড়ালে থাকে, এ কারণে তাদেরকে ধরা খুব কঠিন।

“আমাদের মজুদের বিরুদ্ধে, নির্ধারিত দামের বেশি দামে বিক্রি করার বিরুদ্ধে আমাদের আইন রয়েছে। কিন্তু মাঠে এটার বাস্তবায়ন কঠিন। তাহলে সরকার কীভাবে এটার সঙ্গে খাপ খাওয়ায়। সরকার নিজেই বাজারে যায় এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে কিছু পণ্য বিক্রি করে।”

তিনি বলেন, “সরকারকে এক্ষেত্রে খুব ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হয়। যখন পণ্যের দামে বৃদ্ধি ঘটে, মাঠে পণ্য নিয়ে যায় এবং কম দামে বিক্রি করে, সেটা দাম কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।”
সময়টা আমাদের জন্য খুব কঠিন: পরিকল্পনামন্ত্রী

অর্থবছরের শেষে এসে কাজের গতি কেন

অর্থবছরের শুরুতে উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি এবং শেষ দিকে এসে গতি বাড়ার কারণে কাজের মান কমে কি না, এমন প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ সূচক বক্তব্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এখানে দুটো বিষয়, মান এবং সময়। আমরা দুটো ক্ষেত্রে দুর্বল, আমাকে স্বীকার করতেই হবে। অনেক ক্ষেত্রে কাজের মান আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করা হয়, সেভাবে হয় না।

“হয়ত সেখানে দুর্নীতি আছে, হয়ত অলসতা আছে, মানুষ কাজ করে না, যেসব লোককে কাজ তত্ত্বাবধান করার কথা তারা সেখানে যায় না।”

সময় মত কাজ শেষ করতে না পারার কারণ হিসেবে অন্যান্য নানা জটিলতার পাশাপাশি মানুষের আলস্যকেও দায়ী করেন তিনি; বলেন, “জাতীয়ভাবে আমরা সময়ানুবর্তী নই, আমাদের শ্রমিকরা ছুটিতে যায়, ঈদের ছুটিতে গেলে ১৫ দিনে আসে না, বাংলাদেশি হিসাবে আপনিও জানেন।”

আর কী কী কারণ দায়ী, তা জানিয়ে তিনি বলেন, “বাস্তবায়ন অন্য অনেক কারণে প্রভাবিত হয়। আমি বস, মাঠ পর্যায়ে আমার প্রকল্প পরিচালক আছে, প্রকল্প পরিচালক আমার অধীনস্ত, সে আমার জন্য সবক্ষেত্রে কাজ করে, আমার স্বাক্ষর নেয়। কিন্তু আমাকে পাওয়া যায় না, আমি বিদেশে থাকি, আবার আমার সই নিয়ে ইতস্তত করে, আমার জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। সুতরাং এটা পদ্ধতিগতভাবে খুবই জটিল বিষয়।“

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “বেসরকারি খাতের লোকদের তেমন আইনের বই, নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয় না। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে দেখতে হয়, এটা আইন অনুযায়ী হচ্ছে কি-না। কিছু কিছু আইন খুবই প্রাচীন। কিছু আইন ১০০ বছর আগের। এ কারণে আমলারা এসব প্রাচীন আইনে বাঁধা এবং তারা ধীর। এটা বাস্তবায়নের অভাব ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক।”

কাজ দ্রুততর করার জন্য ‘অনেক পরিবর্তন’ দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রকল্প পরিচালকদের আগের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে, কম্পিউটারের ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ আগের তুলনায় দ্রুততর করা হচ্ছে। তারপরও বাস্তবায়ন কাজ যত দ্রুত হওয়া উচিত, তা হচ্ছে না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।”

৫ টাকার পণ্য ৫০ টাকায় কেন কেনে

সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই বাজারদরের চেয়ে অনেক বেশি দামে কেনার বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ছাড় করার জন্য সব প্রকল্প আমার মন্ত্রণালয়ে আসে। সচিবসহ তার অধীনে থাকা অনেক লোক তারা কাজে অভিজ্ঞ। কিন্তু আমরা উন্নয়নের দৌড়ে রয়েছি।

“প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আমার কার্যালয়ে আসে, তারা চায় খুব দ্রুত করতে, আজ বা কালই ছাড় করুন, এমন দ্রুত। প্রধানমন্ত্রী একনেকের সভাপতি, তার কাছে কাগজপত্র দেওয়ার আগে আমাকে ভালোমত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। এবং সরকার বেশি পরিমাণে উন্নয়ন চায়। সুতরাং এখানে কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে।”

এক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আগে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই হত না, কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই প্রকল্প চলত, আমরা অন্ধকারে থাকতাম। পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উপর জোর দিচ্ছি।”

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ কেনার বিষয়ে সমালোচনার বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পণ্যের নাম ও দাম আলাদা করে উল্লেখ না করায় বালিশের দাম বেশি দেখা গেছে। সেখানে বলা হয়েছিল বালিশ ও অন্যান্য।

“কিন্তু বালিশের সঙ্গে ম্যাট্রেস, খাট, বেডশিট, মশারি প্রভৃতিও ছিল। এ কারণে পত্রিকা যখন দেখল, ওহ বালিশের জন্য ১০০ টাকা! তখন সেভাবে লিখল। কিন্তু পুরো অঙ্ক শুধু বালিশের জন্য ছিল না।”
সময়টা আমাদের জন্য খুব কঠিন: পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রতিবেশী দেশের চেয়ে নির্মাণ ব্যয় বেশি কেন

এ বিষয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “কোনো ভবন বা রাস্তা নির্মাণের জন্য আপনার প্রথম প্রয়োজন জমি। এটা বড় বিষয়। জমির খরচ আমাদের অনেক বেশি।

“আমরা ছোট দেশ, কম জমি। কিন্তু ভারতে অবারিত জমি। চীনের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে জমি পাওয়া যায়, সেখানে সব জমি সরকারের, তারা কারও কাছে যায় না। আমাদেরকে জমি অধিগ্রহণ, মালিককে মূল্য পরিশোধ এবং কোনো সময় আদালতের প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন দিকে যেতে হয়। এতে ব্যয় বেড়ে যায়।”

যন্ত্রপাতির জন্য আমদানিনির্ভরতা এবং পুরান যন্ত্রপাতিতে সময় বেশি লাগার কারণেও নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আপনি যদি জাপান, জার্মানি, এমনকি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াতে যান, তারা সর্বশেষ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে বড় পরিমাণে। কিন্তু আমরা পুরাতন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। ফলে এটা ধীরগতিতে কাজ করে এবং আউটপুট থাকে কম।

“আরেকটা হল অলসতা। আমরা খুব পরিশ্রমী মানুষ নই। আমার অফিস শুরু হয় ৯টায়, আমি যাই ১১টায়। যদি বড় বস হই, যাই ১টায়। এর চেয়ে বড় হলে আমি অফিসেই যাই না, টেলিফোনে কাজ সারি। এর সবকিছুই প্রকল্পের ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে শুরু। আগে আমাদের কর্মকর্তারা ব্রিটিশ, পরে পাকিস্তানের জন্য কাজ করত, এখন আমরা আমাদের জন্য কাজ করছি।”

দুর্নীতিও একটি বিষয়

‘যত বেশি টাকা, তত বেশি দুর্নীতি’, এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “মেগা প্রকল্প, বেশি দুর্নীতি। কেননা আমার হাতে বেশি টাকা আসে এবং আমার বেশি টাকা উপার্জনের সুযোগ।”

দুর্নীতি ছেঁটে ফেলার সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের কঠোর আইন করতে হবে, আমাদের ইতোমধ্যে কিছু আইন রয়েছে এবং আরও আইন আসছে। এর সঙ্গে আরও ভালো তত্ত্বাবধায়ন দরকার। একদিনের মধ্যেই আমি পঞ্চগড় যেতে পারি। আমাদের খুবই ভ্রাম্যমাণ, চটপটে এবং মাঠে থাকতে হবে। সেই জায়গায় আমরা এখনো যেতে পারিনি।”

ন্যূনতম কর নতুন আইডিয়া

টিআইএন থাকলে রিটার্ন জমা এবং রিটার্নের সঙ্গে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “এটা বাংলাদেশে নতুন আইডিয়া। নতুন আইডিয়া হিসাবে এটাকে একটা সুযোগ আমি দিতে চাই। এটার সবার জন্য নয়। যাদের টিআইএন রয়েছে এবং ৪০টি সেবা নিতে চান, গাড়ি কেনা, জমি কিনতে চান, ফ্ল্যাট কিনতে চান…

“আপনি যদি ফ্ল্যাট কেনেন, তাহলে আমি গরিব লোক নন। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই টিআইএন নিতে হবে এবং আপনাকে কর দিতে হবে। আপনি যদি এক কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন, আপনার জন্য ২০০০ টাকা যৎসামান্য।”

তিনি বলেন, “এটা বেশি দামি, বিশেষ সেবার ক্ষেত্রে, যেটা কেবল ধনী লোকদের জন্য, তাদের জন্য ২০০০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয়, সিস্টেমের মধ্যে আসতে। আমি মনে করি, আমাদের এই প্রচেষ্টা চালানো উচিত। দেখি, কীভাবে এটা চলে।“

আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য ট্যাক্স রিটার্ন প্রিপেয়ারার (টিআরপি) নতুন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “কয়েকটা জেলায় জায়গায় এটা চালু করা উচিত। দেখা যে, এটা কীভাবে চলে। যদি সাবলীলভাবে চলে তাহলে এটা সরকারের একটা ভালো পদক্ষেপ হবে “

খেলাপি ঋণ নিয়ে জবাবদিহিতা জরুরি

পাহাড়সম খেলাপি ঋণ নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জোর দেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর। তিনি বলেন, “কোনো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বন্ধকির মূল্য নির্ধারণ হতে হবে কঠোর, বিস্তারিত এবং ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি করতে হবে অবশ্যই।

“যদি কোনো ব্যাংক ঋণ ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই ব্যবস্থাপক ও মূল্য নির্ধারককে তাৎক্ষণিকভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!